India vs Malaysia: টানা ১২ ম্যাচে জয়হীন ভারত, মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে বদলার সুযোগ হাতছাড়া
Indian Football Team: গত বছর নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কুয়েতের বিরুদ্ধে জয়ের পর থেকে টানা ১২ ম্যাচে জয়হীন রইল ভারতীয় দল। এর মধ্যে ছ’টি ম্যাচে ড্র করেছে তারা।
হায়দরাবাদ: গত বছর মালয়েশিয়ার (India vs Malaysia) ঘরের মাঠে তাদের কাছে হারের বদলা নিতে পারল না ভারত (Indian Football Team)। সোমবার ফিফা ক্রমতালিকায় আট ধাপ পিছনে থাকা দলকে ঘরের মাঠ হায়দরাবাদের জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে পেয়েও হারাতে পারলেন না সন্দেশ ঝিঙ্গনরা। ৩৯ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে পিছিয়ে থাকার পর গোল শোধ করে ১-১ ড্র করে তারা।
গত বছর নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কুয়েতের বিরুদ্ধে জয়ের পর থেকে টানা ১২ ম্যাচে জয়হীন রইল ভারতীয় দল। এর মধ্যে ছ’টি ম্যাচে ড্র করেছে তারা। স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজের প্রশিক্ষণে এটি ভারতের দ্বিতীয় ড্র। গত মাসে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধেও ড্র করে তারা। আগামী বছর মার্চে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে অংশ নেওয়ার আগে মার্কেজের ভারতের সামনে আর কোনও ম্যাচ নেই। অর্থাৎ, জয়হীন অবস্থায় ভারতকে এই বাছাই পর্বের ম্যাচে নামতে হবে।
এ দিন ১৯ মিনিটের মাথায় মালয়েশিয়াকে এগিয়ে দেন তাদের ফরোয়ার্ড পাওলো জোসু। ৩৯তম মিনিটে কর্নার থেকে দুর্দান্ত হেডে গোল করে সমতা আনেন ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ভারতীয় অ্যাটাকারদের ব্যর্থ হওয়ার সমস্যা এই ম্যাচেও সমান ভাবে দেখা যায়। তবে মাঝমাঠে ও রক্ষণে ভাল খেলেছে তারা। গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে পিছনে ফেলে দেয় তারা।
এ দিন প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে শুরু করলেও গোলের সামনে গিয়ে ভারতীয়দের খেই হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা শুরু থেকেই দেখা যায়। ম্যাচের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করেও ব্যর্থ হয় তারা। প্রথমে লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে কাট ব্যাক করলে বক্সের মাথা থেকে বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন আপুইয়া। পরেরবার রাহুল ভেকের ইতিবাচক গোলমুখী সেন্টারের নাগালই পাননি ইরফান ইয়াডওয়াড।
ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় রোশন সিং-এর ক্রস গোলের সামনে পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও তাতে পা লাগাতে পারেননি ইরফান। আক্রমণ তৈরির জন্য দুই উইংকে কাজে লাগালেও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ভারতীয়দের ব্যর্থতা বারবার ফুটে ওঠে এ দিন। দুই ফরোয়ার্ড ফারুখ ও ইরফানকে শুরুর দিকে খুব একটা ধারালো লাগেনি।
মালয়েশিয়া পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ম্যাচের বয়স ১৫ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর থেকে এবং ১৯ মিনিটের মাথাতেই গোল পেয়ে যায় তারা। বরং বলা উচিত গোলটি তাদের উপহার দেন ভারতের অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। মালয়েশিয়ার এলাকা থেকে একটি লম্বা ক্লিয়ারেন্স পৌঁছে যায় ভারতীয় রক্ষণের পিছনে, যেখানে একা গুরপ্রীত ছাড়া কেউ ছিলেন না।
মালয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড পাওলো জোসু বলটিকে তাড়া করেন। তাঁর সঙ্গে গতিতে পেরে ওঠেননি সন্দেশ ঝিঙ্গন। গুরপ্রীত বক্সের বাইরে বেরিয়ে আসেন ক্লিয়ার করার জন্য। কিন্তু বলের গতিপথ বুঝতে পারেননি তিনি। মাটিতে পড়ে বল তাঁর মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় এবং সেই বল অনুসরণ করে গুরপ্রীতকে পিছনে গিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত টাচে ফাঁকা গোলে ঠেলে দেন জোসু (১-০)।
