BEN vs MUM Day 1: ইডেনে জঘন্য বোলিং ঈশানদের, রাহানে-হীন মুম্বইয়ের আগ্রাসী ক্রিকেটে প্রথম দিনই চাপে বাংলা
Eden Gardens: শুক্রবার সন্ধ্যায় ইডেন ছেড়ে বেরনোর সময় মনোজের মুখ কালো। কোথায় সকালের সেই উদ্ভাসিত চেহারা! জানালেন, রক্তচাপ বেড়েছে। মাঠ থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হাসপাতালে দৌড়লেন বঙ্গ অধিনায়ক।
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: টসের পর ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় মনোজ তিওয়ারির (Manoj Tiwary) মুখ যেন খুশিতে ডগমগ দেখাচ্ছিল। একে টস জিতে সকালের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় মুম্বইকে (BEN vs MUM) আগে ব্যাটিং করতে পাঠানোর সুবিধা। তার ওপর বিপক্ষের টিমলিস্টে নেই সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার অজিঙ্ক রাহানে (Ajinkya Rahane)। যিনি মুম্বইয়ের অধিনায়কও। পরে জানা গেল, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে খেলছেন না রাহানে। পরিবর্তে ইডেনে মুম্বইকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিবম দুবে।
তবু শুক্রবার সন্ধ্যায় ইডেন ছেড়ে বেরনোর সময় মনোজের মুখ কালো। কোথায় সকালের সেই উদ্ভাসিত চেহারা! জানালেন, রক্তচাপ বেড়েছে। মাঠ থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হাসপাতালে দৌড়লেন বঙ্গ অধিনায়ক।
অধিনায়কের অস্বস্তি অস্বাভাবিক নয়। ইডেনে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে মুম্বইকে বাগে পেয়েও বাংলার বোলাররা যেভাবে হতশ্রী বল করে ম্যাচের রাশ হাতছাড়া করলেন, তা বঙ্গ ক্রিকেটের ভাল বিজ্ঞাপন হতেই পারে না। রাতভর বৃষ্টি। ভিজে মাঠের জন্য বাংলা বনাম মুম্বই ম্যাচ শুরু হল নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে, সকাল দশটায়। সারাদিনে খেলা হল ৭৫ ওভার। আর তার মধ্যেই ৩৩০/৬ তুলে দিল মুম্বই। ওয়ান ডে ক্রিকেটের ঢঙে ব্যাট করল মুম্বই। ওভার প্রতি প্রায় সাড়ে চার রান করে তুলল। যা বাংলা শিবিরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
একমাত্র সূরয সিন্ধু জয়সওয়ালকে দেখেই মনে হয়েছে যে, উইকেট নিতে পারেন। অভিষেক মরশুমেই যিনি নজর কেড়ে নিচ্ছেন। শুক্রবার ইডেনে যে বলে পৃথ্বী শ-কে ফেরালেন, মুম্বইয়ের হয়ে রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদবরা খেললেও সমস্যায় পড়তেন। দিনের সেরা ডেলিভারি। গুড লেংথ স্পটে পড়ে বল বাড়তি বাউন্স করে ভিতরের দিকে ঢুকে এল। ব্যাট সরাতে পারলেন না পৃথ্বী। বল তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ল উইকেটকিপারের গ্লাভসে। পৃথ্বী এই ম্যাচ খেলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটালেন। সাবলীল ব্যাটিং করলেও বড় রান পেলেন না। ৩৫ করে ফিরলেন।
ভারতের মাটিতে আগ্রাসী বাজ়বল খেলে রোহিত-রাহুল দ্রাবিড়দের চাপে ফেলে দিয়েছে ইংল্যান্ড। ইডেনে মুম্বইয়ের আগ্রাসী ক্রিকেটেও যেন সেই মন্ত্র। আলগা বল পেলেই শট খেলো। উইকেট কটা পড়েছে, সেসব না ভেবে সহজাত ক্রিকেট খেলো। মুম্বইয়ের কোচ হয়ে এসে যে মন্ত্রে গোটা দলকে বেঁধেছেন কোচ ওমকার সালভি।
যার নিটফল, শিবম দুবের ৭৩ বলে ৭২ রানের ইনিংস। ৯ চার এক ছক্কায় সাজানো তণুশ কোটিয়ানের অপরাজিত ৫৫ রান। অথর্ব অঙ্কোলেকরের অপরাজিত ৪১। এবং সূর্যাংশ শেডগের ৭৬ বলে ৭১ রান। যে ইনিংসে রয়েছে ১২টি বাউন্ডারি। দেখে কে বলবে যে একুশের তরুণ অভিষেক ম্যাচে খেলতে নেমেছেন!
