এক্সপ্লোর
Advertisement
জন্মদিনে অজানা সৌরভ: ভূতের ভয়ে মাঝরাতে সতীর্থকে ডাক, বিলেতে দেড়খানা নান-চিকেন খেয়ে সেলিব্রেশন
জাতীয় ও রাজ্য দলে তাঁর সতীর্থরা এবিপি আনন্দর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন সৌরভকে নিয়ে তাঁদের মজার কিছু স্মৃতি।
কলকাতা: বুধবার, ৮ জুলাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। ৪৮ বছর সম্পূর্ণ করলেন জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। বর্তমানে যিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টের মসনদে। সচিন তেন্ডুলকর থেকে বিরাট কোহলি, জন্মদিনে শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসলেন মহারাজ। পাশাপাশি জাতীয় ও রাজ্য দলে তাঁর সতীর্থরা এবিপি আনন্দর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন সৌরভকে নিয়ে তাঁদের মজার কিছু স্মৃতি।
কোন দিকে মাথা, কোন দিকে পা!
বাংলা দলে সৌরভের সঙ্গে অনেক স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছেন প্রাক্তন অফস্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী। মোবাইল ফোনে বলছিলেন, ‘সালটা সম্ভবত ২০০৮। হরিয়ানার লাহলিতে বাংলার হয়ে রঞ্জি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। ওখানে বড় হোটেল নেই। একটা মাঝারি মাপের হোটেলে ছিলাম। আমাদের ঘরগুলো মোটামুটি ছিল। দাদির জন্য একটা বড় রুম দিয়েছিল। দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমে একটা ছোট ঘর। তারপর একটা প্যাসেজ। তারপর বড় ঘর। সারা ঘরে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আলো। বিছানাটা ছিল পুরো গোল। দাদি কলকাতা থেকে গিয়েছিল। আমরা অন্য জায়গা থেকে খেলে সরাসরি গিয়েছিলাম। দাদি ফোনেই হোটেল নিয়ে খোঁজ নিচ্ছিল। চেক ইন করে ঘরে ডাকল। সকলে মিলে বললাম, কী ভাল রুম দিয়েছে তোমাকে। দাদি বলল, এই বিছানায় কোন দিকে মাথা আর কোন দিকে পা করা উচিত বল তো! আমরা হেসে লুটোপুটি। সত্যি খাটটা অদ্ভুত ছিল। তবে দাদির রসিকতা করার স্বভাবটা বুঝতে পেরেছিলাম। কোনওদিন অভিযোগ করতে শুনিনি। এত বিতর্কের পরেও গ্রেগ চ্যাপেলকে নিয়ে একটা বাজে মন্তব্য করত না।'
সৌরাশিস আরেকটি ঘটনার কথাও জানালেন। বললেন, ‘সেবার পুণেতে রঞ্জি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। বিপক্ষে মহারাষ্ট্র। ওদের মুনাফ পটেল তখন দারুণ ছন্দে। ওই ম্যাচে দাদি সেঞ্চুরি করেছিল, ৫টা উইকেট নিয়েছিল। হোটেলে আমি আর লক্ষ্মী (লক্ষ্মীরতন শুক্ল) রুমমেট ছিলাম। উল্টো দিকের ঘরে ছিল দাদি। রাতে দরজায় টোকা পড়ল। বাইরে থেকে দাদির কণ্ঠস্বর, ‘কীরে তোদের বাথরুমে জল আছে?’ আমরা বললাম, আছে। দাদি বলল, দরজা খোলা রাখ। দরকার পড়লে আসব। পরে দেবাঙ্গকে (গাঁধী) ডেকে নিয়ে ঘরে গিয়েছিল। পরে শুনেছিলাম, দাদির ঘরের বাথরুমেও জল ছিল। তবে ভূতের ভয় পেত। রাতে একা ঘরে শুতে পারত না। তাই কাউকে না কাউকে ডেকে নিত।‘
তুমি ঝোল খাও, আমি চিকেন খাই
সৌরভের বাল্যবন্ধু বলা চলে সঞ্জয় দাসকে। বাইশ গজে বহু ম্যাচে ছিলেন সহযোদ্ধা। এখনও সৌরভের ছায়াসঙ্গী সঞ্জয়। বলছিলেন, ‘৩৩ বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সৌরভকে আমি ভাই বলে ডাকি। ১৯৮৭ সাল। ভাইয়ের সঙ্গে লন্ডনে গিয়েছিলাম স্কুল ক্রিকেট খেলতে। প্রায় একমাস ছিলাম। সেই সময়ই ভাইয়ের জন্মদিন ছিল। আমাদের সঙ্গে বেশি টাকা পয়সা থাকত না। ৮ জুলাই ওর জন্মদিন সেলিব্রেট করার জন্য লন্ডনে এক বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলাম। ৩টে নান কিনে ভাগ করে দেড়খানা করে খেয়েছিলাম। তারপর এক প্লেট চিকেন কারি নিয়েছিলাম। দাম ছিল পাঁচ পাউন্ড। তখনকার দিনে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২৫ টাকা। তখন সেটাই বিরাট বড় ব্যাপার। কোনওরকমে বিল মিটিয়েছিলাম। ভাই বলেছিল, আমার জন্মদিন। আমি চিকেনটা খাই। তুমি ঝোলটা খাও! ভীষণ মজা হয়েছিল। ওর জন্মদিনে এরকম সেলিব্রেশন আর কখনও হয়নি।‘
৩ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে এসে ৪৫ মিনিট জিম
বাংলার হয়ে, পরে জাতীয় দলেও সৌরভের সঙ্গে খেলেছেন দেবাঙ্গ গাঁধী। এখন তিনি বিরাট কোহলিদের সিনিয়র দলের অন্যতম নির্বাচক। মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন ‘২০১৮ সালের ঘটনা। আমি জাতীয় নির্বাচক হিসাবে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম। মহারাজ ধারাভাষ্য দিচ্ছিল। লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিন আমাকে ফোন করে বলল, কমেন্ট্রি বক্সে আয়। আড্ডা দিই। সেখানে যাওয়ার পর বলল, চল নীচে গিয়ে স্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখি। লর্ডসে অনেক খেলেছি। স্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখি। ও এমসিসি-র সদস্য। চাইলেই নির্ধারিত বক্সে বসে খেলা দেখতে পারত। তা না করে কোহলিদের ম্য়াচ দেখল সাধারণ দর্শকের মতো।‘ দেবাঙ্গ যোগ করলেন, ‘গত বছর ওয়ান ডে বিশ্বকাপে তখন আমরা নটিংহ্যামে। বৃষ্টিতে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল। ম্যাচের আগের দিন ফোন করে মহারাজ বলল, আমি লন্ডন থেকে আসছি। তোর হোটেলে জিম করব। তিন ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে এসে ৪৫ মিনিট জিমে শরীরচর্চা করল। তারপর ডিনার। অকল্পনীয় এই নিষ্ঠা। খেলা ছাড়ার পর এটা সাধারণত দেখা যায় না।‘
টেনিস বলে অক্লান্ত নকিং
ঘরোয়া ক্রিকেট হোক বা আন্তর্জাতিক মঞ্চ, আইপিএল – সৌরভের সঙ্গে খেলেছেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল। কাটিয়েছেন অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত। এবিপি আনন্দকে রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘দাদির কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ছে একটা ঘটনা। গ্রেগ চ্যাপেলের জমানায় তখন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছে। ইডেনের ক্লাব হাউসের সামনের কংক্রিটে আমি, প্যাটশি (সৌরাশিসের ডাকনাম)-রা টেনিস বলে থ্রো ডাউন করতাম। দাদি অক্লান্তভাবে নকিং করত।‘ আরও বললেন, ‘দ্বিতীয় আইপিএলে যখন জন বুকানন কলকাতা নাইট রাইডার্সে মাল্টিপল ক্যাপ্টেন্সি তত্ত্ব চালু করলেন, বাদ গেল। তারপর দারুণভাবে প্রত্যাবর্তন ঘটাল। তরুণদের কাছে দৃষ্টান্ত ওর লড়াই আর সাফল্যের এই জেদ।‘
মাঠের ভিতরে এক, বাইরে আরেক
বাংলা দলের সৌরভের সহযোদ্ধা রণদেব বসু। সিএবি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রণদেবকে বাংলা দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রণদেব বললেন, ‘মহারাজদার একটা অদ্ভুত ব্যাপার ছিল। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলতে একদিন আগে যেত। তাতেও প্রস্তুতি নিয়ে খামতি রাখত না। ম্যাচের দিন সকালেও মনে হত ক্যাজুয়াল। ক্লান্ত। যেন ঘুমের ঘোর কাটেনি। তবে মাঠে ঢুকে ওয়ার্ম আপ শুরু করলেই অলৌকিক পরিবর্তন হয়ে যেত। বাংলার হয়েও সেরাটা দিয়েছে। ওই মাপের ক্রিকেটারের ঘরোয়া ক্রিকেটেও কী দারুণ মোটিভেশন! অবিশ্বাস্য। হরিয়ানার সঙ্গে সেঞ্চুরি, মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে অবনমন বাঁচানোর ম্যাচে সেঞ্চুরি। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রঞ্জি ফাইনালে লড়াকু ইনিংস। একটা কাউকে সঙ্গে পেলে সেই ম্যাচ হয়তো জিতিয়েই দিত। কত কী যে মনে পড়ছে। মাঠে নামলেই শরীরী ভাষা বদলে যেত। গোটা দলকে চাঙ্গা করে দিত। অসাধারণ পারফর্মার দাদি।‘
খেলার (Sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
হুগলি
জেলার
জেলার
Advertisement