ISL 2024-25: দুই জয়ে উপরে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল, শীর্ষে মোহনবাগান, আইএলএলে কোথায় দাঁড়িয়ে কলকাতার তিন প্রধান?
Indian Football: আপাতত মোহনবাগানের দখলে রয়েছে ২৩ পয়েন্ট, ইস্টবেঙ্গলের দখলে সাত ও মহামেডান স্পোর্টিংয়ের দখলে পাঁচ পয়েন্ট রয়েছে।
কলকাতা: যত এগোচ্ছে সময়, ২০২৪-২৫ মরশুমের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2024-25), ততই জমে উঠছে। একবার লিগ তালিকার দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন, সেরা ছয়ে ও তার কাছাকাছি থাকা দলগুলির মধ্যে লড়াই কতটা জোরদার হয়ে উঠেছে। শীর্ষের দুই দল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant) ও বেঙ্গালুরু এফসি- দুই দলেরই সমান পয়েন্ট। তবে বেঙ্গালুরু যেহেতু মোহনবাগানের চেয়ে একটি ম্যাচ বেশি খেলে ফেলেছে এবং কলকাতার দলের গোলপার্থক্য যেহেতু ভাল, তাই ১১ সপ্তাহের শেষে তারাই রয়েছে শীর্ষে।
তিন ও চার নম্বরে থাকা পাঞ্জাব এফসি এবং এফসি গোয়া কিন্তু সেরা দুই দলের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। প্রথম দুই দল ও তাদের মধ্যে পাঁচ পয়েন্টের তফাৎ, যে দূরত্ব কমতে পারে প্রথম দু’টি স্থানে থাকা দলগুলি যদি হঠাৎ টানা দু-তিনটি রাউন্ডে ব্যর্থ হয়। অবশ্য তিন ও চার নম্বর দলকে তাদের বিজয়রথ থামালে চলবে না। তারা মাঝপথে হোঁচট খেলে আরও পিছিয়ে যেতে পারে। যদিও আইএসএলে এ নতুন কিছু নয়। প্রতি মরশুমেই এমন হয়ে থাকে।
তবে সবচেয়ে কঠিন লড়াই চলছে পাঁচ ও ছয় নম্বর জায়গা দখলের জন্য। এই দৌড়ে এগিয়ে আছে। চারটি দল, ওড়িশা এফসি, নর্থইস্ট ইউনাইটেড, জামশেদপুর এফসি ও মুম্বই সিটি এফসি, যাদের সংগ্রহ ১৬ থেকে ১৪-র মধ্যে। ১১-১২ পয়েন্ট পেয়ে যারা নয় ও দশ নম্বরে রয়েছে, সেই চেন্নাইয়িন এফসি ও কেরলা ব্লাস্টার্সকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রতি দলের সামনেই এখনও অনেক পথ বাকি। এই পথে কত চড়াই-উতরাই আসবে তার ঠিক নেই। সে সব পেরিয়ে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে কে কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এত আগে থেকে আগাম বলা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও বটে। এ বার পিছন ফিরে দেখে নেওয়া যাক, গত সপ্তাহে, অর্থাৎ ম্যাচ সপ্তাহ ১১-য় কলকাতার দলগুলি কে কেমন করল।
শীর্ষে বহাল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড
গত রবিবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ২-০-য় লিগের সাত নম্বর জয়টি তুলে নেয় মোহনবাগান এসজি। আগের দিনই কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে এক নম্বরে উঠে পড়েছিল বেঙ্গালুরু। কিন্তু একদিনের বেশি স্থায়ী হয়নি তাদের সেই আনন্দ। পরের দিনই দুই সবুজ-মেরুন উইঙ্গার মনবীর সিং ও লিস্টন কোলাসোর গোলে টানা তৃতীয় জয় তুলে নেয় কলকাতার দল।
উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে দুই দল। তবে ম্যাচের শেষ আধ ঘণ্টায় আধিপত্য বিস্তার করে গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়নরাই। ৬৫ ও ৭১তম মিনিটে গোল করে এক নম্বর জায়গাটা বহাল রাখে স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনার দল। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে এটি তাদের চতুর্থ জয়। এই নিয়ে টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত তারা, যার মধ্যে ছ’টিতেই জিতেছে।
