সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ১-১ ড্র করার পরে আশা করা হয়েছিল, প্রথম ম্যাচের ভুলভ্রান্তি শুধরে নিয়ে ভারত হয়তো ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কিন্তু সুনীল ছেত্রীদের পারফরম্যান্সে তেমন লড়াইয়ের প্রবণতা দেখা যায়নি। ১০, ৪৯ ও ৭১ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে জেতান ফ্যান ভান ডুক, ভ্যান তোয়ান ও ভ্যান কুয়েত। গত ম্যাচের দলে তিনটি পরিবর্তন করে এ দিন প্রথম এগারো নামান ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচ। নরেন্দর, রোশন ও কোলাসোকে বাইরে রেখে সন্দেশ ঝিঙ্গান, চিঙলেনসানা সিংহ ও উদান্ত সিংহকে প্রথম দলে আনেন তিনি। তবে তাঁরা দলকে সাফল্যের রাস্তায় ফেরাতে পারেননি।
আশঙ্কাই সত্যি হল
ভারত শুরুতে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করলেও তাদের কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে উঠতে শুরু করে ভিয়েতনাম। ম্যাচের আগের দিন ভিয়েতনামের বিষাক্ত দূরপাল্লার শট নিয়ে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্টিমাচ। দলের কোচের আশঙ্কায়ই সত্যি হল। ম্যাচের দশ মিনিটের মধ্যেই হো তান তাই প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে এক জোরালো ও নিখুঁত গোলমুখী শট নেন। ভারতীয় গোলকিপার গুরপ্রীত ডানদিকে ঝাঁপ দিয়ে সে যাত্রায় দলকে বাঁচান। তবে পরের মিনিটে দলকে আর রক্ষা করতে পারেননি তিনি। কর্নার থেকে প্রথমে গুরপ্রীত বল উড়িয়ে দিলেও, অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে ফিরতি বলে ফ্যান ভান ডুক শট নেন সোজা গোলে। গুরপ্রীতের হাতে লেগে তাঁর বল গোলে ঢুকে পড়ে (১-০)।
এই গোলের পর থেকেই ম্যাচের রাশ চলে যায় ভিয়েতনামের হাতে। তবে মাঝে মাঝে ভারতও প্রতিআক্রমণে ওঠার চেষ্টা শুরু করে। ২৫ মিনিটে এমনই এক আক্রমণে আকাশ মিশ্রের কাছ থেকে পাস পেয়ে বক্সের বাঁ দিক থেকে কোণাকুনি শট নেন আশিক কুর্নিয়ান। কিন্তু তা দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৩২ মিনিটে বক্সের ডানদিক থেকে গোলে কোণাকুনি শট নেন সহাল আব্দুল সামাদ। কিন্তু তা আটকে দেন ভিয়েতনামের গোলকিপার ড্যাং ভ্যান লাম। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান সহাল। তাঁর জায়গায় নামেন রাহুল কেপি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে বিপক্ষের বক্সের মধ্যে আকাশ মিশ্রর দেওয়া হাওয়ায় ভাসানো ক্রসে হেড করে গোলে বল ঠেলেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তা পোস্টের কয়েক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে চলে যায়।
ভিয়েতনামের ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা সামলে যাচ্ছিলেন সন্দেশ, সানা, গুরপ্রীতরা। ২৮ মিনিটের মাথায় চিঙলেনসানা অসাধারণভাবে নিশ্চিত এক গোলের সুযোগ না রুখে দিলে তান তাইয়ের ক্রস থেকে গোল পেয়ে যেতেন তিয়েন লিন। এ ছাড়াও প্রথমার্ধে একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয় তাদের। দ্বিতীয়ার্ধে ভিয়েতনাম দু’টি পরিবর্তন করে দল নামালেও ভারতীয় দলে আর কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। খেলা শুরুর দু’মিনিটের মধ্যেই প্রায় অবধারিত গোল বাঁচান গুরপ্রীত। পরিবর্ত হিসেবে নামা ভ্যান তোয়ান বল নিয়ে একাই ডান দিক দিয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সে ঢুকে গোলকিপারের বাঁ দিক দিয়ে গোলে বল রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু গুরপ্রীত ঝাঁপিয়ে পড়ে তা বাঁচিয়ে নেন। ভারতের তিন ডিফেন্ডার তাঁকে পিছন থেকে আটকানোর চেষ্টা করলেও তা পারেননি।
