এক্সপ্লোর
Advertisement
সহ-অভিনেতাদের অস্বস্তি কাটাতে ‘চক দে ইন্ডিয়া’র সেটে ইচ্ছে করে সংলাপ ভুলে যেত শাহরুখ, জন্মদিনে স্মৃতিচারণায় মীর রঞ্জন নেগি
সোমবার ৬২ বছর পূর্ণ করলেন মীর রঞ্জন নেগি। যাঁর জীবন নিয়ে তৈরি সিনেমা ‘চক দে ইন্ডিয়া’ আলোড়ন ফেলেছিল। জন্মদিনের সন্ধ্যায় ইনদওর থেকে মোবাইল ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন এবিপি আনন্দ-কে।
কলকাতা: সোমবার ৬২ বছর পূর্ণ করলেন মীর রঞ্জন নেগি। যাঁর জীবন নিয়ে তৈরি সিনেমা ‘চক দে ইন্ডিয়া’ আলোড়ন ফেলেছিল। কর্মজীবন থেকে অবসরের পর এখন ইনদওরে থাকেন ভারতীয় হকি দলের প্রাক্তন গোলকিপার। পরে যিনি কোচ হিসাবেও সাফল্য পেয়েছেন। জন্মদিনের সন্ধ্যায় ইনদওর থেকে মোবাইল ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন এবিপি আনন্দ-কে। করোনা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে শাহরুখ খানের সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতি, ছেলের মৃত্যু, হকির দুরবস্থা, সব বিষয়েই অকপট প্রাক্তন তারকা।
প্রশ্ন: জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। দিনটা কীভাবে কাটালেন?
মীর রঞ্জন নেগি: করোনা পরিস্থিতিতে সেরকম কোনও সেলিব্রেশন হয়নি। বেশ মনে পড়ছে আমার পঞ্চাশতম জন্মদিনে মুম্বইয়ে বলিউডের প্রচুর তারকা এসেছিলেন। তবে অবসরের পর এখন আমি পরিবারের সঙ্গে ইনদওরে থাকি। আমাদের বাড়িতে ৩৫ জন সদস্য। তবু করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে জন্মদিনে বাড়ির সকলেও কোনও জমায়েত করছি না। কাউকে আমন্ত্রণও জানাইনি।
প্রশ্ন: ৬২তম জন্মদিন আপনার। এখনও পর্যন্ত জীবনের সেরা স্মৃতি কী?
নেগি: আমি দেশের হয়ে খেলেছি। খেলা ছাড়ার পর টেলিভিশন শো করেছি। তবে সেরা স্মৃতি হচ্ছে যেদিন চক দে ইন্ডিয়া সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল। ২০০৭ সালের ১০ অগাস্ট। ওই সিনেমাটি আমার জীবন পাল্টে দিয়েছিল। সারাদিন সাক্ষাৎকার দিতেই কেটে যেত। সকলের কাছে এত ভালবাসা আর সম্মান পেয়েছি, অভাবনীয়। অনেক হকি খেলোয়াড়ের হয়তো এই সৌভাগ্য হয় না।
প্রশ্ন: ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে হকি ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ৭-১ গোলে হার আপনার ব্যক্তিগত জীবনেও বিপর্যয় ঘটিয়েছিল। গোলকিপার হিসাবে আপনি একশো শতাংশ দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে সরাসরি সংশয় প্রকাশ করা হয়েছিল...
নেগি: সংবাদমাধ্যমের একটা অংশ আমাকে দায়ী করেছিল। তবে সত্যিটা সকলেই পরে বুঝতে পারেন। জানতাম আমার জন্য দল হারেনি। সকলের জন্য হেরেছে। আমি একা নয়, কেউই সেদিন খেলতে পারেনি। আমি নিজেকে কখনও দোষারোপ করিনি। কখনও কারও বিরুদ্ধে একটা কথাও বলিনি। অনেক ভুল হয়েছিল সেই ম্যাচে। সেই ম্যাচে এমন একজনকে খেলানো হয়েছিল যার গুরুতর চোট ছিল। ঠিকমতো হাঁটতেও পারছিল না। তবে আমি মুখ ফুটে কিছু বলিনি। আমার পরিবার ও বন্ধুদের অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। এছাড়াও আমাকে অনেক ঝড় সামলাতে হয়েছে। ২০০৫ সালে আমার ১৯ বছর বয়সী ছেলে বাইক দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমি কাস্টমসে চাকরি করতাম। অবসরের মাত্র কয়েক বছর আগে মিথ্যে অভিযোগ তুলে আমাকে কলকাতায় বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। তবু মনোবল হারাইনি। কখনও খেলা ছাড়ার কথাও ভাবিনি। স্পোর্টস অনেক কিছু শেখায়। লড়াই করার রসদ জোগায়। এখন আর হকি খেলতে পারি না। তবে রোজ টেনিস খেলি। গল্ফ খেলি। প্রচুর হাঁটি।
প্রশ্ন: কখনও ভেবেছিলেন আপনার জীবনের ওপর সিনেমা নির্মিত হবে?
