Durga Puja Special : 'হোমকুণ্ডতে আত্মগোপন করেছিলেন মা তারা ' দেখুড়িয়ার রায়বাড়ির পুজো ঘিরে নানা গল্প
কথিত আছে, বর্গী হামলার সময় মা তারা সেই কুণ্ডতেই আত্মগোপন করেছিলেন। আজও চতুর্দশী তিথিতে সকালে ঘট স্থাপন করে , ছাগ বলি এবং শুধুমাত্র কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে মা তারার পুজো করা হয় রায় পরিবারে।
গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম : রায়বাড়ির পাঁচঘড়ার পুজো (Durga Puja)। দেখুড়িয়া গ্রামের এই পুজো জেলায় যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। তখনও দেশভাগ হয়নি। বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজশাহী জেলার দুবলহাটিতে রমরমিয়ে শুরু হল দুর্গাপুজো। সেই পুজোর সূচনা কে করেছিলেন তা সঠিক জানা নেই বর্তমান পুজো উদ্যোক্তাদের। তবে ইতিহাস ও লোকমুখে প্রচলিত কথা থেকে যেটুকু জানা যায়, তা হল, সে সময় জমিদারীর দেখাশোনা করতেন রায় পরিবার। পরবর্তীকালে তাদেরকেই পুজোর দায়িত্ব দেন তৎকালীন জমিদার। সেই পুজো আজও নিষ্ঠার সঙ্গে হয়ে আসছে বীরভূমের রামপুরহাট থানার দেখুড়িয়া গ্রামে।
রাজশাহীর দেবী বীরভূমের (Birbhum) লালমাটিতে এলেন কীভাবে? আনুমানিক সাতশো বছর আগের কথা। জানা যায়, অবিভক্ত বাংলায় রাজশাহী জেলায় জমিদারী তালুক দেখাশোনা করতেন রায় পরিবার। এলাকায় বিরাট প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল ওই পরিবারের। সেই সময় দুবলহাটিতে পুজো শুরু করেন বাংলাদেশের রাজশাহীর জমিদার। অর্ধশতাব্দী সেখানেই পুজো চলে ধুমধামের সঙ্গে। বাংলা ভাগের পর পশ্চিমবাংলার জমিদারী সামলাতে বীরভূমের দেখুড়িয়া গ্রামে পাঠানো হয় রায় পরিবারকে। সেই সঙ্গে পাঠানো হয় মা দুর্গার পট। সেই থেকেই আজও দেবীর পুজো হয়ে আসছে দেখুড়িয়া রায় পরিবারে।
আরও পড়ুন : পুজোয় পোলাও দিয়ে হোক মিষ্টিমুখ, অভিনব ডেজার্টের রেসিপি দিলেন অপরাজিতা আঢ্য
বর্তমানে এলাকার মানুষ পুজোকে রায়বাড়ির পাঁচঘড়ার পুজো বলেই জানেন। এক সময় পুজোর জন্য রুপোর মুদ্রা পাঠানো হত রায় পরিবারকে। তবে অনেক বছরই হল, সেই রৌপ্যমুদ্রা আর আসে না। তাতেও পুজোয় কোনও খামতি নেই। এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে আসছেন রায় পরিবারের সদস্যরা। অপূর্ব কুমার রায় বলেন, “ রায় পরিবারের এই পুজো শুধু গ্রাম নয় তল্লাটের প্রাচীন পুজো বলে গণ্য হয়। কারণ এই পুজোর সঙ্গে মা তারার ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। কথিত আছে, পুজো শুরুর সময় থেকে একটি হোম কুণ্ড জ্বালানো হত। বর্গী হামলার সময় মা তারা সেই কুণ্ডতেই আত্মগোপন করেছিলেন। ফলে সেই দিনটিকে স্মরণ করে আজও চতুর্দশী তিথিতে সকালে ঘট স্থাপন করে , ছাগ বলি এবং শুধুমাত্র কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে মা তারার পুজো করা হয় রায় পরিবারে। কোন ঢাক-ঢোল থাকে না। পুজোর পাশাপাশি সারাদিন ধরে চলে মায়ের ভোগ রান্না। সন্ধ্যায় সেই ভোগ প্রথমে মা কে নিবেদন করে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
“মা দুর্গা এখানে চতুর্ভুজা দেব সিংহবাহিনী। শাক্ত মতে মায়ের পুজো হয়। ষষ্ঠীর দিন চালকুমড়ো বলি দিয়ে পুজো শুরু করা হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত তিনদিন ছাগ বলি দেওয়া হয়। রায় পরিবারে অষ্টধাতুর দুর্গা মন্দির এবং শালগ্রামের নারায়ণ মূর্তি রয়েছে। ওই দুই মূর্তির পুজো সেরে শুরু হয় মা দুর্গার পুজো।