ভারতীয়রা আক্রমণ চালিয়ে গেলেও গোল করার চেষ্টায় তাদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা মালয়েশিয়াকে সমস্যায় ফেলতে পারেনি। এক গোলে এগিয়ে যাওয়ায় নিজেদের গোলের সামনে পাহাড়াও বাড়িয়ে দেন ডিয়ন জোহান কুলস-রা। ফলে আরও দিশাহারা হয়ে যায় ভারতের আক্রমণ। এই সময়েই সুনীল ছেত্রীর অভাব বারবার টের পাওয়া যাচ্ছিল। সেটপিস থেকে গোলের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি ভারত।
রিজার্ভ বেঞ্চে বসে তখন লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, জিথিন এমএস, ভিবিন মোহনন-রা মাঠে নামার জন্য ছটফট করছিলেন। ভারতের আক্রমণে কোলাসো, মনবীর, ছাঙতের ত্রয়ী শুরু থেকে খেললে হয়তো ছবিটা অন্য রকম হতে পারত। ভারত অবশ্য গোল শোধ করে ৩৯ মিনিটের মাথায়, সেটপিস থেকেই, যখন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের কর্নারে হেড করে বক্সের মাঝখান থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন রাহুল ভেকে (১-১)। এক্ষেত্রে কর্নার কিক এবং হেড, দুটোই নিখুঁত ছিল। এর পরে বক্সের বাইরে থেকে ইরফানের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য বারের ওপর চলে যায়।
এই গোলের পর থেকে ফের ভারতের আক্রমণে গতি ও আগ্রাসন দুইই বাড়ে। গোলের দু’মিনিট পর ফের ব্র্যান্ডনের মাপা কর্নার পেয়ে শট নেন আনোয়ার আলি। কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গোল খাওয়ার পর মালয়েশিয়ার রক্ষণ আরও তৎপর হয়ে ওঠে। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে তারাও পাল্টা আক্রমণে ওঠে। কিন্তু দ্রুত ট্রানজিশনের ফলে রক্ষণে লোকসংখ্যা বাড়িয়ে তাদের আটকে দেয় ভারত।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মালয়েশিয়া ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করলেও ভারত তা সামলে পাল্টা আক্রমণে উঠতে খুব একটা দেরি করেনি। মিনিট পনেরো দুই দলেরই গোলের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর প্রথমে বাঁদিক দিয়ে ওঠা ড্যানিয়েল টিং-এর কোমাকুনি শট ডাইভ দিয়ে বাঁচান গুরপ্রীত। এর পরেই বাং দিক থেকে সুরেশের ক্রসে প্রথমে শরীরকে শূন্যে ভাসিয়ে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন ফারুখ। তিনি বলে পা লাগাতে পারলেও ছাঙতে শট নেন, কিন্তু তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
৬৫ মিনিটের মাথায় ছাঙতে ও ভেকের জায়গায় মাঠে নামেন মনবীর ও ভালপুইয়া। তাঁরা গুছিয়ে ওঠার আগেই ধারালো আক্রমণে ওঠে মালয়েশিয়া এবং ড্যানিয়েলের দুরপাল্লার গোলমুখী শট ফিস্ট করে বার করে দেন গুরপ্রীত। ফিরতি বলে বাইসাইকেল কিক করেন পরিবর্ত ফরোয়ার্ড মুহম্মদ সাফাউই বিন, তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন।
দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে দুই দফায় পাঁচটি পরিবর্তন করে নেয় মালয়েশিয়া। ভারতের দ্বিতীয় দফার জোড়া পরিবর্তন হয় ৭৯ মিনিটের মাথায়, যখন আসেন জিথিন এমএস ও এডমন্ড লালরিন্ডিকা। প্রথম দলের দুই ফরোয়ার্ড ফারুখ ও ইরফান একসঙ্গে মাঠ ছাড়েন। শেষ দশ মিনিটে আক্রমণে ঝড় তোলার জন্যই দু’পক্ষই তাদের আক্রমণে পরিবর্তন আনে এবং লড়াই জমে ওঠে। তবে কোনও পক্ষই আর গোলের মুখ খুলতে পারেনি।
স্টপেজ টাইমে মালয়েশিয়ার হয়ে প্রথম খেলতে নামা পরিবর্ত ফরোয়ার্ড ফেরগাস টিয়েরনির শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে ফের গোলে শট নেন সাফাওই বিন, যা লাফিয়ে উঠে বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন গুরপ্রীত। এর পরেই আনোয়ার আলি বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে পৌঁছে গেলেও বক্সে প্রবেশ করতে পারেননি। ফলে ম্যাচেরও ফয়সালা হয়নি।
ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু (গোল), রাহুল ভেকে (ভালপুইয়া), আনোয়ার আলি, সন্দেশ ঝিঙ্গন (অধি), নাওরেম রোশন সিংহ, সুরেশ সিংহ ওয়াংজাম (থৈবা সিং), ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ (ভিবিন মোহনন), লালেংমাউইয়া রালতে আপুইয়া, লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে (মনবীর সিংহ), ইরফান ইয়াডওয়াড (জিথিন এমএস), ফারুখ চৌধুরি (এডমন্ড লালরিন্ডিকা)। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: আইপিএল নিলামের আগে বাংলার হয়ে টি-২০-ও খেলবেন শামি, সৈয়দ মুস্তাক আলিতে অধিনায়ক কে?