Abhishek Banerjee: তরতাজা যুবকের শরীরে ১৮০ গুলির টুকরো! BSF ‘উপদ্রব’ নিয়ে সরব অভিষেক, চোখের জল মুছিয়ে দিলেন মায়ের
Cooch Behar News: শনিবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় সভা করেন অভিষেক। সেখানে নিহত যুবকের মা, বাবা এবং দাদাও উপস্থিত ছিলেন।
মাথাভাঙা: সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Elections 2023)। তার আগে মাথাভাঙায় জনসভা (Cooch Behar News)। কিন্তু ভোটের প্রসঙ্গ সরিয়ে রেখে, সেখানে বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের (BJP) বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। ডিসেম্বর মাসে সেখানে বিএসএফ-এর (BSF Firing) গুলিতে এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্য়ু হয়েছিল। সেই দিকেই এ দিন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন অভিষেক। জানালেন, গরু, সোনা পাচার করছিলেন না ওই যুবক। সকাল সকাল মাঠে গিয়েছিলেন। সেখানে দু'হাত দূর থেকে গুলি করে তাঁকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে বিএসএফ। একটি বা দু'টি নয়, ওই যুবকের শরীরে মোট ১৮০টি গুলি পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে ছররা বন্দুকের গুলিও ছিল বলে এ দিন জানালেন অভিষেক।
ডিসেম্বর মাসে বিএসএফ-এর গুলি পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্য়ু হয়
শনিবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় সভা করেন অভিষেক। সেখানে নিহত যুবকের মা, বাবা এবং দাদাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মঞ্চে তুলে আনেন অভিষেক। কান্নায় ভেঙে পড়া সুখমমী বর্মন, নিহত যুবকের মায়ে কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন ছুড়ে দেন অভিষেক, "এঁকে দেখে কি মনে হয়, এঁর গর্ভে জঙ্গি জন্মাতে পারে!" পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ওই যুবককে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। এ নিয়ে বিজেপি-কে জবাব দিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন অভিষেক। ওই যুবকের ময়নাতদন্তের রিপোর্টও এ দিন প্রকাশ্য সভায় তুলে ধরেন তিনি।
এ দিনের ওই সভায় অভিষেক বলেন, "দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের গীতলদহ এলাকার ভারবাঁধা গ্রামে এক যুবক, প্রেমকুমার বর্মন, বয়স ২৩-২৪। বেঙ্গালুরুতে কাজ করত। চার বছর পর বাড়ি ফিরেছিল। গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে মাঠে গিয়েছিল। সেখানে দু'হাত দূর থেকে বিএসএফ জওয়ানরা তাকে গুলি করে মেরেছে। বিএসএফ-এর উপদ্রবের কথা সকলেি জানেন। এটা বলছি কারণ, এই রাজবংশী, তরতাজা যুবককে যে উচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করা হল, তা নিয়ে রাজবংশীদের প্রতি দরদ দেখানো ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁর ডেপুটি, এখানকার বিজেপি সাংসদকে প্রশ্ন করতে চাই, প্রেমকুমার কি জঙ্গি ছিল? কী ছিল তার অপরাধ, সে রাজবংশী? সকাল ৭টায় মাঠে তার কাছ থেকে বোমা-বন্দুক পাওয়া গিয়েছিল, নাকি যুদ্ধ করতে গিয়েছিল সে, গরুপাচার করছিল নাকি সোনা মিলেলেছিল? বিএসএফ-এর নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকা অমিত শাহ, কোচবিহারের লজ্জা নিশীথ প্রামাণিককে প্রশ্ন করছি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম, অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।"
এর পরই প্রেমকুমারের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মেলে ধরেন অভিষেক। বলেন, "প্রেমকুমারের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে হতবাক হয়ে যাই আমি। ২৩ বছরের তরতাজা যুবকের শরীর থেকে ক'টি গুলি পাওয়া গিয়েছিল জানেন! ছররা বন্দুকও চালানো হয়, যা কাশ্মীরে চালায় সেনা। নৃশংস ভাবে বাচ্চা ছেলেটিকে হত্যা করা হয়েছে। গরুপাচারকারী হলেও তাকে হেফাজতে নাও, গ্রেফতাক করো, লাঠিপেটা করো, অন্য় ব্যবস্থা নাও! কিন্তু প্রেমকুমারকে মারার সময় কি গরু, সোনা বা বোমা-পিস্তল মিলেছিল? না। তাহলে কেন মারলে! এর শেষ দেখে ছাড়ব আমি। প্রয়োজনে হাউকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাব। কারণ ওই তরতাজা ছেলেটির শরীর থেকে ১৮০টি গুলির টুকরো পাওয়া গিয়েছে। তরতাজা যুবক। পায়ের উপরের অংশে এমন ভাবে মেরেছে যে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গিয়েছে। সাধারণত পায়ে গুলি লাগলে প্রাণ যায় না। এক বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করায় জানালেন, কখনও এমন ঘটনা দেখেননি তিনি। রক্তক্ষরণের জন্য শরীরে একবিন্দু রক্ত ছিল না প্রেনকুমারের। তাতেই মৃত্যু হয়।"
অভিষেক জানান, প্রেমকুমারের বাবা শিবেন বর্মনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। নড়াচড়া করতে সমস্যা হয় তাঁর। ছেলে বেঙ্গালুরুতে মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিল। সেই ছেলেকে নৃশংস ভাবে হত্যা করল বিএসএফ। তার পর এক বারও বিএসএফ বা বিজেপি নেতাদের কেউ বাড়ি গিয়ে পরিবারের খোঁজও নেয়নি বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। এইটুকু বিবেকবোধ বা মনুষ্যত্ব বিজেপি-র নেই বলে দাবি করেন। এ দিন অভিষেকের সভায় কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রেমকুমারের মা। আগাগোড়া তাঁর কাঁধে হাত ছিল অভিষেকের। অভিষেক মুছিয়ে দেন তাঁর চোখের জলও। আশ্বস্ত করেন, এর শেষ দেখে ছাড়বেন তিনি।
২৪ ডিসেম্বরের ওই ঘটনায় এর আগে উত্তাল হয় পরিস্থিতি
২৪ ডিসেম্বরের ওই ঘটনায় এর আগে উত্তাল হয় পরিস্থিতি। পরিবারের দাবি, বেঙ্গালুরুতে শ্রমিকের কাজ করতেন প্রেমকুমার। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। দিন দুয়েক পর ফের রওনা দেওয়ার কথা ছিল। তার আগে, তামাক চাষের জমিতে কাজ দেখতে বেরিয়েছিলেন। সন্দেহবশতই তাঁকে গুলি করে বিএসএফ। বিএসএফ-এর ছোড়া গুলি খেয়ে যেখানে লুটিয়ে পড়েন প্রেম, ওই এলাকা ভারত-বাংলাশে সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। ঘটনার পর কোনও গরুও উদ্ধার হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। তাতেই প্রশ্ন ওঠে, গরু পাচার আটকাতে সীমান্ত থেকে এত দূরে কেন গুলি চালাল বিএসএফ! দিনহাটা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল নেতা দীননাথ বর্মন বলেন, “এখানে সন্ধের পর বিএসএফ-এর ভয়ে মানুষ বাইরে বেরোতে পারেন না।” এ দিন সেই ঘটনায় কেন্দ্রেক কাঠগড়ায় তুললেন অভিষেক। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় প্রেমকুমার পাচারে যুক্ত ছিলেন, কাশ্নীরে জঙ্গি মারার বন্দুক দিয়ে কেন মারা হল, প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাবেন তিনি, যা করার করবেন বলে জানান অভিষেক। প্রেমকুমারের দাদাকে নিজের ফোন নম্বরও দেন অভিষেক। যখন, যা প্রয়োজন হবে জানাতে বলেন। অঝোর ধারায় কেঁদে চলা প্রেমকুমারের মাকে শান্ত করেন, চোখের জল মুছিয়ে দেন পকেট থেকে রুমাল বের করে।