দুরন্ত গুরপ্রীত
ভ্যান তোয়ানের গোলমুখী দৌড় থেকে শিক্ষা নিয়ে সাবধান হওয়ার আগেই ফের তিনি হানা দেন ভারতের বক্সে। আনোয়ার আলির মাথার ওপর দিয়ে উড়ে আসা একটি পাস বক্সের সামনে পেয়ে যান ভ্যান। তাঁকে আটকানোর মতো ভারতের কেউই ছিল না তখন। ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় গুরপ্রীতের ডানদিক দিয়ে মাটি ঘেঁষা শটে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি (২-০)। ম্যাচের বয়স ৬০ মিনিট হওয়ার আগেই ভিয়েতনামের কোচ পার্ক হাং সিও আরও দুই পরিবর্ত খেলোয়াড়কে মাঠে নামিয়ে দেন। স্টিমাচের রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে একসঙ্গে তিনজন নামেন ৬৪ মিনিটের মাথায়। রক্ষণে নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠা চিঙলেনসানার জায়গায় নামেন রোশন নাওরেম। উদান্তর জায়গায় নামেন লিস্টন কোলাসো এবং সুনীল ছেত্রীও জায়গা করে দেন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজকে। আক্রমণ ও রক্ষণ— দুই বিভাগকেই কিছুটা তরতাজা করে তোলার জন্য এই পরিবর্তনগুলি করেন ভারতের কোচ।
তবে তাতে কোনও লাভ হয়নি। ৭১ মিনিটের মাথায় ফের ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় ভিয়েতনাম। ডান দিকের উইং থেকে উড়ে আসা ক্রস হেড করে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন সন্দেশ। কিন্তু বল গিয়ে পড়ে ভ্যান কুয়েতের পায়ে। তিনি সোজা গোলে শট নেন (৩-০)। গুরপ্রীত ঝাঁপ দিয়েও আটকাতে পারেননি। তাঁর সামনে সন্দেশও ছিলেন। কিন্তু তিনিও চাপের মুখে নতিস্বীকার করেন। এর পর আরও দু’টি নিশ্চিত গোল বাঁচান গুরপ্রীত। ৭৪ মিনিটে বক্সের মধ্যে সন্দেশের ভুল পাস ছিনিয়ে নিয়ে গোলে শট নেন ভ্যান তোয়ান। এর দু’মিনিট পরেই থান চুংয়ের গোলমুখী ভলি। দু’টিই অনবদ্য দক্ষতায় বাঁচান গুরপ্রীত।
৭৮ মিনিটের মাথায় একটি গোল শোধ করার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে নেন লিস্টন কোলাসো। বাঁ দিক দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে বল নিয়ে উঠে কাট ব্যাক করেন গোল লাইনের দিকে যাওয়া রাহুলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তিনি বলের নাগালই পাননি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে রাহুলের জায়গায় লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে ও আশিকের জায়গায় ইশান পন্ডিতাকে নামানো হয়। কিন্তু তখন ভারতীয় ফুটবলারদের শরীরের ভাষায় হার মেনে নেওয়ার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিংহ (গোল), আনোয়ার আলি, সন্দেশ ঝিঙ্গান, চিঙলেনসানা সিং (রোশন নাওরেম), আকাশ মিশ্র, অনিরুদ্ধ থাপা, জিকসন সিং, আশিক কুর্নিয়ান (ঈশান পন্ডিতা), উদান্ত সিংহ (লিস্টন কোলাসো), সাহাল আব্দুল সামাদ (রাহুল কেপি, লালিনজুয়ালা ছাঙতে), সুনীল ছেত্রী (ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ)।
(তথ্য সৌজন্যে: আইএসএল মিডিয়া)