চির-প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ১২৪ রানে হারিয়ে চ্যম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান শুরু ভারতের
বার্মিংহাম: চির-প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অভিযান শুরু করল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত। এদিন এজব্যাস্টনে পাকিস্তানকে ১২৪ রানে হারিয়ে দেয় কোহলি-বাহিনী। প্রথম ব্যাট করে এদিন ৩১৯ রান তোলে মেন ইন ব্লু। বৃষ্টির ফলে পাকিস্তানের লক্ষ্য কমে দাঁড়ায় ৪১ ওভারে ২৮৯। কিন্তু, ১৬৪ রানেই শেষ হয়ে যায় শরফরাজ আহমেদদের লড়াই।
ভারতের বিশাল স্কোরকে তাড়া করার জন্য পাকিস্তানের এক বা দুই ব্যাটসম্যানের বড় স্কোর করার প্রয়োজন ছিল। সেটা এদিন দেখা যায়নি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন ওপেনার আজহার আলি (৫০)। মহম্মদ হাফিজ করেন ৩৩। বাকি কোনও ব্যাটসম্যান দাগ কাটতে পারেননি। এই দুজন ছাড়া আর কোনও ব্যাটসম্যান ২০ রানের গণ্ডি পার করতে পারেননি। এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট পাক ব্যাটিংয়ের পর্যালোচনার জন্য।
এদিন, মূলত ভারতের অভিজ্ঞতার কাছে কিস্তিমাত খায় পাক-বাহিনী। খেলার তিন বিভাগ-- ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং--- সবেতেই পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করে ভারত। একমাত্র টসে জেতা ছাড়া এদিন পাকিস্তানের কোনও কিছুই ঠিক হয়নি। ভারতের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ ছিল পার্টনারশিপ। যেখানে ভারত প্রত্যেক উইকেটে ৫০ রানের ওপর করেছে, সেখানে পাকিস্তানের অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপ তা করতে সক্ষম হয়নি। প্রথম থেকে বড় রান তাড়া করতে গিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। তাদের কাজ আরও কঠিন করে তোলে ভারেতর শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং ও দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং। ফলে, নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। শেষমেশ, ৩৩.৪ ওভারে ১৬৪ রানেই অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। আহত থাকায় ওয়াহাব রিয়াজ ব্যাট করতে নামেননি। এদিন ভারতের তুলনায় কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি পাক-বাহিনী। অন্যদিকে, ভারতের হয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন উমেশ যাদব। ৩০ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট দখল করেন তিনি। এছাড়া, হার্দিক পাণ্ড্য ও রবীন্দ্র জাডেজা নেন ২টি করে উইকেট। ভূবনেশ্বর কুমার নেন একটি। [embed]https://twitter.com/ICC/status/871429636990914560[/embed]এর আগে দুই ওপেনার শিখর ধবন ও রোহিত শর্মার তৈরি করে দেওয়া ভিতের ওপর অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও যুবরাজ সিংহের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং প্রদর্শনের দৌলতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩২০ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা খাড়া করে ভারত। এজবাস্টনে টসে জিতে ভারতকে প্রথম ব্যাট করতে পাঠান পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। আবহাওয়া মেঘলা থাকায় তিনি ভেবেছিলেন, দলের পেসাররা পিচ থেকে বাড়তি পেস ও সুইং আদায় করতে সমর্থ হবে। কিন্তু, পাকিস্তানের যাবতীয় পরিকল্পনাকে খর্ব করতে পাল্টা পরিকল্পনা তৈরি ছিল টিম ইন্ডিয়ার। ইংল্যান্ডে মেঘলা আবহাওয়ায় নতুন বল বেশি সুইং করে, তা মাথায় রেখে এদিন সাবধানী ভাবে শুরু করেছিলেন ২ ভারতীয় ওপেনার। দলের লক্ষ্য ছিল, রান বেশি না উঠলেও, উইকেট টিকিয়ে রাখা। এই পরিকল্পনায় সফল রোহিত ও ধবন। প্রথম ১০ ওভারে ওঠে মাত্র ৪৬ রান। এখনকার পাওয়ারগেমের নিরিখে যা কমই বলা যেতে পারে।
