পর্ণকুটিরে পুজো শুরুর পর জমিদারি পায় শিট পরিবার, দেবী আরাধনার ট্র্যাডিশন আজও অব্যাহত
Burdwan Puja News : আজ সে জমিদারও নেই , নেই জমিদারিও । তবু আজও কষ্টিয়ার শিট পরিবারের দরদালানে সাড়ম্বরে পূজিতা হন দেবী দুর্গা ।
পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : সাড়ে তিনশো বছর আগে বাঁকুড়ার কষ্ঠিয়ার সম্ভ্রান্ত শিট পরিবারের জমিদারি ছিল আশাপাশের প্রায় ১৬ টি তালুকে । প্রায় বারো হাজার বিঘা জমিতে থাকা বনাঞ্চলে ছিল তাঁদের কর্তৃত্ব । জমিদারির বিপুল আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে শিট পরিবারের দুর্গাপুজায় লেগেছিল বৈভব আর আভিজাত্যের ছোঁয়া ।
আজ সে জমিদারও নেই , নেই জমিদারিও । তবু আজও কষ্টিয়ার শিট পরিবারের দরদালানে সাড়ম্বরে পূজিতা হন দেবী দুর্গা ।
শিটদের পুজোর ইতিহাস
শিট পরিবারের সার্থক শিটই এই পুজোর প্রথম প্রচলন করেন। তাঁর জন্ম বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের কাছে থাকা বনগ্রামের অত্যন্ত সাধারণ একটি কৃষিজীবী পরিবারে । কথিত আছে, পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে মহিষ চড়ানোর সময় একদিন ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । স্বপ্নাদেশ পান, বেশ কিছুটা দূরে থাকা কষ্টিয়া গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু করার ।
পর্ণ কুটির তৈরি করে দুর্গা পুজো শুরু
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে নিজের ক্ষুদ্র সামর্থে কষ্টিয়া গ্রামে একটি পর্ণ কুটির তৈরি করে দুর্গা পুজোর সূচনা করেন সার্থক শিট । পুজো শুরু হওয়ার পর দৈবিক আশির্বাদে দ্রুত অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে সার্থক শিটের । তাঁর জীবদ্দশাতেই শালী নদীর তীরবর্তী প্রায় সাত হাজার বিঘে উর্বর জমি কিনে জমিদারির পত্তন করেন সার্থক শিট ।
জমিদার বাড়ির পুজোর ঘটা কেমন
জমিদারি পত্তনের প্রায় সাথে সাথেই জমিদারবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় দুর্গার জন্য স্থাপিত হয় সুদৃশ্য বিশাল দরদালান । বিশাল জাঁক জমকে শুরু হয় দুর্গা পুজা । জমিদারীর বিপুল আয়ে সে সময় শিট পরিবারের রাজকোষ উপচে পড়ে । তার ছাপ পড়তে থাকে দুর্গা পুজোতেও । আভিজাত্য আর জাঁকজমকে অল্প দিনেই ওই এলাকায় বিখ্যাত হয়ে ওঠে শিট পরিবারের দুর্গাপুজো ।
পুজোর একাল , সেকাল
সে সময় দূর দূরান্তের প্রজারা পুজা দেখতে পুজার ৪ দিন ধরে ভিড় জমাত কষ্ঠিয়া গ্রামের দুর্গা মণ্ডপে । চারদিন ধরে মণ্ডপে এলাকার ৭ টি গ্রামের মানুষের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকত । সন্ধ্যা নামলেই দুর্গা মণ্ডপে সেজের ঝাড়বাতি লাগিয়ে বসত যাত্রাপালা ,রামলীলা ও গানের জলসা । দশমীতে শিট পরিবারের দুর্গাদালানে দিনে যাত্রাপালা ছিল অন্যতম আকর্ষণ । জঙ্গল পেরিয়ে আসা দূর দূরান্তের প্রজারা যাতে যাত্রাপালা দেখে দিনের আলোতেই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সেজন্যই দিনের আলোয় এই যাত্রাপালার আয়োজন করতেন শিট পরিবারের সদস্যরা ।
সে জমিদারি আর নেই । পাল্লা দিয়ে কমেছে পরিবারের আয়ও । রুজি রুটির টানে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্যত্র । কিন্তু আজও পুরানো বিধি ও নিয়ম নীতি মেনে শিট পরিবারের প্রাচীন দুর্গা মন্দিরে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা । আয়োজনের কলেবর বহুগুন কমলেও গ্রামবাসীদের ভক্তি শ্রদ্ধা ও এই পুজাকে ঘিরে উন্মাদনায় বিন্দু মাত্র ভাটা পড়েনি ।
আজও দশমীতে দিনের যাত্রা পালা চলে আসছে প্রাচীন রীতি মেনে । জমিদারি না থাকলেও একসময় জমিদারির অংশ হিসাবে থাকা দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে গ্রামবাসীরা পুজোর বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে পুজোর সময় হাজির হন শিট পরিবারের দুর্গা দালানে । দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসেন শিট পরিবারের সদস্যরাও । বছরের পুজোর কটা দিন ফের গমগম করে ওঠে শিট পরিবারের দুর্গা মন্দির ।