Durga Puja 2022: থরে থরে হয় সাজানো বন্দুক, রয়েছে গুলি ছোড়ার রেওয়াজও, বালুরঘাটের চৌধুরী পরিবারের পুজো হয় বৈষ্ণব রীতিতে
Balurghat Family Puja: শূন্যে গুলি ছুড়েই পুজো শুরু হয় চৌধুরীদের।

মুন্না আগরওয়াল, বালুরঘাট: বাংলার মাটি তখন ইংরেজদের দখলে। ঘরে ঘরে মাথাচাড়া দিচ্ছে বিপ্লব। যে যাঁর মতো অস্ত্র সংগ্রহে নেমে পড়েছেন। শুধু ইংরেজ শাসকের মোকাবিলাই নয়, চোর-ডাকাতদের হাত থেকে গ্রামবাসীর নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িয়ে ছিল এর সঙ্গে। পাগলিগঞ্জের বৈদ্যুল গ্রামের চৌধুরীরাই ছিলেন হর্তাকর্তা (Balurghat) । পারিবারিক দুর্গাপুজোয় সেইসব অস্ত্রশস্ত্র জমা রেখে শক্তি এবং সাহস সঞ্চয় করার রীতি ছিল। তার পর ১১২ বছর কেটে গেলেও, এখনও সেই রীতি বজায় রয়েছে চৌধুরীদের পুজোয়। শূন্যে গুলি ছুড়েই সূচনা হয় দেবীবন্দনা (Durga Puja 2022)।
১১২ বছর বয়স চৌধুরীদের দুর্গাপুজোর
দশভুজার আরাধনায় অস্ত্রশস্ত্র কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে ঝেড়ে ফেলতে নারাজ চৌধুরীদের বর্তমান প্রজন্মও। তাই আজও ষষ্ঠীর দিন পুজো শুরু হওয়ার পর থেকে যত বন্দুক রয়ে গিয়েছে, সেই সব এনে সাজিয়ে রাখা হয় প্রতিমার পায়ের কাছে। এমনকি শূন্যে গুলি ছুড়েই শুরু হয় পুজো। তা দেখতে ভিড় করেন আশপাশের গ্রামের মানুষ জনও।
গুলি ছোড়া, প্রতিমার ম্মুখে অস্ত্র রাখার সপক্ষে যুক্তি হল, দুর্গাপুজোয় শক্তি প্রদর্শনের রেওয়াজ ছিল শতবর্ষ আগে। সেই ধারাকেই বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন যদিও জমিদারি নেই, আগের মতো প্রতিপত্তি নেই, কিন্তু পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া প্রথা, ঐতিহ্য বিসর্জন দিতে নারাজ চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা (Dakshin Dinajpur)।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, চৌধুরীদের এই পুজো হয় বৈষ্ণব রীতিতে। চৌধুরী পরিবারের সদস্য, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী জানিয়েছেন, পুজোর ক’দিন অন্ন-ভোগের চল নেই তাঁদের। বরং রয়েছে ফল, লুচি, সবজি খাওয়ার চল। একমাত্র দশমীর দিনই প্রতিমাকে অন্ন-ভোগ নিবেদন করা হয়। পুজোয় যাঁরা উপবাস করেন, দশমীর দিন অন্ন-ভোগ খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন তাঁরা। চৌধুরীদের পুজোয় বলির প্রথাও নেই। তার বদলে পুজোয় কুমড়ো নিবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022 : বর্ধমান রাজবাড়িতে দেবী পূজিতা পটে, গণেশ ছাড়া দৃশ্যমান সকলের এক চোখ
চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো যেমন প্রাচীন, তেমনই এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পুরনো রীতিনীতি। বাড়ির একেবারে কেন্দ্রস্থলেই রয়েছে বিরাট দুর্গা মন্দির। এক সময় এলাকার নামীদামী গায়কদের নিয়ে পালাগানের আসর বসত। পুজোর চারদিন ধরে চলত সেই আসর। এখন অবশ্য সেই সবই অতীত। তবুও আজও পুজোর চারদিন এলাকার বর্তমান পালা গায়করাই চণ্ডীর গান গাইতে জড়ো হন।
বিগত ১১২ বছরে পুজোর জৌলুস কিছুটা কমলেও, ঐতিহ্য এবং পরম্পরা বাঁচিয়ে রেখেছেন পরিবারের বর্তমান সদস্যরা। তবে নিষ্ঠা সহকারেই পুজো সম্পন্ন হয়। শুধু বছরের চার দিন নয়, নিত্যদিন পুজো হয় মন্দিরে। দুর্গাপুজোর সময় বাইরে থেকেও অনেকে বৈদ্যুলের এই চৌধুরী বাড়ির পুজো দেখতে হাজির হন। মহাষ্টমীর অঞ্জলি দিতে ভিড় উপচে পড়ে।দশমীর দিন সূর্য ডোবার সন্ধিক্ষণে কাঁধে করে দেবীকে নিয়ে গিয়ে তাঁর জন্য বরাদ্দ পুকুরে বিসর্জন করা হয়।
বৈষ্ণব রীতিতে পুজো করেন চৌধুরীরা
চৌধুরী পরিবারের অনেক সদস্যই এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। তবে প্রতিবছর পুজোর সময় একছাদের নিচে এসে জড়ো হন সকলে। তাঁদের এই উদ্যোগই ক্লাব-বারোয়ারির জাঁকজমকপূর্ণ পুজোকে ছাপিয়ে যায়। তার জন্যই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ চৌধুরীদের পুজো দেখতে আসেন।






















