Belgharia Teacher Beaten: বেলঘরিয়ায় মদ্যপানের প্রতিবাদ, রক্তাক্ত শিক্ষক! উল্টে টিচারের নামেই 'কটূক্তির অভিযোগ', নিমতা থেকে গ্রেফতার তরুণী-সহ ৪
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা প্রত্য়েকেই এলাকায় বহিরাগত। তারা নিমতা থেকে নন্দননগরে এসে মদের আসর বসিয়েছিল

সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: ঝিলপাড়ে বসেছিল মদের আসর। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক শিক্ষক। একদল বহিরাগত তরুণ-তরুণীর এহেন কাজ মোটেও ভাল লাগেনি শিক্ষকের। তাই প্রতিবাদ করেন। তবে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত হয়ে সেই প্রতিবাদের মাসুল দিতে হল আঁকার শিক্ষককে।
কৌশিকী অমাবস্যার পুজো সেরে শনিবার সকাল পৌনে ৬টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন। নেতাজিপল্লি A ব্লকে ঝিল পাড়ে বসে জনা আটেক তরুণ ও এক তরুণীকে মদ খেতে দেখে বাইক থামিয়ে এগিয়ে যান তিনি। প্রকাশ্যে মদের ঠেকের প্রতিবাদ করেন। অঙ্কন শিক্ষক ফিরে এসে নিজের বাইকে বসতেই মত্ত যুবকরা তাঁর ওপর চড়াও হন।
প্রকাশ্যে আসা সিসিটিভিতে দেখা যাচ্ছে, একজন ঠাটিয়ে থাপ্পড় মারেন ওই শিক্ষককে। এরপর ওই শিক্ষক কাউকে ফোন করতে গেলে, তাঁর হাতে মেরে মোবাইল ফোনও ফেলে দেয় ওই তরুণ। প্রতিরোধ করতে গিয়ে আক্রান্ত শিক্ষকও হামলাকারী তরুণকে এক চড় কষিয়ে দেন।
এরপর ৫ মত্ত তরুণ একসঙ্গে চড়াও হয়ে ওই অঙ্কন শিক্ষককে মারধর করতে শুরু করে। চলতে থাকে ঘুষি, লাথি, দেওয়ালে ঠেকিয়ে পিছমোড়া করে মার- কিছুই বাদ যায়নি। মত্ত তরুণীও শিক্ষকের চুলের মুঠি ধরে মারতে থাকেন। রাস্তার ওপরেই চলতে থাকে শিক্ষক নিগ্রহের তাণ্ডব।
আক্রান্ত শিক্ষক নিরুপম পাল বলেন, 'পৌনে ৬টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলাম। তখন দেখি, রাস্তার মধ্যে ৭-৮ জন ছেলে আর একটা মেয়ে দিনে, দিনের আলো ফুটে গিয়েছে তখন ড্রিঙ্ক করছে। যথারীতি আমি তাদের বললাম যে, এখন তোমরা কেন ড্রিঙ্ক করছো? ওই কথা বলাতেই, ওরা আমার দিকে তেড়ে আসে এবং আমাকে মারধর শুরু করে। আমাদের নন্দননগর লোকনাথ মন্দিরের সামনে।' আক্রান্ত শিক্ষককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে তাঁর পরিবার।
এরপর নিমতায় মামার বাড়ি থেকে অভিযুক্ত তরুণী মন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত তরুণীর দিদিমা বলেন, 'কালীপুজো বলে বেরিয়েছিল। মদ খাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। লখনউয়ে কাজ করে। কী কাজ করে জানি না। মাঝে মাঝে আসে।'
এদিকে আক্রান্ত শিক্ষকের দাদা রতন পাল বলেন, 'পুলিশ প্রথমে পাত্তাই দিতে চায়নি। এবিপি আনন্দের খবর সম্প্রচারের পরে পুলিশ তৎপর হয়েছে।'
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা প্রত্য়েকেই এলাকায় বহিরাগত। তারা নিমতা থেকে নন্দননগরে এসে মদের আসর বসিয়েছিল। ধৃত তরুণীকে জেরা করে বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত মন্দিরা মুখোপাধ্যায় জেরায় দাবি করেছেন, অঙ্কন শিক্ষকই প্রথমে তাঁকে দেখে কটূক্তি করেন। কটূক্তির প্রতিবাদেই তার সঙ্গীরা ওই শিক্ষককে মারধর করেন।
সিপিএম এর রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্র বলেন, 'ক্রিমিনালদের, দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকদের তো সমস্ত ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বাইরের লোকেরা এসে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় নন্দনগরে বসে মদ খাবে আর কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে এরকম বেধড়ক মারধর করা হবে, প্রশাসনটা কোথায়? পুলিশ কোথায়?'
এদিকে, কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, 'আমরা চাইব প্রশাসন কোনও রকম ভাবে প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে যেভাবে তদন্ত করছেন করুন। আমাদের সমস্ত রকম সহযোগিতা থাকবে। এই যে সবাই ভাবছেন, এখানে কোনও অভিভাবক নেই, সেটা প্রয়োজনে আমরা বুঝিয়ে দেব, অভিভাবক আছে।'






