নেগি: কখনও ভাবিনি। যশরাজ ফিল্মস যখন সিনেমাটির প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল, ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমি ওদের ধনরাজ পিল্লাই-সহ একাধিক প্লেয়ারের কাছে পাঠিয়েছিলাম। বলেছিলাম ওদের জীবন নিয়ে ছবি বানাতে। তবে চিত্রনাট্য পড়ার পর আমি বুঝতে পারি কেন ওরা আমার ওপর সিনেমাটি করতে চাইছে। শাহরুখ খানও নিজেকে সিনেমাটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফেলেছিল। ও সেটে ঢোকার সময় আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত। বেরনোর সময়ও করত। আমি বলতাম, তুমি এত বিখ্যাত লোক, বলিউডের বাদশা, আমার পায়ে হাত দিচ্ছ! ও বলত, আমি এই মেয়েদের কোচ। তবে আপনি আমার কোচ। ওর ছেলে আরিয়ানের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল।
প্রশ্ন: শাহরুখের সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছেন। সেরা অভিজ্ঞতা কী?
নেগি: ওর স্মৃতিশক্তি মারাত্মক। চিত্রনাট্য একবার পড়লে তিন-চার পাতা মুখস্থ করে ফেলত। তবে শ্যুটিংয়ের সময় বারবার ইচ্ছে করে চিত্রনাট্য ভুলে যাওয়ার ভান করত। পরে শাহরুখ বলেছিল, ও সংলাপ ভুলে যাওয়ার ভান করত যাতে মেয়েরা অভিনয়ের সময় অস্বস্তি বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে না ভোগে! ওকে চিত্রনাট্য ভুলে যেতে দেখলে কেউ আর সেটে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকবে না। এই হল শাহরুখ। আর একটা ঘটনা মনে পড়ছে। শাহরুখ ভাল ফুটবলও খেলত। ও শ্যুটিংয়ে একবার পা দিয়ে ফুটবলের মতো হকিস্টিক তুলেছিল। আমি বলেছিলাম, শাহরুখ, হকি প্লেয়াররা কেউ হকিস্টিকে পা দেয় না। ও বুঝতে পেরেছিল আর দৃশ্যটা সিনেমা থেকে বাদ দিয়েছিল। চিত্রনাট্যের একটা জায়গায় ছিল, কোচ শাহরুখ মেয়ে খেলোয়াড়দের বলছে, দশ সেকেন্ডের বেশি কেউ বল নিজের কাছে রাখবে না। শাহরুখ আমাকে ডেকে বলল, স্যার ১০ সেকেন্ডে তো লোকে একশো মিটার দৌড়ে ফেলে। সময়টা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? আমি চিত্রনাট্যটা ৭০-৮০ বার পড়েছিলাম। ব্যাপারটা মাথায় আসেনি। শাহরুখ ঠিকই বলেছিল। পরে সংলাপে সময়টা কমিয়ে পাঁচ সেকেন্ড করা হয়। এই হল শাহরুখ। সব খুঁটিনাটি ব্যাপারেও এত নজর।
প্রশ্ন: এক সময় বিশ্ব হকি শাসন করত ভারত। এখন আর কোনও বলার মতো সাফল্য নেই। শেষ অলিম্পিক্স পদক ১৯৮০ সালে। শেষ বিশ্বকাপ পদক তারও আগে, ১৯৭৫ সালে। কতটা পীড়াদায়ক এই ছবিটা?
নেগি: জাতীয় হকি সংস্থা তৃণমূল স্তরে খেলাটা নিয়ে কিছুই করছে না। হকি ইন্ডিয়া শুধু দেখনদারিতে বিশ্বাসী। রিক চার্লসওয়ার্থের মতো নামী বিদেশি কোচ এনে হকি ইন্ডিয়া লিগ নামে একটা টুর্নামেন্ট শুরু করল। ২০১৭ সালের পর সেই টুর্নামেন্ট আর হল না। বন্ধ হয়ে গেল। ভারতীয় কোচদের এত উপেক্ষা কেন! বিদেশি কোচেরা তো ভাষা সমস্যা কাটিয়ে খেলোয়াড়দের মানসিকতাই বুঝে উঠতে পারে না। ল্যাপটপে হকি হয় না। দেশীয় কোচেরাই তো সাফল্য এনেছে। প্রশাসনে হকির কোনও প্রাক্তন প্লেয়ার নেই। ক্রিকেটে দেখুন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। হকি প্রশাসনে এরকম প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া হয় না। কেন ধনরাজ পিল্লাইকে হকি ইন্ডিয়ার প্রধান করা হবে না! কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। মধ্যপ্রদেশের কথাই ধরুন। ভোপালে চারটে অ্যাস্ট্রোটার্ফ রয়েছে। ইনদওরে একটাও নেই। আমি প্রকাশ ক্লাবের মাঠে প্র্যাক্টিস করাতাম বাচ্চাদের। সেই মাঠকে এখন আবর্জনা ফেলার জায়গা করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে আমি রাস্তায় ছেলেদের প্র্যাক্টিস করাচ্ছি। ইনদওর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে হকির জন্য একটা অ্যাস্ট্রোটার্ফের ব্যবস্থা করা যেত না! ৪০ কিলোমিটার দূরে ভোপালে গিয়ে কেউ খেলতে পারে? কলকাতাতেও কোনও অ্যাস্ট্রোটার্ফ ছিল না। অথচ বেটন কাপের মতো ঐতিহ্যশালী টুর্নামেন্ট হতো। লজ্জাজনক ব্যাপার। হকি সংস্থা এত উদাসীন থাকলে কী করে দেশের খেলাটা ঘুরে দাঁড়াবে!
খেলার (Sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
আইপিএল
খবর
Advertisement