[embed]https://twitter.com/ICC/status/871381028224598017[/embed]কিন্তু, এরপর থেকেই ধীরে ধীরে হাত খুলতে শুরু করেন দুজনই। প্রথম উইকেটে ১৩৬ রান ওঠে। সেখানেই বড় স্কোরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত তৈরি করে দেন রোহিত-ধবন যুগলবন্দি। ৬৮ রানে ধবন আউট হওয়ার পর কোহলির সঙ্গে আরেকটি দ্বিতীয় উইকেটে জমাটি অর্ধশতরানের পার্টনারশিপ তৈরি করেন রোহিত। এদিন পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী দুরন্ত খেলছিলেন রোহিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হয়ে যাওয়ায় নিশ্চিত শতরান হাতছাড়া করেন তিনি। ৯১ রানে ফেরেন রোহিত। ১১৯ বল খেলেন তিনি। মেরেছেন ৭টি চার ও ২টি ছক্কা। রোহিত আউট হওয়ার পর নামেন যুবরাজ সিংহ। এতদিন তাঁর ফর্ম ও পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক জল্পনা ছিল। এমনকী, এই ম্যাচে তাঁকে রাখা হবে কি না সেই নিয়েও ছিল ধন্দ। কিন্তু, ব্যাট হাতে এদিন সব সমালোচনার জবাব দেন যুবি।
[embed]https://twitter.com/ICC/status/871374164774596608[/embed]কোহলির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তিনি আরেকটি বড় পার্টনারশিপ যোগ করেন। এর মধ্যেই নিজের অর্ধশতরানও সম্পূর্ণ করে নেন এই স্টাইলিশ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৩২ বলে ৫৩ রান-- এই ছোট্ট পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, এদিন কী ফর্মে ছিলেন যুবরাজ। ৮টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি।
শেষ লগ্নে এদিন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আগে পাঠানো হয় হার্দিক পাণ্ড্যকে। সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা প্রমাণ করলেন পাণ্ড্য। তাঁর ফর্ম ধরা পড়েছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচের দিনই। এদিন সেই মেজাজেই ছিলেন পাণ্ড্য। শেষ ওভারে পরপর তিনটে ছয় মেরে ভারতের রান ৩০০ পার করতে সাহায্য করেন পাণ্ড্য। অন্যদিকে, অধিনায়ক নিজে অপরাজিত থাকেন ৮১ রানে। ৬৮ বলের ওই ইনিংস সাজানো ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায়।
এদিন ২ বার বৃষ্টির ফলে বিঘ্নিত হয় ভারতের ইনিংস। ফলে ম্যাচ কমে দাঁড়ায় ৪৮ ওভারের। তাতেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কোনও ছন্দপতন ঘটেনি। ভারত তোলে ৩১৯ রান।
The Master is cheering for #TeamIndia #CT17 #INDvPAK - @sachin_rt pic.twitter.com/DJgUhAQLZz
— BCCI (@BCCI) June 4, 2017
ম্যাচের আগে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ বলেছিলেন, ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে থামানোর পরিকল্পনা তৈরি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, বিরাটের সামনে অসহায় পাক বোলাররা। ভারতের অধিনায়ককে দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠানোর উপায় তাঁদের জানা নেই। যার প্রমাণ, শেষ চার ওভারে ৭২ রান তোলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।
লক্ষ্য হওয়ার কথা ছিল ৩২০। কিন্তু, ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে পাকিস্তানের টার্গেট দাঁড়ায় ৩২৪। পরে, ফের একবার বৃষ্টি নামলে সেই লক্ষ্যমাত্রা পুনরায় পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায় ৪১ ওভারে ২৮৯।
ম্যাচের সেনা নির্বাচিত হন যুবরাজ সিংহ।
ভারতীয় দল- রোহিত শর্মা, শিখর ধবন, বিরাট কোহলি, যুবরাজ সিংহ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, কেদার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব ও যশপ্রীত বুমরাহ।
পাকিস্তান দল- আজহার আলি, আহমেদ শেহজাদ, বাবর আজম, মহম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, সরফরাজ আহমেদ, ইমাদ ওয়াসিম, মহম্মদ আমির, শাদাব খান, ওয়াহাব রিয়াজ ও হাসান আলি।