মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রথম মিনিটেই গোল করে লাল-হলুদ বাহিনীকে এগিয়ে দেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস। শৌভিক চক্রবর্তী ও নন্দকুমার শেকরের গোল ম্যাচের ২৬ মিনিটের মধ্যে তাদের তিন গোলে এগিয়ে দেয়। জয় সুনিশ্চিত হয় ৩৩ মিনিটের মাথায় আনোয়ার আলির গোলে।
ম্যাচের শেষ দিক ছাড়া বসুন্ধরা কিংস তেমন কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। তাদের আক্রমণও ছিল প্রায় নির্বিষ। সারা ম্যাচে যেখানে দশটি শট গোলে রাখে ইস্টবেঙ্গল, সেখানে একটিও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা।
এ দিন কিক-অফের পরেই ৩০ সেকেন্ডে গোল পেয়ে যান গ্রিক ফরোয়ার্ড দিয়ামান্তাকস। কিক অফের পরেই বাঁ দিক দিয়ে উঠে বক্সের মধ্যে ক্রস বাড়ান লালচুঙনুঙ্গা। তাঁর ক্রস পৌঁছয় বক্সের প্রায় মাঝখানে দিয়ামান্তাকসের পায়ে। প্রায় ৪৫ ডিগ্রি ঘুরে গোলে বল গোলে ঠেলতে ভুল করেননি লাল-হলুদ বাহিনীর নির্ভরযোগ্য তারকা (১-০)।
এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষকে বেশ চাপে ফেলে দেয় ইস্টবেঙ্গল। ১৬ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পান নন্দকুমার শেকর। মাঝমাঠে দিয়ামান্তাকসের পাসে বল পেয়ে দ্রুত দৌড়ে বাঁ দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। কিন্তু তাঁর শট সামনে থাকা গোলকিপারের হাতে চলে যায়। এর তিন মিনিট পরেই মহেশকে গোলের বল বাড়ান নন্দকুমার। কিন্তু বক্সের মাঝখান থেকে বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন তিনি।
এই দু’টি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হলেও কুড়ি মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত গোল করে দলকে আরও এগিয়ে দেন মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তী। প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণ হেড করে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন বসুন্ধরার অধিনায়ক তপু বর্মণ। কিন্তু তাঁর ক্লিয়ারেন্স গিয়ে পড়ে বক্সের বাইরে শৌভিকের পায়ে। ওখান থেকেই বাঁ পায়ে দূরপাল্লার জোরালো শটে তিনি বল জালে জড়িয়ে দেন (২-০)।
কুড়ি মিনিটের মধ্যে দু’গোলে এগিয়ে যাওয়া কলকাতার দল যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে, তা তাদের খেলা দেখেই বোঝা যায়। বসুন্ধরার রক্ষণও এ দিন প্রতিপক্ষের আক্রমণের চাপ সামলাতে পারেনি। নিজেদের বক্সে তারা খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়ালেও ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা আক্রমণ তৈরি ও গোল করার জন্য প্রচুর জায়গা ও সময় পেয়ে যান বারবার।
লাল-হলুদের তৃতীয় গোলের ক্ষেত্রেও তাদেরই দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। মাদি তালালের কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢোকেন নন্দকুমার। এক ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে কাট ইন করে কিছুটা ঢুকে এসে সোজা গোলে শট নেন তিনি, যা আটকাতে পারেননি অভিজ্ঞ গোলকিপার আনিসুর রহমান (৩-০)।
এর পরে গোলের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। ৩১ মিনিটের মাথায় মাদি তালালের গোলমুখী শট আটকান বসুন্ধরার গোলকিপার। ৩৩ মিনিটের মাথায় তালালের ক্রসে হেড করে বল গোলের দিকে ঠেলেন নন্দকুমার। তবে তা গোললাইন পেরোতে দেননি এক ডিফেন্ডার।
পরের মিনিটে ফের গোল পেয়ে যায় তারা। এ বার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে গোল করেন আনোয়ার আলি। বসুন্ধরার একটি ক্লিয়ারেন্স বক্সের বাইরে আনোয়ারের পায়ে পড়লে তিনি বাঁপায়ে সোজা গোলে শট নেন (৪-০)। প্রথমার্ধে যেখানে ইস্টবেঙ্গলের ছ’টি শট লক্ষ্যে ছিল, সেখানে বসুন্ধরা একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি। পজেশনে বাংলাদেশের দল এগিয়ে (৬৫-৩৫) থাকলেও এক মুহূর্তের জন্যও আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দিয়ামান্তাকসের জায়গায় ক্লেটন সিলভাকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। বসুন্ধরাও নামায় তাদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড মিগুয়েল ফেরেইরাকে। তবে ইস্টবেঙ্গলের দাপট বিন্দুমাত্র কমেনি। শুরুতেই গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ক্লেটন। মাদি তালালের ফরোয়ার্ড পাস নিয়ে তিনি বক্সের সামনে পৌঁছে গিয়ে গোল লক্ষ্য করে শট নেন। কিন্তু গোলকিপার আনিসুর এগিয়ে এসে তা সেভ করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে দশ মিনিটের খেলা পুরো হওয়ার আগেই কুঁচকির চোটের জন্য মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন হেক্টর ইউস্তে। তাঁর জায়গায় নামেন মহম্মদ রকিপ। মিগুয়েল নামায় বসুন্ধরার আক্রমণে প্রথমার্ধের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়। ইস্টবেঙ্গলও খেলার গতি কমাতে চাইছিল। সেই সুযোগও নেয় তাদের প্রতিপক্ষ। তবে ফিনিশিংয়ের সমস্যা তাদের সফল হতে দেয়নি।
ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণও যথেষ্ট তৎপর ছিল এদিন। তবে ৬৮ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে ওঠা সাদ উদ্দিনের নিখুঁত ক্রসে ঠিকমতো মাথায় ছোঁয়াতে পারলে হয়তো গোল পেতেন মিগুয়েল। কিন্তু তাঁর হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বসুন্ধরা যখন চাপ বাড়াচ্ছিল, তখন ইস্টবেঙ্গলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আনোয়ার আলির পেশীতে টান ধরে। তার আগে ইউস্তেও বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই সময়ে সাদ উদ্দিন অসাধারণ এক সুযোগ পান। প্রায় ফাঁকা গোল পেয়ে যান তিনি। কিন্তু তাঁর দুর্বল শট আটক হয়ে যায়। ৭৫ তম মিনিটে মহেশেরও পেশিতে টান ধরে। তাঁকে তুলে পিভি বিষ্ণুকে নামানো হয়। একই সঙ্গে জিকসন সিংহ নামেন শৌভিকের জায়গায়। তবে পরিবর্ত খেলোয়াড়রা নেমে রক্ষণেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, তখন বসুন্ধরা আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলা শুরু করে দেয়।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে বসুন্ধরার মিডফিল্ডার জোনাথন রেইসের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এর পরেই ফরোয়ার্ড সোহেল আহমেদ ফাহিমের শট বারের দু-এক ইঞ্চি ওপর দিয়ে উড়ে যায়। মিগুয়েল, রেইস, শেখ মোরসালিনরাও একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েও সেগুলি কাজে লাগাতে পারেননি। ফলে জয়ের হাসি মুখেই মাঠ ছাড়ে লাল-হলুদ বাহিনী।
এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে পশ্চিম এশিয়ার ১২টি দলকে চারদলীয় তিনটি গ্রুপে (গ্রুপ এ থেকে সি) ভাগ করা হয়েছে এবং পূর্ব এশিয়ার ছ’টি দলকে দু’টি তিনদলীয় গ্রুপে (গ্রুপ ডি থেকে ই) ভাগ করা হয়েছে। গ্রুপ পর্যায়ের পর আটটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছবে। গ্রুপ এ থেকে সি-র বিজয়ী এবং পশ্চিম এশিয়ার এই তিন গ্রুপের মধ্যে সেরা রানার্স-আপ দল শেষ আটে প্রবেশ করবে। এছাড়া গ্রুপ ডি এবং ই-র বিজয়ী ও রানার্স-আপও কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে। ফলে শুক্রবারের ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচে জিততে পারলে তারা সরাসরি সেরা আটে জায়গা পেয়ে যাবে
এক্সপ্লোর
Advertisement
East Bengal: ধোপে টিকল না ওপার বাংলার বসুন্ধরা, দুরন্ত জয়ে চ্যালেঞ্জ কাপের আশা জিইয়ে রাখল ইস্টবেঙ্গল
AFC Challenge League: নেজমে এফসি-কে হারালেই সরাসরি এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যাবে ইস্টবেঙ্গল।
থিম্পু: বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের (AFC Challenge League) দৌড়ে আশার মশাল জ্বালাল ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal)। মঙ্গলবার থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের কৃত্রিম ঘাসের মাঠে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে ৪-০-য় জেতে কলকাতার দল।
গত ম্যাচের ড্র এবং এই ম্যাচে জয়ের ফলে দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট পেয়ে ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে শুক্রবার শেষ ম্যাচে লেবাননের নেজমে এফসি-কে (২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট) হারাতেই হবে তাদের। কিন্তু ড্র করলে সরাসরি শেষ আটে ওঠা সম্ভব হবে না।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে মোহনবাগান, হায়দরাবাদকে হারিয়ে লিগে জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্য়ে সবুজ-মেরুন
খেলার (Sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
জেলার
জেলার
Advertisement