কলকাতা: ফুটবল মানেই গোল আর গোলের কথা আলোচনা হলেই এসে যায় ফরোয়ার্ডদের কথা। প্রিয় দলের কাছে সমর্থকদের প্রধান চাহিদা একটাই, যত পারো গোল করো। আর সে জন্যই ফরোয়ার্ডরা তাদের এত প্রিয়, এত জনপ্রিয়। সারা বিশ্বে যত জনপ্রিয় ফুটবলাররা আছেন, তাঁদের বেশিরভাগই ফরোয়ার্ড, যাঁরা অসাধারণ সব গোল করে ফুটবলপ্রেমীদের মন আনন্দে ভরিয়ে তোলেন। পেলে, মারাদোনা থেকে শুরু করে মেসি, রোনাল্ডোরা তাঁদের গোলের জন্যই তুমুল জনপ্রিয়। ইন্ডিয়ান সুপার লিগেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। প্রতি মরশুমে ফরোয়ার্ডরাই সবার নজর কেড়ে নেন এবং তাঁরাই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছন। এ বারও প্রতি দলের ফরোয়ার্ডদের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন তাদের সমর্থকেরা -
দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস (ইস্টবেঙ্গল)
গত আইএসএলের গোল্ডেন বুটজয়ী তারকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস গত মরশুমে কেরালা ব্লাস্টার্সের পক্ষে ১৩টি গোল করে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার সন্মান অর্জন করে নেন। দু’বছরের জন্য ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এই গ্রিক ফরোয়ার্ড। আইএসএলে তাঁর প্রথম মরশুমেই দশটি গোল করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, লিগের তারকা হয়ে উঠতে চলেছেন তিনি। ২০১২-য় উয়েফা ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ গ্রিক দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি। কেরালা ব্লাস্টার্সে যোগ দেন ২০২২-এ এবং গত দুই মরশুমে ৩৮টি ম্যাচে ২৩টি গোল করেছেন দিয়ামান্তাকস। ছ’টি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন। ডুরান্ড কাপে প্রথম ম্যাচে একটি গোল করেন ও একটিতে অ্যাসিস্ট করেন তিনি।
জেমি ম্যাকলারেন (মোহনবাগান)
এ লিগের সর্বকালের সর্বাধিক গোলদাতা এবং পাঁচবারের গোল্ডেন বুট বিজয়ী এই জেমি ম্যাকলারেন। ৪ বছরের চুক্তিতে যোগ দিয়েছেন মোহনবাগানে। এ লিগে ২১৯ ম্যাচে ১৪৯টি গোল আছে ম্যাকলারেনের। গত মরশুমে মেলবোর্ন সিটি-র হয়ে ১১টি গোল করেন ৩০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। এ লিগে এই ক্লাবের হয়ে টানা পাঁচ বছর খেলে ১৬২টি ম্যাচে ১১৩টি গোল করেছেন তিনি। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া কাপ ও এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেলবোর্নের ক্লাবের হয়ে আরও ন’টি গোল করেন তিনি। এ বার ভারতে এসে ফুটবল জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন তিনি।
জেসন কামিংস (মোহনবাগান)
ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে আসা ফুটবলার তিনিই প্রথম। ২০২২ বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে খেলে আসা জেসন কামিংস গতবার দলকে অনেকগুলি গোল এনে দিয়েছিলেন। এ লিগের চ্যাম্পিয়ন দল থেকে মোহনবাগানে আসা কামিংস সবুজ-মেরুন বাহিনীর লিগশিল্ড জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁকে গোল সাজিয়ে দেওয়া হলে তিনি তার সদ্ব্যবহার করতে ওস্তাদ।
আরমান্দো সাদিকু (এফসি গোয়া)
আলবেনিয়ার আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় আরমান্দো সাদিকু, ইউরো কাপে যাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০২৩-২৪ মরশুমে মোহনবাগান এসজি-এর হয়ে খেলার পর এফসি গোয়ায় যোগ দেন। মোহনবাগানের হয়ে ২২টি ম্যাচে আটটি গোল করেছেন সাদিকু। কোচিতে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসির বিরুদ্ধে তার অসাধারণ দু’টি গোল এবং গত বছরের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে তার নিখুঁত সমতাসূচক গোলটি হয়তো অনেকেরই মনে আছে।
জর্জ পেরেইরা দিয়াজ(বেঙ্গালুরু এফসি)
তাঁর উজ্জীবিত পারফরম্যান্সের জন্য ভারতীয় ফুটবলে একটি পরিচিত নাম জর্জ পেরেইরা দিয়াজ। তাঁর মতো সুযোগসন্ধানী ফরোয়ার্ডদের অনেকে ‘ফক্স-ইন-দ্য-বক্স’ বলে থাকেন। কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি এবং মুম্বই সিটি এফসির হয়ে খেলার পর এ মরশুমের আগে বেঙ্গালুরু এফসিতে যোগ দিয়েছেন দিয়াজ। মুম্বই সিটির হয়ে ২০২২-২৩ মরশুমে আইএসএল লিগ শিল্ড এবং ২০২৩-২৪ মরশুমে আইএসএল কাপ জেতেন তিনি।
রয় কৃষ্ণ (ওড়িশা এফসি)
গত বার
আইএসএলে তিনি জার্সি বদল করে বেঙ্গালুরু এফসি থেকে চলে আসেন ওডিশা এফসি-তে। কলিঙ্গ বাহিনীর আক্রমণ বিভাগে অন্যতম সেরা অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তার আগের দুই মরশুমে বেশি গোল করতে না পারার জ্বালা তিনি গত বার মিটিয়ে নেন ১৩ গোল করে। প্রচুর অভিজ্ঞতা, প্রশংসনীয় পরিশ্রম এবং উন্নত পারফরম্যান্সের ফলে ওডিশার আক্রমণে তিনিই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র।
নিকোলাওস কারেলিস (মুম্বই সিটি এফসি)
মুম্বই সিটি এফসি শিবিরে পেরেইরা দিয়াজের স্থান পূরণ করতে তৈরি নিকোলাওস কারেলিস। ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই সেন্টার-ফরোয়ার্ডের। ৩৬১টি পেশাদার ম্যাচে ১০৩টি গোল করেছেন এই গ্রিক ফরোয়ার্ড। ২০২২-২৩ মরশুমে পানেটোলিকোসের হয়ে খেলার সময় কারেলিস মরশুমের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছিলেন। এছাড়া, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাই পর্ব ও উয়েফা ইউরোপা লিগে গোল গোল করার কৃতিত্বও অর্জন করেছেন তিনি।