BAN vs NED Match Highlights: ইডেনে কমলা ঝড়, বাংলাদেশের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে মন জিতল নেদারল্যান্ডস
ODI World Cup: বাংলাদেশ শিবিরে আঁধার নামালেন দুরন্ত ডাচরা। ৮৭ রানে শাকিব আল হাসানদের গুঁড়িয়ে দিল নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে যারা বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটিয়েছিল।
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens) চত্বরে বাংলাদেশের (Ban vs Ned) ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড়। গায়ে বাংলাদেশের জার্সি। মুখে সবুজ-লাল রং। হাতে জাতীয় পতাকা। অনেকে মাথার টুপির ওপর টেডি টাইগার বসিয়ে নিয়েছেন। আর সম্মিলিত কণ্ঠে একটাই বাক্য ঘোরাফেরা করছিল। 'কলকাতা আমাদের সেকেন্ড হোম। এখান থেকে পরপর ২ ম্যাচ জিতেই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু করব আমরা।'
ঘুরে দাঁড়ানো দূর অস্ত। পাকিস্তান ম্যাচ অবধি অপেক্ষাও করতে হল না। তার আগেই বাংলাদেশ শিবিরে আঁধার নামালেন দুরন্ত ডাচরা। ৮৭ রানে শাকিব আল হাসানদের গুঁড়িয়ে দিল নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে যারা বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটিয়েছিল। শনিবার হারিয়ে দিল বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে ওপার বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নকেও ধ্বংস করে দিল নেদারল্যান্ডস।
ম্যাচের আগের দিন ইডেন গার্ডেন্সের চার তলার কনফারেন্স রুমে বসে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস বলেছিলেন, 'আমাদের লক্ষ্যই ছিল, টুর্নামেন্টের প্রথম ৮ ম্য়াচের মধ্যে ৪টিতে জিতব। এবং সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে থাকব। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো ছিল সেই লক্ষ্যেরই একটি ধাপমাত্র। আমরা এখনও নিজেদের সেরা খেলাটা খেলিনি।' যা শুনে অনেকের মনে হয়েছিল, একটু কি বেশিই আত্মবিশ্বাসী ডাচ অধিনায়ক?
কিন্তু তিনি যে কথার কথা বলেননি, নিজেদের দক্ষতার ওপর আস্থাই ব্যক্ত করেছিলেন, তা মাঠের পারফরম্যান্সে প্রমাণ করে দিলেন এডওয়ার্ডস। ব্যাট করতে নেমে তখনও তিনি রানের খাতা খোলেননি, মুস্তাফিজুর রহমানের বলে গালিতে এডওয়ার্ডসের ক্যাচ ফেলেন লিটন দাস। সেই এডওয়ার্ডসই নেদারল্যান্ডসের সর্বোচ্চ স্কোরার। ৬৮ রান করে তিনিই নিশ্চিত করে দেন যে, লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছবে দল।
নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক ম্যাচের আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিংবদন্তি ডাচ ফুটবলার য়োহান ক্রুয়েফের আদর্শ অনুসরণ করে তাঁরাও টোটাল ক্রিকেট খেলবেন। শনিবার ইডেনের বাইশ গজে ম্যাচের প্রথমার্ধেই লড়াইয়ের অঙ্গীকার দেখা গিয়েছিল ডাচদের ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুই ওপেনার ব্যর্থ। কাঁধের চোটে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আগের দুটি ম্যাচ খেলতে পারেননি তাস্কিন আমেদ। শুক্রবার জানিয়েছিলেন, এখনও ব্যথা রয়েছে। আর তা নিয়েই নিজের প্রথম ওভারে বিক্রমজিৎ সিংহকে তুলে নেন। অপর ওপেনার ম্যাক্স ডি'উডকে তুলে নেন শোরিফুল ইসলাম। ২.২ ওভারে ৪/২ হয়ে যাওয়া দলের হয়ে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ওয়েসলি বারেসি। তিন নম্বরে নেমে ৪১ বলে ৪১ রান করেন তিনি। তবে মাত্র ৬ বলের ব্যবধানে বারেসি ও অ্যাকারম্যান আউট হওয়ার পর ১৪.৪ ওভারে ৬৩/৪ হয়ে যায় নেদারল্যান্ডস।
এরপর ডাচ শিবিরকে বিপন্মুক্ত করেন অধিনায়ক। ৮৯ বলে ৬৮ রান করেন এডওয়ার্ডস। শেষ দিকে চালিয়ে খেলে লোগান ফান বিক ১৬ বলে ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৫০ ওভারে ২২৯ রানে অল আউট হয় নেদারল্যান্ডস। দুটি করে উইকেট শোরিফুল, তাস্কিন, মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসানের।
তখনও মনে হয়েছিল যে, সহজেই লক্ষ্যপূরণ করবে বাংলাদেশ। কিন্তু অন্যরকম কিছু ভেবেছিলেন ডাচ ক্রিকেটারেরা। লিটন দাসকে (৩ রান) ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেন আরিয়ান দত্ত। অপর ওপেনার তানজিদ হাসানকে (১৫) তুলে নেন লোগান ফান বিক। ৫.২ ওভারে ১৯/২ হয়ে যায় বাংলাদেশ।
তারপর থেকে শুধুই পল ফান মিকেরেন। ৭.২ ওভারে ২৩ রান দিয়ে যিনি নিলেন ৪ উইকেট। শিকারের তালিকা? নাজমুল হাসান শান্ত (৯), শাকিব আল হাসান (৫), মুশফিকুর রহিম (১) ও তাস্কিন আমেদ (১১)। বাংলাদেশ ব্যাটিংকে গুঁড়িয়ে দেন কার্যত। ৪২.২ ওভারে মাত্র ১৪২ রানে শেষ হয় বাংলাদেশ। ম্যাচ হারে ৮৭ রানে। ম্যাচের সেরার স্বীকৃতি মিকেরেনকে ছাড়া আর কাউকে দেওয়া সম্ভব ছিল না।
শনিবার কোজাগরী পূর্ণিমা। বাংলার ঘরে ঘরে ধনদেবীর আরাধনা। সমৃদ্ধির প্রার্থনা। আর সেই দিনই ম্যাচ হেরে শ্রী হারাল বাংলাদেশের ক্রিকেট। পূর্ণিমার রাতেও শাকিব আল হাসানদের ঘিরে ধরল নিকষ কালো আঁধার।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন