Mohun Bagan Super Giant: মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে মোহনবাগান, হায়দরাবাদকে হারিয়ে লিগে জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্য়ে সবুজ-মেরুন
ISL 2024-25: ইন্ডিয়ান সুপার লিগে মোহনবাগান ও হায়দরাবাদ মুখোমুখি হয়েছে মোট ১২ বার। দু’টিতে জিতেছে হায়দরাবাদ এফসি। পাঁচটিতে মোহনবাগান এসজি ও বাকি পাঁচটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
হায়দারবাদ: টানা তিন ম্যাচ জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক করা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan Super Giant) কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগে একাধিকবার তারা এই সাফল্যের স্বাদ পেয়েছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL 2024-25)। কিন্তু এ মরশুম যে ভাবে শুরু হয়েছিল তাদের, তাতে সমর্থকদের কাছে টানা তিন ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন দেখাই বেশ কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তবে এখন আর সেই স্বপ্ন দেখায় কোনও কষ্ট নেই তাদের। গত দু’টি ম্যাচে যে দাপট নিয়ে জিতেছে তাদের প্রিয় দল, তার পর বুধবার টানা তৃতীয় জয় অর্জন তাদের কাছে খুব কঠিন চ্যালেঞ্জ নাও হয়ে উঠতে পারে।
যেহেতু এই ম্যাচে তাদের মুখোমুখি পাঁচটি ম্যাচে মাত্র একটি জয় পাওয়া হায়দরাবাদ এফসি এবং লিগ টেবলে তারা এগারো নম্বর স্থানে রয়েছে, তাই বুধবার মোহনবাগান ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে বলে ধরে নিচ্ছে অনেকে। কিন্তু হায়দরাবাদ এফসি গত ম্যাচে মহমেডান এসসি-র ওপর যে রকম আধিপত্য বিস্তার করে তাদের ৪-০-য় হারায়, তার পরে তাদের একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না।
সবুজ-মেরুন ব্রিগেড যদি তাদের সেরা ছন্দে থাকে, তা হলে আলাদা কথা। কিন্তু সবার সব দিন তো সমান যায় না। বুধবারের ম্যাচে যদি মোহনবাগান গত দু’ম্যাচের মতো সেরা ছন্দে না থাকতে পারে, তা হলে যে নিজেদের মাঠে অঘটন ঘটিয়ে ফেলতেও পারে হায়দরাবাদ এফসি, সেই ইঙ্গিত তারা গত ম্যাচেই দিয়ে রেখেছে। সেই জন্যই নিশ্চয়ই সতর্ক থাকবে মোহনবাগান শিবির। আত্মতুষ্টির দূষিত হাওয়া যাতে তাদের শিবিরে ঢুকতে না পারে, সেই ব্যাপারে নিশ্চয়ই সতর্ক থাকবেন তাদের কোচ হোসে মোলিনাও।
গত ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে ২-০-য় হারায় মোহনবাগান। তার আগে মহমেডান এসসি-কে ৩-০-য় হারায় তারা। পরপর দুই ডার্বিতে দাপুটে ফুটবল খেলে তারা। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জেসন কামিংসকে প্রথম এগারোয় না রেখেও এই দুই ম্যাচে অসাধারণ জয় পায় মেরিনাররা। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও জেমি ম্যাকলারেনের জুটি যে এ মরশুমে সুপারহিট হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত তারা এই দুই ম্যাচেই রাখেন। রক্ষণে স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ ও স্কটিশ টম অ্যালড্রেড একসঙ্গে খেলায় দলের রক্ষণ দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছে। ফলে প্রথম তিন ম্যাচে সাত গোল খাওয়ার পর গত দুই ম্যাচে নিজেদের দূর্গ অক্ষত রাখে তারা। দেয় পাঁচ গোলও।
বুধবারও এই একই লক্ষ্য নিয়েই জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে নামবে সবুজ-মেরুন বাহিনী, নিজেদের গোল অক্ষত রেখে প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ঝড় বইয়ে দেওয়ার লক্ষ্য। সে জন্য অবশ্যই ছন্দে থাকতে হবে স্টুয়ার্ট, ম্যাকলারেনদের। তাঁদের সঙ্গে যদি লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংদের দক্ষতার সঠিক মিশ্রণ ঘটে, তা হলে বাগান-বাহিনীকে আটকানো কঠিন। শোনা গিয়েছিল, মিডফিল্ডার আপুইয়ার চোট রয়েছে, তিনি এই ম্যাচে নাও খেলতে পারেন। আশিস রাই সম্পর্কেও একই খবর ছিল। কিন্তু কোচ জানিয়ে দিয়েছেন, দলের সবাই সুস্থ রয়েছেন, সবাই মাঠে নামার অবস্থায় রয়েছেন।
অর্থাৎ, রক্ষণে দুই বিদেশীর সঙ্গে আশিস রাই, শুভাশিস বোসদের দেখা যেতেই পারে। গত দুই ম্যাচে প্রথম এগারো অপরিবর্তিত রেখেছিলেন মোলিনা।
