Bardhaman News: মান্না দে-ও মুগ্ধ ছিলেন তাঁর গানে, মঞ্চ মাতিয়েছেন এক সময়, এখন বর্ধমানে চায়ের দোকান চালান পূজা
Puja Bhowmik: বর্ধমানের শ্যামলালের বাসিন্দা পূজা। ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ তাঁর।
কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান: স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু তার বাস্তবায়ন কঠিন। তাই একটা সময় পর স্বপ্নের দুনিয়া ছেড়ে, বাস্তবের মাটিতে নেমে আসি আমরা সকলেই। জীবনের সঙ্গে আপস করতে শিখে যাই। বর্ধমানের পূজা ভৌমিকও ব্যতিক্রম নন। এক সময় তাঁর সুরের জাদু মুগ্ধ করেছিল প্রবাদপ্রতিম শিল্পী মান্না দে-কে। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে এখন চায়ের দোকান চালাতে হচ্ছে সেই পূজাকে। গ্যাস ওভেনের সামনে চা ফুটিয়েই দিন কেটে যায় তাঁর। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির জেরে ঢাকা পড়ে গিয়েছে তাঁর শিল্পীসত্তা। (Bardhaman News)
বর্ধমানের শ্যামলালের বাসিন্দা পূজা। ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ তাঁর। বিশেষ করে বাংলা গান। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান সবচেয়ে প্রিয়। পূজার নিজের গলাতেও কার্যত সরস্বতী বিরাজ করছে। যেমন গলা, তেমনই সুরের জ্ঞান। একসময় পূজার গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলন মান্না দে। বিভিন্ন জায়গায় স্বামীর সঙ্গে চুটিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন একসময়। বর্ধমানের বাইরের জেলাগুলিই নয়, দিল্লিতেও অনুষ্ঠান করে এসেছেন। হৈমন্তী শুক্লা, মান্না দে-র সঙ্গে এক মঞ্চে অবনুষ্ঠানের সুযোগ হয়েছে। (Puja Bhowmik)
কিন্তু পূজার জীবনে সেই সবকিছুই এখন অতীত। সংসারের হাল ধরতে চায়ের দোকান দিয়েছেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে মিলে সেই দোকান চালিয়েই এখন দিন গুজরান হয় তাঁর। পূজা জানিয়েছেন, সেই ২০১১ সালে শেষ বার অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। সেবার কাঞ্চন উৎসবে গিয়েছিলেন। তার পর থেকে আর মঞ্চে ফেরা হয়নি। চায়ের দোকানকে ঘিরেই এখন আবর্তিত হচ্ছে তাঁর জীবন। একটি দুর্ঘটনাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পূজা।
পূজা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর আগে মোটর সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তাঁর স্বামী। গুরুতর আহত হন তিনি। সংসারে নেমে আসে অভাবের ছায়া। তাই নিজের ভাললাগাকে প্রাধান্য দেওয়ার চেয়ে, সংসারের হাল ধরাই যুক্তিযুক্ত মনে হয় তাঁর। সেই মতো বর্ধমানে নার্স কোয়ার্টার মড়ে স্বামীর সঙ্গে মিলে চায়ের দোকান শুরু করেন। শীতের মরশুমে বিভিন্ন স্বাদের চা, কফি বিক্রি করেন। গ্রীষ্মকালে আবার লস্যিও বিক্রি করেন দোকানে।
কিন্তু মঞ্চে ওঠার অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। না এড়াতে পারেন নিজের শিল্পীসত্তাকে। কাজের ফাঁকেই তাই গুনগুন করতে থাকেন পূজা। হাতে সময় কম। তার মধ্যেও রেওয়াজ চালিয়ে যাচ্ছেন আজও। চায়ের দোকান চালাতে হলেও, গানই তাঁর জীবন বলে জানিয়েছেন পূজা। জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে আবারও মঞ্চে ফিরতে চান। কিন্তু তাঁর হাতের চা-কফি চেখে দেখতে আসা মানুষজনের অনেকেই শুধু পূজাকে চেনেন, শিল্পী পূজাকে চেনেন না। হাতেগোনা যে কয়টি মানুষ জানেন, তাঁরাও চান পূজা মঞ্চে ফিরুন। চা-কফি বানিয়ে নয়, গানে গানে মন জয় করুন সকলের। আশা দিন গুনছেন পূজাও।