Cristiano Júnior: জুনিয়রই আমাদের জিততে শিখিয়েছিল, ওর মৃত্যু ফুটবলের জন্য ক্ষতি, সতীর্থকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অভিজিৎ মণ্ডলের
Death anniversary of Cristiano Júnior: ২০০৪-এর ৫ ডিসেম্বর বেঙ্গালুরুতে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচে সুব্রত পালের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে মৃত্যু হয় ডেম্পোর স্টাইকার জুনিয়রের।
কলকাতা: ১৭ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রের মৃত্যুর ঘটনা ভুলতে পারছেন না ডেম্পোতে তাঁর সতীর্থ গোলকিপার অভিজিৎ মণ্ডল। তিনি এখনও সেই অভিশপ্ত দিনটির কথা ভুলতে পারেননি। চোখ বুজলেই যেন সেই মুহূর্তটি দেখতে পান। আরও একটি ৫ ডিসেম্বরের আগে নতুন করে জুনিয়রকে হারানোর শোক ঘিরে ধরেছে তাঁকে। এবিপি লাইভে সেই যন্ত্রণা ব্যক্ত করলেন অভিজিৎ।
সেদিনের কথা স্মরণ করে অভিজিৎ জানালেন, ‘২০০৪-এর ৫ ডিসেম্বর দিনটা আমি কোনওদিন ভুলব না। সেই মরসুমে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে ডেম্পোতে সই করেছিল জুনিয়র। তবে নানা জটিলতায় সই করতে দেরি হওয়ায় ও ডুরান্ড কাপে খেলতে পারেনি। দলের সঙ্গেই অবশ্য় ছিল। ডুরান্ড কাপের পরের টুর্নামেন্টই ছিল ফেডারেশন কাপ। সেই টুর্নামেন্টে ডেম্পোর হয়ে খেলা শুরু করে জুনিয়র। ও প্রতিটি ম্যাচেই গোল করছিল, দলকে জেতাচ্ছিল। যে ম্যাচে ও মারা যায়, সেদিনও ২ গোল করেছিল। ও যে মারা গেছে, মাঠে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। অ্যাম্বুল্যান্সে করে যখন ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনও সবাই ভেবেছিল, ও ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, এর আগে আমাদের চোখের সামনে এরকম ঘটনা কোনওদিন ঘটেনি। আমরা সঞ্জীব দত্তর মৃত্যুর কথা শুনেছিলাম, কিন্তু জুনিয়র যে মারা যাবে, সেটা ভাবতে পারিনি। খেলা শেষ হওয়ার পর সহকারী কোচ মরিসিও আলফান্সো আমাদের বলেন, সবাই দ্রুত হাসপাতালে চলো। তখনই আমরা বিপদের আশঙ্কা করি। আমরা ট্রফি নিয়ে সেলিব্রেশন না করেই হাসপাতালে চলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, একটা মৃতদেহ রাখা আছে। আমাদের সতীর্থ জুনিয়রের মৃতদেহ রাখা ছিল। জুনিয়রের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী, কেন দায়ী এসব বিতর্কে যাব না। তবে সেদিন যা ঘটেছিল, সেটা ফুটবলের পক্ষে খারাপ। তবে জুনিয়রের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, ফুটবলে চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমরা কতটা পিছিয়ে। জুনিয়রের মৃত্যুর পরেই সব ক্লাবে চিকিৎসক রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রি-সিজনে মেডিক্যাল চেক আপও শুরু হয়।’
সতীর্থ হিসেবে জুনিয়রকে কেমন দেখেছেন? অভিজিৎ জানালেন, ‘মানুষ হিসেবে জুনিয়র অত্যন্ত নম্র, বিনয়ী ছিল। ও প্রচণ্ড ধর্মভীরু ছিল। সবসময় ওর চলাফেরা, কাজকর্মে ধর্মভীরুতার পরিচয় পাওয়া যেত।’
প্রয়াত সতীর্থের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অভিজিৎ আরও বললেন, ‘আমরা যারা ডেম্পোতে ছিলাম, তাদের সবার কাছে জুনিয়র যে কী, সেটা শুধু আমরাই জানি। আমার ফ্ল্যাটে এখনও জুনিয়রের ছবি আছে। আমি এখনও প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর ওর ছবিতে মালা দিই। আমাদের সবার বিশ্বাস, জুনিয়র মারা যাওয়ার পরেও আমাদের মধ্যে আছে। জুনিয়র আমাদের শিখিয়ে গেছে, কীভাবে জিততে হয়। ও উপর থেকে আমাদের আশীর্বাদ করে। ও মারা যাওয়ার পর থেকেই আমরা জিততে শুরু করি। আমরা ভারতের সব ট্রফি জিতেছি। সেই দশকে ডেম্পো ভারতের সেরা দল হয়ে উঠেছিল।’
একজন স্ট্রাইকার গোল করার পরের মুহূর্তই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। এটা তাঁর কাছে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ? অভিজিৎ বললেন, ‘আমরা ফুটবল-যোদ্ধা। ফুটবল মাঠ আমাদের কাছে যুদ্ধের ময়দান। সেখানে মৃত্যু বীরের মতো মৃত্যুবরণ। জুনিয়রের কাজ ছিল গোল করা। ও সেটা করেই মারা গিয়েছে। এতে ও নিশ্চয়ই শান্তি পেয়েছে।’
অভিজিৎ আরও বললেন, ‘জুনিয়রের ভারতীয় ফুটবলকে আরও অনেককিছু দেওয়ার ছিল। আমরা মাত্র ২ বছর ওর খেলা দেখেছি। তার মধ্য়েই ও বুঝিয়ে দিয়েছে কত বড় স্ট্রাইকার ছিল। ওর অকালমৃত্যু ফুটবলের জন্য বড় ক্ষতি।’