দুই দলেরই রক্ষণকে সে দিন কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় বারবার। একদিকে যেমন আলাদিন আজারেইকে কড়া পাহাড়ায় রাখেন মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা, তেমনই পেট্রাটস বল ধরলেই তাঁকে ঘিরে ধরছিলেন নর্থইস্টের খেলোয়াড়রা। মোহনবাগানের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ ও শুভাশিস বোস কার্ড সমস্যার জন্য মাঠে না থাকলেও তাঁদের অভাব বুঝতে দেননি তাঁদের পরিবর্তরা। আশিস রাই ও আশিক কুরুনিয়ান- দুজনেই দুর্দান্ত রক্ষণ সামলান। বিশেষ করে আলাদিনকে আটকে রাখার কঠিন কাজটি দারুণ ভাবে করেন আশিস।
ম্যাচ সপ্তাহ ১২-য় ঘরের মাঠে তাদের লড়াই কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে সবুজ-মেরুন বাহিনীর খুব একটা চাপে থাকার কথা নয়। দশ নম্বরে থাকা ব্লাস্টার্স গত দুই ম্যাচেই হেরেছে। গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হেরেছে তারা। হারাতে পেরেছে শুধু চেন্নাইন এফসি-কে। হায়দারবাদ এফসি লিগে তাদের দ্বিতীয় জয়টি পেয়েছে ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধেই। পরপর এতগুলি ম্যাচে হারার ফলে বেশ চাপে আছে তারা। এই অবস্থায় ফর্মের শিখরে থাকা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তাদের জয়ে ফেরা বেশ কঠিন কাজ হবে।
জেগে উঠছে লাল-হলুদ ব্রিগেড!
ম্যাচ সপ্তাহ ১০-এ চলতি আইএসএল মরশুমের প্রথম জয় পেয়েছিল লাল-হলুদ বাহিনী। এ সপ্তাহে তাদের সেই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে আর এক স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনের দল। গত শনিবার চেন্নাইন এফসি-কে ২-০-য় হারিয়ে লিগ টেবলের সর্বশেষ স্থান থেকে দুই ধাপ উঠে আসে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। এ সপ্তাহের শেষে তারা এখন লিগ টেবলের ১১ নম্বরে রয়েছে। টানা ৬৭ দিন ১৩ নম্বরে থাকার পর এই জয় তাদের ১১ নম্বরে তুলে দেয়। চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ৫৪ মিনিটের মাথায় পিভি বিষ্ণু ও ৮৪ মিনিটের মাথায় জিকসন সিং দু’টি দুর্দান্ত গোল করে লিগের দ্বিতীয় জয় এনে দেয় লাল-হলুদ বাহিনীকে।
লিগের ইতিহাসে গোল অক্ষত রেখে টানা দু’টি জয় প্রথম অর্জন করে তারা। আর এই নিয়ে টানা তিনটি ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখে তারা, যা অবশ্যই ইতিবাচক ইঙ্গিত। সে দিন প্রতিপক্ষের গোলের সামনে অনেক বেশি তৎপর ছিল কলকাতার দলের ফুটবলাররা, যা এর আগে কমই দেখা গিয়েছে। সারা ম্যাচে তাদের তিনটি শট লক্ষ্যে ছিল, যার মধ্যে দু’টি থেকেই গোল করে। গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখা লালচুঙনুঙ্গার জায়গায় নামেন প্রভাত লাকরা। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তের জায়গায় হিজাজি মাহের এবং জিকসন সিংয়ের জায়গায় নামেন নাওরেম মহেশ সিং। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমে গোল করেন জিকসন।
প্রথমার্ধে চেন্নাইন পরপর একাধিক গোলের সুযোগ পেলেও ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধে সে ভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। প্রথমার্ধে একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা পাঁচ মিনিট হওয়ার আগেই দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে তুলে ক্লেটন সিলভাকে নামায় ইস্টবেঙ্গল এবং এই পরিবর্তনের মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গোল পেয়ে যায় তারা। কিন্তু এই গোলের পরেই হ্যামস্ট্রিং সমস্যার জন্য মাঠের বাইরে চলে যান ক্রেসপো, যা তাঁকে সম্ভবত সপ্তাহ দুয়েক মাঠের বাইরে রাখবে।
