Sukanta Majumdar: রাজ্যপালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ সুকান্তর, 'শুভেন্দুর জন্য হাতজোড় করে ক্ষমাপ্রার্থনা'!
CV Ananda Bose: শনিবার সকালে রাজভবনে যান সুকান্ত। সেখান থেকে বেরিয়ে মুখোমুখি হন সংবাদমাধ্যমের।
কলকাতা: বিধানসভার মধ্যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তাঁকে গো ব্যাক স্লোগানও। প্রকাশ্যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ (CV Ananda Bose)। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যে রাজভবনে গেলেন রাজ্য বিজেপি-র (BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। সেখানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে প্রায় দু'ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। একান্ত বৈঠকে দুর্নীতি এবং হিংসার কথা উঠে এসেছে বলে দাবি সুকান্তর। যদিও তৃণমূলের (TMC) দাবি, শুভেন্দুর হয়ে রাজ্যপালের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলেন সুকান্ত।
রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ সুকান্তর
শনিবার সকালে রাজভবনে যান সুকান্ত (Raj Bhavan)। সেখান থেকে বেরিয়ে মুখোমুখি হন সংবাদমাধ্যমের। জানান, দুর্নীতিমুক্ত, হিংসামুক্ত রাজনীতির পক্ষে রাজ্যপাল। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন রাজ্যপাল। শুধু তাই নয়, পূর্বসূরি লা গণেশনের তৈরি লোকাযুক্ত ভেঙে দিতে বিধানসভায় অর্ডিন্যান্স আনার কথাও রাজ্যপাল বলেছেন বলে দাবি করেন সুকান্ত। তাঁর কথায়, "সংবিধান সমস্ত কিছুর উপরে বলে আশ্বস্ত করেছেন রাজ্যপাল। পরিষ্কার বলেছেন, বাংলার বেশ কিছু জায়গায় রাজ্য সরকারের তরফে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, আগের রাজ্যপাল লা গণেশনের সময় যে লোকাযুক্ত গঠিত হয়, তা সংবিধানের নিয়ম মেনে হয়নি। তা বাতিল করতে বিধানসভার আগামী অধিবেশনে অর্ডিন্যান্স আনার কথা বলেছেন রাজ্যপাল।"
সুকান্ত আরও বলেন, "বাংলার রাজনীতিকে রাজ্যপাল দুর্নীতি এবং হিংসামুক্ত করার পক্ষে। দুর্নীতিতে যুক্ত কেউ রেহাই পাবেন না বলে জানিয়েছেন। আইনি পথে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলার রাজনীতিতে বার বার হিংসা ঢুকে পড়ছে, যা অভিপ্রেত নয় হলে জানিয়েছেব। উনি চাইছেন বাংলায় দুর্নীতি এবং হিংসামুক্ত রাজনীতি তৈরি হোক।"
রাজভবনের বাইরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি রাজ্য সভাপতি @drsukantabjp https://t.co/lWsqCceCIE
— BJP Bengal (@BJP4Bengal) February 11, 2023
আরও পড়ুন: Amartya Sen: জমি বিতর্কে পত্রাঘাত বিশ্বভারতীর, সরাসরি মিউটেশনের আবেদন জানিয়ে জবাব অমর্ত্যর!
কিন্তু রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতে যে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করছেন সুকান্ত, আসলে তার উল্টোটা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তাঁর বক্তব্য, "আসলে আমাদের কাছে খবর আছে যে, রাজ্যপালের কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলেন সুকান্ত। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিধানসায় যে ভাবে অসভ্যতা হয়েছে, রাজ্যপালকে লক্ষ্য করে হায় হায়, গো ব্যাক স্লোগান উঠেছে, তাতে অসন্তুষ্ট ছিলেন রাজ্যপাল। দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স বলছেন তো! সিবিআই-এর এফআইআর-এ নাম থাকা, ঘোষিত তোলাবাজ শুভেন্দুর নেতৃত্বে যে অসভ্যতা হয়েছে, তাতে মর্মাহত রাজ্যপাল। তাই ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলেন সুকান্ত। তাই শুভেন্দুকে নিয়ে যাননি। ভয়ে রাজভবনে ঢুকছেন না তিনি।"
কুণাল আরও বলেন, "শুভেন্দুর হয়ে মধ্যস্থতা করতে গিয়েছিলেন। শুভেন্দু যে ঠিক করেননি, পরিষদীয় দল যা করেছে, রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি তা সমর্থন করছেন না। তাই হাতজোড় করে সুকান্ত ক্ষমা চেয়েছেন বলে রাজভবন সূত্রে আমরা খবর পাচ্ছি। উনি আসলে বলেছেন, 'কিছু মনে করবেন না। আমরা দিল্লিতে ছিলাম+শুভেন্দুর নেতৃত্বে অসভ্যতা করেছে পরিষদীয় দল। দয়া করে কিছু মনে করবেন না আপনি।' আসল ঘটনা এটাই। সেটা ধামাচাপা দিতে রাজ্যপালের জনসংযোগ আধিকারিক সেজে কথা বলছেন।"
শুধু তাই নয়, যে লোকাযুক্ত বাতিলের কথা বলেছেন সুকান্ত, তা নিয়ে কুণাল জানান, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন, বিবৃতি প্রকাশের অবকাশ রয়েছে তাঁর, সংবাদমাধ্যমেও কথা বলেন। তাঁর কিছু বলার থাকলে সুকান্তকে দিয়ে বলানোর প্রয়োজন নেই। কুণাল জানান, রাজ্যপালের সচিব স্বয়ং আইএএস নন্দিনী চক্রবর্তী। সুকান্ত তাঁর জনসংযোগ আধিকারিক নন। আসল বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই অন্য কথা বলে নজর ঘোরাচ্ছেন সুকান্ত।
গত বছরের শেষ দিকে বাংলার দায়িত্ব পান প্রাক্তন আমলা আনন্দ। কিন্তু তাঁর পূর্বসূরি জগদীপ ধনকড়ের পথে না হেঁটে, এ যাবৎ বাংলার তৃণমূল সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কই বজায় রাখতে দেখা গিয়েছে তাকে। প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও মিষ্টির হাঁড়ি পাঠিয়েছেন তাঁকে। বাংলা শিখতে আগ্রহী আনন্দের জন্য সরস্বতী পুজোয় প্রতীকী হাতেখড়ির বন্দোবস্তও করা হয়। ধনকড়ের আমলে রাজভবনে বিজেপি নেতাদের আনাগোনা যেমন লেগে থাকত, বর্তমান রাজ্যপালের আমলে সেই দৃশ্য একবারও চোখে পড়েনি।
শুভেন্দুর জন্য চাইতে গিয়েছিলেন সুকান্ত! দাবি তৃণমূলের
তাতেই আনন্দের বিরুদ্ধে বঙ্গ বিজেপি-র নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ বলে শোনা যায়। সম্প্রতি বিধানসভার অধিবেশনেও তার ইঙ্গিত মেলে। রাজ্যপালের ভাষণ ঘিরে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। বিজেপি বিধায়করা প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সেই নিয়ে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। তার মধ্যেই এ দিন রাজভবনে গেলেন সুকান্ত। তাঁর দাবি, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও রাজভবনের সূত্রকে উদ্ধৃত করে অন্য দাবি করছে তৃণমূল।