Mohun Bagan Super Giant: জামশেদপুরকে তিন গোলে উড়িয়ে লিগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে মোহনবাগান
Mohun Bagan Super Giant: এই হলুদ কার্ড দেখে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট মিডফিল্ডার দীপক টাংরি। ফলে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি।
![Mohun Bagan Super Giant: জামশেদপুরকে তিন গোলে উড়িয়ে লিগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে মোহনবাগান Mohun Bagan Super Giant beat Jamshedpur FC to climb to second spot in ISL 2023-24 Mohun Bagan Super Giant: জামশেদপুরকে তিন গোলে উড়িয়ে লিগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে মোহনবাগান](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2024/03/01/f30c0d76742869fdb19f85baf5e0ef191709313037247507_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: ঘরের মাঠে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে জামশেদপুর এফসি-কে (Jamshedpur FC) ৩-০-য় হারিয়ে আইএসএলের (ISL 2023-24) লিগ টেবলের দু’নম্বরে উঠে এল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant)। শুক্রবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথমার্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়লেও দ্বিতীয়ার্ধে আর সেই লড়াই জারি রাখতে পারেনি ইস্পাতনগরীর দল। নতুন বছরে লিগে এই প্রথম হারল তারা। অন্য দিকে, ২০২৪-এ এই নিয়ে টানা ছয়টি আইএসএল ম্যাচে অপরাজিত রইল সবুজ-মেরুন বাহিনী, যার মধ্যে চারটিই জয়।
এ দিন সাত মিনিটের মধ্যেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার দিমিত্রি পেত্রাতোস। দ্বিতীয়ার্ধে, ৬৮ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন তাঁর স্বদেশীয় বিশ্বকাপার জেসন কামিংস। দু’জনেরই মোট গোলের সংখ্যা দাঁড়াল সাত। ৮০ মিনিটের মাথায় তৃতীয় গোল করে দলের দশম জয় সুনিশ্চিত করেন পরিবর্ত হিসেবে নামা আলবানিয়ান স্ট্রাইকার আর্মান্দো সাদিকু।
এ দিন প্রথমার্ধে দুই দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করলেও দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতার দ্বিতীয় গোল করার পরই খেলা থেকে কার্যত হারিয়ে যায় জামশেদপুর এফসি। প্রথমার্ধে দু’টি শট লক্ষ্যে রাখলেও দ্বিতীয়ার্ধে একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি তারা। কামিংসের গোলের পর থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ প্রায় পুরোপুরিই নিয়ে নেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট।
চলতি লিগের দশম জয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে মুম্বই সিটি এফসি-কে টপকে টেবলের দু’নম্বরে চলে এল তারা। একটি ম্যাচ বেশি খেলে তাদের চেয়ে দু’পয়েন্ট এগিয়ে থাকায় এক নম্বরে রয়েছে ওড়িশা এফসি। তবে মোহনবাগানের সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ৩২ পয়েন্ট পেয়ে মুম্বইয়ের দল রয়েছে তিন নম্বরে। শনিবার পঞ্জাব এফসি-কে হারাতে পারলে মুম্বই সিটি এফসি ফের মোহনবাগানকে পিছনে ফেলে পৌঁছে যাবে দু’নম্বরে।
গত ম্যাচের ছকেই, তিন ডিফেন্ডার ও দুই ফরোয়ার্ডে এ দিন দল সাজান মোহনবাগান কোচ আন্তোনিও হাবাস। জেসন কামিংস, অভিষেক সূর্যবংশী ও লিস্টন কোলাসোকে তিনি প্রথম দলে ফেরান আর্মান্দো সাদিকু, সহাল আব্দুল সামাদ ও আশিস রাইয়ের জায়গায়। জামশেদপুর অবশ্য অপরিবর্তিত দল নামায়।
দুই অস্ট্রেলীয় অ্যাটাকারের জুটি এ দিন শুরু থেকেই তৎপর হয়ে ওঠেন এবং শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে সবুজ-মেরুন বাহিনী এবং সাত মিনিটের মধ্যে গোল করে এগিয়ে যায় তারা। মাঝমাঠ থেকে ডানদিকের উইংয়ে মনবীরকে বল বাড়িয়ে এই আক্রমণ শুরু করেন জনি কাউকো। মাঝ বরাবর মনবীরকে অনুসরণ করেন কামিংস ও পেট্রাটস। সামনে কামিংস কড়া মার্কিংয়ে আছেন দেখে বক্সে ঢুকে পিছনে পেট্রাটসকে কাটব্যাক করেন মনবীর। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ফার্স্ট টাইম ফিনিশ করেন পেত্রাতোস (১-০)।
তবে একতরফা নয়, দুই দিকেই সমান ভাবে আক্রমণ হয় এ দিন। ফলে ম্যাচ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। শুরুতেই গোল খেয়ে নড়েচড়ে বসা জামশেদপুর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং ১১ মিনিটের মাথাতেই প্রভাত লাকরা মাপা ক্রস পাঠান ড্যানিয়েল চিমার কাছে। কিন্তু চিমা বলের নাগাল পাওয়ার আগেই তা ক্লিয়ার করে দেন আনোয়ার আলি। ১৪ মিনিটে ফের সুযোগ পান চিমা। লালদিনপুইয়ার ক্রস থেকে সোজা গোলে শট নেন তিনি, যা ব্লক করে দেন শুভাশিস।
২০ মিনিটের মাথায় ইমরান খানের দূরপাল্লার শট বারের নীচ দিয়ে ঢোকার মুখে বিশাল কয়েথ চাপড়ে বের করে না দিলে সমতা এনে ফেলত জামশেদপুর। জলপানের বিরতির পর জেরেমি মানজোরো ও চিমার জুগলবন্দি ফের বিপদে ফেলে দেয় মোহনবাগানকে। কিন্তু চিমার শট বাঁচিয়ে দলকে ফের বাঁচান বিশাল। সব মিলিয়ে দু’টি অবধারিত গোল এ দিন সেভ করেন তিনি।
কিন্তু ১৫ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর যে সুযোগ পান কোলাসো, তাকে সুবর্ণ সুযোগ বললেও কম বলা হয়। বাঁ দিকের উইং দিয়ে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি ও প্রথম পোস্টের দিক দিয়ে কোণাকুনি শট নেন গোলে। কিন্তু গোলকিপার রেহনেশ তা আটকে দেন। দ্বিতীয় পোস্টের দিকে বল ঠেললে হয়তো দলকে দ্বিতীয় গোলটি এনে দিতে পারতেন তিনি।
২২ মিনিটে মনবীর গোলের বল সাজিয়ে দেন বক্সে থাকা কাউকোকে। কিন্তু গোলের শট নেওয়ার আগেই তিনি বাধা পান। ২৮ মিনিটের মাথায় দূরপাল্লার শটে গোলের চেষ্টা করেন মনবীর, যা ব্লক করেন ইমরান। ফিরতি বলে তিনি পেত্রাতোসের কাছে বল পাঠালেও বলের নিয়ন্ত্রণ হারান অস্ট্রেলীয় তারকা।
যে পথে সাত মিনিটের মাথায় গোল পায় সবুজ-মেরুন বাহিনী, ৩৭ মিনিটের মাথায় সেই পথেই ফের আক্রমণে ওঠে তারা। কিন্তু এ বার মনবীরের কাটব্যাকে প্রথমেই শট না মেরে তা আগে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন পেট্রাটস এবং তাঁর গোলমুখী শট মুইরাং ইয়ামবয়ের মাথায় লেগে গোলের বাইরে চলে যায়।
জোরাল শট তাঁর মাথায় লাগায় আর বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারেননি ইয়ামবয়। দু’মিনিট পরেই মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। কিন্তু এই সময়েই এক অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন করেন জামশেদপুরের কোচ খালিদ জামিল। হাভিয়ে সিভেরিওকে তুলে নিয়ে রে তাচিকাওয়াকে নামান তিনি। তখন প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময় শেষ হতে আর পাঁচ মিনিট বাকি ছিল।
প্রথমার্ধে চারটির মধ্যে তিনটি শট গোলে রাখে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। জামশেদপুরের দু’টি শট ছিল লক্ষ্যে, তিনটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এই ৪৫ মিনিটে মোট ২১টি ক্রস দেয় ইস্পাতনগরীর দল। সেখানে কলকাতার দল পাঁচটির বেশি ক্রস দিতে পারেনি। কর্নারেও এগিয়েই (৮-৩) ছিলেন ড্যানিয়েল চিমা-রা। কিন্তু গোলের দরজা খুলতে পারেনি তারা।
