CAB Cricket: না জানিয়েই ছাঁটাই তিন কোচ! হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বার করে দিয়ে অপসারণের বার্তা সিএবির
Bengal Cricket Team: সিএবি থেকে যদিও বলা হচ্ছে, তিন কোচেরই চুক্তি ফুরিয়েছিল বেঙ্গল প্রো টি-২০ টুর্নামেন্টের আগেই। সেই চুক্তি আর নবীকরণ না করা হলে তাতে নিয়মে বাধা নেই।

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: গ্রেগ চ্যাপেলের মতো কাউকে ঘুরিয়ে ছাঁটাই করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে ইস্তফা দিয়েছেন কোচের পদ থেকে। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো কেউ পূর্বপরিকল্পিতভাবে সরে গিয়েছেন নিজে থেকেই। আবার ডানকান ফ্লেচারের মতো কারও কারও সঙ্গে চুক্তি নবীকরণ করেনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। 'থ্যাঙ্ক ইউ অ্যান্ড বেস্ট উইশেস' বলে নতুন কোচের খোঁজ শুরু হয়েছে।
তবে ছাঁটাইয়ের আগে কোচকে নিয়ামক সংস্থার তরফ থেকে জানানোই হচ্ছে না, চাকরি যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে আচমকা অপসারিত হওয়ার পর, ভারতীয় ক্রিকেটে এরকম নজির রয়েছে কি না, কেউই মনে করতে পারছেন না। এমনই ঘটনা ঘটল বাংলার ক্রিকেটে (Bengal Cricket)। এক নয়, একসঙ্গে তিন কোচকে সরিয়ে দেওয়ার পথে হাঁটছে বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সিএবি। তাঁদের পরিবর্ত কে হবেন, সেই নামও কার্যত চূড়ান্ত। যে খবর বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে ময়দানে।
কিন্তু যেভাবে তিন কোচকে সরানো হয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সিএবি-র (CAB) অন্দরে। অপসারিত তিন কোচই বেশ অপমানিত বোধ করেছেন। মুখে কিছু বলছেন না। তবে ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ, হতাশা প্রকাশ করছেন না, এমন খবর নেই।
অপসারিত তিন কোচ - প্রণব রায়, শিবসাগর সিংহ ও চরণজিৎ সিংহ। তিনজনই বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার। প্রথমজনের আর এক পরিচয়, তিনি বঙ্গ ক্রিকেটের কিংবদন্তি পঙ্কজ রায়ের পুত্র। প্রণব বাংলার প্রাক্তন অধিনায়কও। গত মরশুমে ছিলেন বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ দলের হেড কোচ। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁর সঙ্গে সিএবি-র চুক্তি রয়েছে ৩১ জুলাই অবধি। প্রাক্তন বাঁহাতি স্পিনার শিবসাগর ছিলেন বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ মহিলা দলের দায়িত্বে। আর অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা দলের কোচ ছিলেন চরণজিৎ।
তিনজনের সঙ্গেই চুক্তি নবীকরণের পথে হাঁটছে না সিএবি। প্রণব রায়কে যে বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ পুরুষ দলের দায়িত্বে রাখা হবে না, সেই ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। সেই জায়গায় দেখা যেতে পারে ঋদ্ধিমান সাহাকে। গত মরশুমে অবসর নেওয়ার পর ঋদ্ধিমান পুরোদস্তুর কোচিংয়ে আসতে চলেছেন। বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে তিনি সার্ভোটেক শিলিগুড়ি স্ট্রাইকার্সের মেন্টর ছিলেন। প্রণবের পাশাপাশি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিবসাগর ও চরণজিৎকেও। তাঁদের পরিবর্তে মহিলাদের অনূর্ধ্ব ১৯ ও ২৩ দলের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে রুমেলি ধরকে।
প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যেভাবে তিন কোচকে বিদায় করা হচ্ছে। তিনজনের সঙ্গে সিএবি-র তরফ থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। ব্যক্তিগত স্তরেও কেউ কথাবার্তা বলেননি। বলা হয়নি যে, ধন্যবাদ। আপনাদের আর রাখা হচ্ছে না। তিন কোচই অপসারণের খবর জানতে পেরেছেন কোচ ও পদাধিকারীদের নিয়ে তৈরি সিএবি-র হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সোমবার তাঁদের আচমকা সরিয়ে দেওয়ার পর। শোনা গেল, সিএবি-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার চিন্ময় নায়েক তাঁদের গ্রুপ থেকে 'রিমুভ' করে দিয়েছেন। তিনজনের কাছে অপসারণের কোনও খবর ছিল না। অন্যদের ফোন পেয়ে তাঁরা গ্রুপ খুলে দেখেন। এবং আবিষ্কার করেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ পুরুষ দলের পারফরম্যান্স দারুণ কিছু ছিল না। তবে মেয়েদের অনূর্ধ্ব ২৩ কিংবা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের পারফরম্যান্স উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। অনূর্ধ্ব ১৯ দল ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠে হেরে গিয়েছিল। টি-২০ ফর্ম্যাটে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলা। সেই দলের ৮ ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির শিবিরে ডাক পান। সেখান থেকে ভারতের যে ২৫ সদস্যের অনূর্ধ্ব ১৯ দল বেছে নেওয়া হয়েছে জাতীয় শিবিরের জন্য, সেই দলে রয়েছেন বাংলার দুই ক্রিকেটার - ঈপ্সিতা মণ্ডল ও বিদিশা দে। বেঙ্গল প্রো টি-২০ টুর্নামেন্টে গতবার চ্যাম্পিয়ন লাক্স শ্যাম কলকাতা টাইগার্সের মহিলা দলের কোচ ছিলেন চরণজিৎ। শিবসাগর ছিলেন হারবার ডায়মণ্ডস মহিলা দলের কোচ। যে দল এবার সেমিফাইনালে খেলেছে।
বাংলার মহিলাদের অনূর্ধ্ব ২৩ দলের দায়িত্বে শিবসাগর ছিলেন ২ বছর। তার মধ্যে একবার বোর্ডের ওয়ান ডে টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলা। টি-২০ টুর্নামেন্টে একবার কোয়ার্টার ও একবার প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলা। সিএবি-র একাংশ বলছে, পারফরম্যান্স চোখধাঁধানো না হলেও হেলাফেলা করার মতোও নয়। তিন কোচকে যে সরিয়ে দেওয়া হতে চলেছে, সোমবার এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
সিএবি থেকে যদিও বলা হচ্ছে, তিন কোচেরই চুক্তি ফুরিয়েছিল বেঙ্গল প্রো টি-২০ টুর্নামেন্টের আগেই। সেই চুক্তি আর নবীকরণ না করা হলে তাতে নিয়মে বাধা নেই। তবে বাংলার ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কর্তা থেকে শুরু করে প্রাক্তন ক্রিকেটার - একটা বিষয়ে সকলেই কার্যত একমত। কোচত্রয়ীর বিদায় আরও একটু সম্মানের হতে পারত।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরিয়ে না দিয়ে মুখে অন্তত একবার বলা যেত, 'থ্যাঙ্ক ইউ।'



