ব্রুজোনের দলেরও পরের ম্যাচ ঘরের মাঠে, ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে। তবে এই ম্যাচ কঠিন হতে চলেছে তাদের পক্ষে। চার ম্যাচে অপরাজিত ওড়িশা গত ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করেছে, যে ফলে অবশ্য একেবারেই খুশি নন তাদের কোচ সের্খিও লোবেরা। এই চার ম্যাচের মধ্যে দু’টি জয় ও দু’টি ড্র রয়েছে। ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের পাঁচ নম্বরে থাকা দলটি যে জয়ে ফিরতে চাইবেই, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে উজ্জীবিত ইস্টবেঙ্গল ভাল খেলবে, এমনই ধরে নেওয়া যায়। তাই খাতায়-কলমে কিছুটা হলেও এগিয়ে তারা।
দুঃসময় চলছেই মহমেডানের!
কলকাতার অপর দুই প্রধান ছন্দে থাকলেও আর এক প্রধান মহমেডান এসসি-র (Mohammedan Sporting) দুঃসময় এই সপ্তাহেও কাটেনি। গত শুক্রবার তারা পাঞ্জাব এফসি-র কাছে ০-২-এ হারে। দশ নম্বর ম্যাচে এই নিয়ে সপ্তম হারের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এই নিয়ে টানা ছ’টি ম্যাচে জয়হীন তারা। যার মধ্যে পাঁচটিতেই হেরেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে একমাত্র জয় পাওয়ার পর তারা আর কোনও ম্যাচে জিততে পারেনি।
গোলের প্রচুর সুযোগ হাতছাড়া করা এবং বিরতির পর তাদের ক্লান্ত হয়ে পড়া— এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়ে এ বার বেশিরভাগ ম্যাচেই হারের মুখ দেখতে হয়েছে কলকাতার দলকে। এই ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সে দিনও ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেও তা থেকে কোনও গোল করতে পারেনি মহমেডান এসসি। অথচ মাত্র পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করে দু’টি থেকেই গোল পায় পাঞ্জাব।
পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচেও প্রধমার্ধে প্রতিপক্ষকে কোনও গোল করতে দেয়নি মহমেডান। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ ও ৬৬ মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে ম্যাচ হারে তারা। এই ছবি সম্প্রতি তাদের প্রতি ম্যাাচেই দেখা গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল তাদের দ্বিতীয় জয় পাওয়ায় মহমেডান এই হারের পর টেবলের সর্বশেষ স্থানে চলে যায়। এই জোড়া সমস্যা না মেটাতে পারলে মহমেডানের পক্ষে জয়ে ফেরা কঠিন হবে। তাদের পরের ম্যাচ মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে, যারা গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে। বাকি চারটির মধ্যে দুটিতে জয় ও দুটিতে হেরেছে তারা। গত ম্যাচে ওড়িশার বিরুদ্ধে ড্র করার আগে হায়দরাবাদকে হারায় মুম্বই। এই ম্যাচেও জয়ে ফেরার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে গতবারের কাপজয়ীরা। কারণ, এই ম্যাচ জিতলে তাদের সেরা ছয়ে প্রবেশ করার প্রবল সম্ভাবনা থাকছে।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ওপার বাংলায় সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিরুদ্ধে একজোট তিন প্রধান, মোদি, মমতাকে চিঠি দিচ্ছে মোহনবাগান