একইরকমভাবে ঈশান পোড়েলকে দেখলে কেউ বলবেনই না যে, কেরিয়ারের ৪৫তম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছেন। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে খেলা আর তারপর ক্রিকেটের মূল স্রোত থেকে হারিয়ে যাওয়া বাংলার ময়দানে যেন দস্তুর হয়ে গিয়েছে। ঈশানও সেই ক্লাবে নাম লেখালে অবাক হওয়ার থাকবে না। ১৭ ওভারে দিলেন ৭৪ রান। একটিমাত্র উইকেট পেয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ঈশানের শরীরী ভাষা থেকে নেতিবাচক বার্তা ঠিকরে বেরচ্ছে। যেন হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। ব্যাটে পারছেন না। ফিল্ডিংও তথৈবচ। এদিন একটা ক্যাচও ফেললেন। বাংলা শিবির থেকে বলা হচ্ছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ঈশান। চোট-আঘাত ও পারিবারিক সমস্যা কাটিয়ে মাঠে সেরাটা দিচ্ছেন। চন্দননগরের পেসারের হেয়ারস্টাইলের পরিবর্তন মাঝেমধ্যেই নজর কেড়ে নেয় (মুম্বই ম্যাচের আগে চুলে নীল রং করিয়েছেন)। কিন্তু ক্রিকেটের কোনও উন্নতি দূরবীন দিয়ে খুঁজলেও চোখে পড়ে না। যে কারণে তাঁর সঙ্গেই অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলা শুভমন গিল জাতীয় দলে নিয়মিত হয়ে উঠেছেন। আর ঈশানের রঞ্জি দলে থাকা নিয়েও তৈরি হচ্ছে প্রশ্ন।
স্পিনাররাও একইরকম। কর্ণ লাল ৪ ওভারে দিলেন ৩৫। ১১ ওভারে ৫১ দিলেন অঙ্কিত মিশ্র। একমাত্র নজর কাড়লেন সূরয। বাংলা সারাদিনে বল করেছে ৭৫ ওভার। তার মধ্যে ২৬ ওভার করেছেন সূরয। ৯৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি পেসার। বাকিরা যেন দলের বোঝা। বাংলা দলের সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউই প্রশ্ন তুললেন, রান বেরচ্ছে দেখেও বোলাররা স্লোয়ার বা ইয়র্কার করার চেষ্টাও করলেন না!
কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল স্বীকার করে নিলেন, পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারেনি বোলাররা। বললেন, 'কোচ হিসাবে দলের পাশে রয়েছি। তবে হ্যাঁ, বোলাররা আরও ভাল করতে পারত। পরিকল্পনা প্রয়োগ করতে পারেনি। মুম্বইয়ের মতো দলের বিরুদ্ধেই তো পারফর্ম করতে হবে। ছেলেদের এটা বুঝতে হবে।'
মনোজেরও গলাতেও একই সুর। বললেন, 'সূরয ছাড়া বাকি বোলারদের খারাপ দিন কেটেছে। এখান থেকে ম্যাচে ফেরার একটাই রাস্তা। শনিবার ওদের দ্রুত অল আউট করতে হবে। তারপর বড় ইনিংস খেলতে হবে।'
বাংলা শিবিরে কিন্তু প্রথম দিনই সরাসরি জয়ের স্বপ্ন ফিকে হতে শুরু করেছে। ম্যাচ বাঁচানোই না এখন দায় হয়ে দাঁড়ায়!
আরও পড়ুন: হাসপাতালে রাতেই দেওয়া হল রক্ত, কেমন আছেন সৌরভের মা?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে