East Bengal: চেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের খোঁজে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন
AFC Challenge League: নিজেদের গত ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও পারো এফসির বিরুদ্ধে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের প্রথম ম্যাচে ড্র করেছিল ইস্টবেঙ্গল।
থিম্পু: এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার ফুটবল দ্বৈরথ- মঙ্গলবার রাতে থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের কৃত্রিম সবুজ গালিচায় যে যুদ্ধ হতে চলেছে, তার ট্যাগলাইন এ ভাবেই লেখা যায় অনায়াসে। কারণ, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ ২০২৪-২৫-এ (AFC Challenge league) গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচে মুখোমুখি হতে চলেছে কলকাতার ইস্টবেঙ্গল এফসি ও ঢাকার বসুন্ধরা কিংস (East Bengal vs Basundhara Kings)। এই লড়াইয়ে দুই দলেরই চাই জয়। ফলে দু’পক্ষেরই মরিয়া হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল, একটা ফুটবল ম্যাচের আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার জন্য যা যথেষ্ট।
চলতি গ্রুপ পর্বে এক দিকে যেমন ভুটানের পারো এফসি-র বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করার পর এই ম্যাচে নামছে ইস্টবেঙ্গল, অন্যদিকে লেবাননের নেজমেহ এফসি-র বিরুদ্ধে ০-১-এ হেরে লাল-হলুদ বাহিনীর মুখোমুখি হতে চলেছে বসুন্ধরা। মঙ্গলবার যারা জয়ের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়বে, তাদের পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। হার বা ড্রয়ে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে। তাই মঙ্গলবার এপার বাংলা-ওপার বাংলার দ্বৈরথে একটা আকর্ষণীয় ফুটবল দেখা যেতে পারে।
ইস্টবেঙ্গলের একটা বড় সুবিধা তাদের নবনিযুক্ত কোচ অস্কার ব্রুজোন (Oscar Bruzon), যিনি গত প্রায় পাঁচ বছর বসুন্ধরারই কোচ ছিলেন এবং বাংলাদেশের এই ক্লাবকে দেশের সেরার সন্মান অর্জন করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। ব্রুজোনের সেই দলের অনেক ফুটবলারই এই বসুন্ধরা দলে রয়েছেন। ফলে তাদের শক্তি-দুর্বলতার খতিয়ান ইস্টবেঙ্গলের কোচের কাছে ভাল মতোই আছে। এই সুবিধা অবশ্যই কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন লাল-হলুদ কোচ।
সোমবার সাংবাদিকদের অবশ্য তিনি বলেন, 'এটা ঠিকই যে ওদের দলের অনেক খেলোয়াড় সম্পর্কেই আমার ভাল ধারণা আছে। তবে নতুন কোচ আসার পরে দলের মধ্যে এই মুহূর্তে কী চলছে, তা জানা ছিল না আমার। শনিবার ওদের ম্যাচটা আমি দেখেছি। তার পর একটা ধারণা পেয়েছি। এ ছাড়া আর যা যা জানার দরকার ছিল জেনেছি। এই ধারণা নিয়েই কালকের ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা'।
গত ম্যাচে ভুটানের পারো এফসি-র বিরুদ্ধে ২-২ ড্র হলেও তেমন দাপুটে ফুটবল খেলতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। বরং সেই ম্যাচে হেরে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিল তাদের। সেই ম্যাচে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলের ফরাসী মিডফিল্ডার মাদি তালাল। কিন্তু সেই ব্যবধান তারা মিনিট তিনেকের বেশি ধরে রাখতে পারেনি। আট মিনিটের মাথায় উইলিয়াম ওপোকু পোনাল্টি থেকে গোল শোধ করে ফের লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন পারো এফসি-কে। বিরতির ঠিক আগে ইভান্স আসান্তের গোলে এগিয়ে যায় ভুটানের দল। অনেক চেষ্টা ও ব্যর্থতার পর দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস সেই গোল শোধ করেন ৬৯ মিনিটের মাথায়। শেষ গোলটি না হলে হয়তো ইস্টবেঙ্গলকে হারতেই হত, যেমন হেরেছে বসুন্ধরা।
নেজমেহ এফসি-র বিরুদ্ধে সাদ উদ্দিনের আত্মঘাতী গোলে হারে বাংলাদেশের এক নম্বর ক্লাব দলটি। এ ছাড়া প্রতিপক্ষকে আর কোনও গোল করতে দেয়নি তারা। নিজেরাও অবশ্য গোল করতে পারেনি। কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরি করেছে অনেক। এই ব্যাপারে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে মিল আছে তাদের। অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেও তা থেকে গোল করতে না পারার রোগে আক্রান্ত দুই দলই। ফলে দুই দলের মধ্যেই সমানে সমানে লড়াই হতে পারে মঙ্গলবার।
এই এক হারই তাদের রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরি তিতার চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন করে তুলেছে। তাদের নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড মিগুয়েল ফিগুয়েরা এই লিগের আগেই ব্রাজিল থেকে এসে যখন দলে যোগ দেন, তখন নাকি তাঁর ওজন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। তাই গত ম্যাচে ৮১ মিনিটের মাথায় তাঁকে নামান কোচ তিতা। শেষের মিনিট দশেক মাঠে থেকে তাই তেমন পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। তিন ফরোয়ার্ড ফার্নান্দেজ, জনি ও আহমেদ ফাহিম সারা ম্যাচে চারটি শট গোলে রেখেও একটিও গোলে পরিণত করতে পারেননি।
দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে খুব একটা সন্তুষ্ট নন ইস্টবেঙ্গল কোচ। বিশেষ করে তাদের লড়াকু মানসিকতার অভাব দেখে হতাশই হয়েছেন তিনি। সোমবার তিনি বলেন, 'এ রকম একটা প্রতিযোগিতায় এগনোর জন্য আমরা যথেষ্ট উদ্দীপ্ত হতে পারছি না, এটাই তো সবচেয়ে বড় সমস্যা। তবে দলের ছেলেরা আশা করি বোঝে, তাদের এখন কী করা উচিত। তবু ওদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ, দৌড়ে টিকে থাকতে গেলে কাল আমাদের জিততেই হবে। যদিও বিকেলের ম্যাচের ফলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে এটা ঠিকই যে আমাদের ম্যাচের যে কোনও একটি দল কালই ছিটকে যাবে'।
প্রথম ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে থিম্পুর ঠাণ্ডা, উচ্চতা ও কৃত্রিম ঘাসের মাঠে লাল-হলুদ ফুটবলারদের সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয় ম্যাচে হয়তো ততটা সমস্যা হবে না। কারণ, গত কয়েক দিন এখানে থেকে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে তারা।
দলের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে অবশ্য বলছেন, অচেনা পরিবেশ তাঁদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেনি। তিনি বলেন, 'আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না এখানে খেলতে। গত ম্যাচে আমরা যে রকম খেলেছি ও লড়াই করেছি, তাতে আমার মনে হয়, সব ঠিকই আছে'। গত মরশুমে মোহনবাগানের হয়ে বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে নামার অভিজ্ঞতা নিয়ে ইউস্তে বলেন, 'গত বছর ওদের দল বেশ শক্তিশালী ছিল। ভাল ভাল দেশীয় ও বিদেশী ফুটবলার ছিল ওদের দলে। ওদের ঘরের মাঠে আমরা হারি, আমাদের ঘরের মাঠে ড্র হয়। তবে এই মরশুমে পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। আমাদের কাল জিততে হবে। সেই জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি'।
গত ম্যাচের ভুলগুলি শুধরে নিয়ে উন্নত ফুটবল খেলতে চান ইউস্তে। বলেন, 'গত ম্যাচে কিছু ভুল হয়েছিল আমাদের। সেই ভুলগুলি শুধরে নিয়ে আমরা কাল উন্নত ফুটবল খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অনুশীলনেও তার ছাপ পড়ছে। আগে চেয়ে দলের খেলায় ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। আমরা কাল জেতার জন্যই মাঠে নামব'।
এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ ১৮ দলের টুর্নামেন্ট, যেখানে ১২টি ক্লাব পশ্চিম এশিয়া থেকে এবং ছ’টি পূর্ব এশিয়া থেকে অংশগ্রহণ করছে। পশ্চিম এশিয়ার ১২টি দলকে চারদলীয় তিনটি গ্রুপে (গ্রুপ এ থেকে সি) ভাগ করা হয়েছে এবং পূর্ব এশিয়ার ছ’টি দলকে দু’টি তিনদলীয় গ্রুপে (গ্রুপ ডি থেকে ই) ভাগ করা হয়েছে।
রাউন্ড-রবিন গ্রুপ পর্যায়ের পর আটটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছবে। গ্রুপ এ থেকে সি-র বিজয়ী এবং পশ্চিম এশিয়ার এই তিন গ্রুপের মধ্যে সেরা রানার্স-আপ দল শেষ আটে প্রবেশ করবে। এছাড়া গ্রুপ ডি এবং ই-র বিজয়ী ও রানার্স-আপও কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে। এই আট দলের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল জায়গা করে নিতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: সাত ম্যাচ হারের ধারা থামল, চ্যালেঞ্জ লিগে ড্র করল ইস্টবেঙ্গল