সাধারণত, একই এগারো টানা একাধিক ম্যাচে রাখতে চান না তিনি। তাই এই ম্যাচে আপুইয়াকে বিশ্রাম দিয়ে দীপক টাঙরিকে শুরু থেকে খেলাতে পারেন তিনি। কোলাসোর জায়গায় সহাল আব্দুল সামাদকে খেলিয়ে দেখতে পারেন অথবা আশিসের জায়গায় দীপেন্দু বিশ্বাসকে দেখা যেতে পারে।
জামশেদপুরের কাছে হারের পর হায়দরাবাদের কোচ থাংবোই সিংতো স্বীকার করে নেন, তাঁর দলের আক্রমণ ও রক্ষণ, দুই বিভাগেই উন্নতি প্রয়োজন। গত ম্যাচে সেটাই করে দেখান তাঁর দলের ফুটবলাররা। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাদের প্রথম গোল আসে সি গদার্ডের পা থেকে। মহমেডানের বিরুদ্ধে চারটি গোল করে হায়দরাবাদ। অর্থাৎ, তারা ক্রমশ ছন্দে ফিরছে। এই সময় মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে তারা যদি জয় বা ড্র পেতে পারে, তা হলে আত্মবিশ্বাসের স্তর অনেকটা উঠে যাবে।
দলের দুই ব্রাজিলীয় অ্যাটাকার অ্যালান পলিস্তা ও আন্দ্রে আলবা গত ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। পলিস্তা জোড়া গোল করেন ও সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্তেফান সাপিচও একটি গোল পান। ডিফেন্ডার পরাগ শ্রীবাস সে দিন একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন ও অপর গোলটি নিজেই করেন এক দুর্দান্ত দূরপাল্লার শটে। তবে দুই ভারতীয় ফরোয়ার্ড আব্দুল রাবি ও রামলুনচুঙ্গা-দের এখনও অনেক উন্নতি করতে হবে।
আইএসএলে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে গত সাতটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে মোহনবাগান এসজি। এই সাতটি ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতেই ক্লিন শিট বজায় রেখেছে তারা। গত দু’টি ম্যাচের একটিতেও গোল খায়নি মোহনবাগান এসজি। বুধবারও গোল না খেলে টানা তিন ম্যাচে ক্লিন শিট থাকবে তাদের। এর আগে লিগের ইতিহাসে মাত্র দু’বার টানা তিন ম্যাচে নিজেদের গোল অক্ষত রাখতে পেরেছিল তারা, ২০২০ ও ২০২২-এ। চলতি মরশুমে সেটপিস থেকে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে সবুজ-মেরুন বাহিনীই। মোট ছ’টি সেটপিস গোল করেছে তারা। এর মধ্যে তিনটি কর্নার থেকে। কর্নার থেকে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে তারাই।
গত ম্যাচে মহমেডান এসসি-কে ৪-০-য় হারানোর আগে হায়দরাবাদ সাতটি আইএসএল ম্যাচে জয়হীন ছিল। শেষবার তারা পরপর দু’টি আইএসএল ম্যাচে জিতেছে ২০২২-এর ডিসেম্বরে। সেবার তারা টানা পাঁচ ম্যাচে জয় পায়। গত ম্যাচে জোড়া গোল করেন তাদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড অ্যালান পলিস্তা। তাদের হয়ে শেষবার জোড়া গোল করেছিলেন বার্থোলোমিউ ওগবেচে, জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে, ২০২৩-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি।
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে চারটি গোল আছে মনবীর সিং-এর। আইএসএলে এই ক্লাবের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন তিনি। তবে নিজামের শহরের দলের বিরুদ্ধে গত সাতটি ম্যাচে কোনও গোল পাননি তিনি। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শুধু একটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১২ বার। দু’টিতে জিতেছে হায়দরাবাদ এফসি। পাঁচটিতে মোহনবাগান এসজি ও বাকি পাঁচটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। গত মরশুমে প্রথম ম্যাচে ২-০-য় জেতে মোহনবাগান এসজি। ফিরতি লিগে হায়দরাবাদ এফসি-কে ২-০-য় হারায় তারা। তার আগের দুই মরশুমে দুই দলই সেমিফাইনালে ওঠায় তাদের মধ্যে চারবার করে দেখা হয়। ২২-২৩-এ দুটি প্লে অফই গোলশূন্য থাকে। শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকারে জিতে ফাইনালে ওঠে কলকাতার দল। লিগপর্বে প্রথমে মোহনবাগান ও পরে হায়দরাবাদ জেতে। দুই ম্যাচেই ফল হয় ১-০। ২১-২২ মরশুমে প্রথম লেগে ২-২ হওয়ার পর দ্বিতীয় লেগে ২-১-এ জেতে মোহনবাগান। সেমিফাইনালে প্রথমে হায়দরাবাদ ৩-১-এ জিতে অনেকটা এগিয়ে যায়। ফলে ফিরতি সেমিফাইনালে মোহনবাগান ১-০-য় জিতেও ফাইনালে উঠতে পারেনি। সেই হারের বদলা তারা পরের মরশুমে নিয়ে নেয়। ২০২০-২১-এ প্রথমে ১-১ হয় ও পরে ২-২ হয়।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: পরপর দুই ডার্বি জিতে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে নামছে দল, ম্যাচের আগেই হুঙ্কার মোহনবাগান কোচের