বিরতির পর গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে জামশেদপুর। অন্যদিকে, নিজেদের দূর্গ বাঁচাতে তৎপর হয়ে ওঠে মোহনবাগানও। প্রতিপক্ষকে বলপূর্বক আটকাতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন তাদের মিডফিল্ডার দীপক টাংরি। ফলে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি। ৬০ মিনিটের মাথায় তাঁর জায়গায় মাঠে নামেন অনিরুদ্ধ থাপা। এই পরিবর্তনই জামশেদপুরের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইকে কার্যত শেষ করে দেয়।
মাঠে নামার মিনিট চারেক পরেই মাঝমাঠ থেকে থাপা যে ফরোয়ার্ড থ্রু বাড়ান কামিংসকে, তা ছিল গোলের জন্য যথেষ্ট। লালদিনপুইয়াকে ড্রিবল করে গোলে শটও নেন কামিংস। কিন্তু তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলেও দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন বক্সের বাঁ দিকে থাকা মনবীর। কিন্তু তাও অল্পের জন্য গোলের বাইরে চলে যায়।
তবে ৬৮ মিনিটের মাথায় যে সুযোগ পান কামিংস, তা আর হাতছাড়া করেননি। অসাধারণ গোলের মুভ দেখা যায় মনবীর ও কামিংসের মধ্যে। দু’জনেই দু’বার নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়ার পরে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন কামিংস (২-০)। দ্রুতগতির এই মুভ আটকাতে হিমশিম খেয়ে যান জামশেদপুরের ডিফেন্ডাররা। এই সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল মূলত হোম টিমেরই দখলে।
ড্রিঙ্কস ব্রেকের পর ফের পেত্রাতোসকে গোলের বল সাজিয়ে দেন মনবীর। এ বার বাঁদিকের উইং থেকে। পোত্রাতোস বক্সের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে গোলে কোণাকুনি শট নিলেও তা শুয়ে পড়ে আটকে দেন রেহনেশ। ফিরতি বলে ফের শট নেন পেত্রাতোস, যা আবার আটকান জামশেদপুরের গোলরক্ষক। এ দিন চারটি দুর্দান্ত সেভ করেন রেহনেশ। না হলে হয়তো আরও বড় ব্যবধানে জিতত সবুজ-মেরুন বাহিনী।
কিন্তু ৮০ মিনিটের মাথায় যে পরিকল্পিত মুভ থেকে তৃতীয় গোল পায় কলকাতার দল, তা আটকানো যে কোনও দলের পক্ষেই কঠিন। বাঁ দিক দিয়ে ওঠা মনবীর প্রথমে পেট্রাটসকে ফরোয়ার্ড থ্রু দেন এবং ওভারল্যাপ করে তাঁকে টপকে চলে যান। ফিরতি পাসে পেট্রাটস বল দেন বক্সের বাঁদিকে সেই মনবীরকেই। বক্সের মাঝখানে ছিলেন আরমান্দো সাদিকু এবং তাঁর উদ্দেশ্যে নিখুঁত কাটব্যাক করেন মনবীর। যা এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে আসে সাদিকুর কাছেই। কিন্তু সময় নষ্ট না করে প্রথম শটেই বারের নীচ দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন আলবানিয়ান স্ট্রাইকার (৩-০), যিনি মিনিট দশেক আগেই নেমেছিলেন কাউকোর জায়গায়।
এ দিন সেরা ফর্মে ছিলেন মনবীর। প্রথম দু’টি গোলে তিনি অ্যাসিস্ট করেন। এই গোলটিও হয় তাঁর প্রত্যক্ষ মদতেই হতে পারত। কিন্তু সাদিকুর কাছে বল আসার আগে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লাগে বলে তাঁর খতিয়ানে দু’টি অ্যাসিস্টই লেখা হয়। গত ম্যাচেও দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনিই। ফলে চলতি লিগে মোট পাঁচটি অ্যাসিস্ট করে সবার ওপরে চলে গেলেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচের সেরার খেতাবও জিতে নেন মনবীর।
(সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
আরও পড়ুন: 'আমি কোনও প্রতারণা করিনি', চার বছরের নির্বাসনের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা পোগবার
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)