East Midnapur News: তীব্র দাবদাহে নাজেহাল অবস্থা, পশুপাখিদের জন্য 'বাপের হোটেল' চালু করলেন শিক্ষক
গত ২৫ এপ্রিল নিজের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীর দিন পশু-পাখিদের খাবারের জন্য এমনই একটি হোটেল চালু করেছেন কাঁথির কুলাইপদিমা নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল জানা। নাম দিয়েছেন 'বাপের হোটেল' (Baper Hotel)
ঋত্বিক প্রধান, পূর্ব মেদিনীপুর: তীব্র দাবদাহে (Heat Wave) নাজেহাল অবস্থা মানুষের। বাড়িতে থেকেও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন। আর বাড়ির বাইরে বেরলে তো অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো অবস্থা। গরমের প্রচন্ড দাপটে মানুষের যখন এমন অবস্থা, তখন পশু-পাখিদের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। এমন পরিস্থিতিতে অভিনব হোটেল চালু করলেন কাঁথির প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষক। অভিনব এই হোটেলে কোনও রান্না হয় না। এই হোটেল কোনও মানুষের জন্যও নয়। হোটেলটি সম্পূর্ণভাবে পশু-পাখিদের জন্য। নিজের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে খুশি করতে এমন অভিনব হোটেল চালু করেছেন তিনি।
পশু-পাখিদের জন্য 'বাপের' হোটেল-
জানা গিয়েছে, গত ২৫ এপ্রিল নিজের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীর দিন পশু-পাখিদের খাবারের জন্য এমনই একটি হোটেল চালু করেছেন কাঁথির কুলাইপদিমা নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল জানা। নাম দিয়েছেন 'বাপের হোটেল' (Baper Hotel)। বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে স্ত্রীকে এমনটাই উপহার দিয়েছেন বলে জানালেন শ্যামল বাবু। বাড়ির খোলা ছাদে এই হোটেল ২৪ঘণ্টাই খোলা থাকছে। অভিনব এই হোটেল প্রসঙ্গে শ্যামল বাবু জানাচ্ছেন যে, তীব্র গরমে যখন মানুষের এই শোচনীয় অবস্থা, তখন পশু-পাখিদের অবস্থা কতটা শোচনীয়, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। এই পরিস্থিতিতে 'বাপের হোটেলে' পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জল পেয়ে প্রাণে বাঁচছে পশু-পাখি। তাদের জন্য কলা, আঙুর, শসা, কাঁচা ছোলা, গম, সূর্যমুখীর বীজ, ভুট্টা, বাদাম এবং অতি অবশ্যই পানীয় জল রয়েছে। রঙিন পাত্রে পশু-পাখিদের জন্য খাবার সাজানো রয়েছে। আবার দড়িতে হনুমানদের জন্য সাজানো রয়েছে পাকা কলা। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই সেখানে হনুমান সহ অন্যান্য পাখির আনাগোনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তারা এসে তাদের জন্য সাজিয়ে রাখা খাবার খেয়েও যাচ্ছে।
আরও পড়ুন - Jahangirpuri Clash: জাহাঙ্গিরপুরী হিংসায় বঙ্গযোগ! তমলুক থেকে গ্রেফতার ১
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শ্যামল বাবু সারাবছরই নানা ধরনের সমাজ সেবা মূলক কাজ করে থাকেন। কখনও দুঃস্থ মানুষকে পোশাক দেন। আবার কখনও বন্যা কিংবা ঝড়ের পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের কাছে খাবার, ত্রিপল ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যান। ইতিমধ্য়েই রাজ্যের ২৩টি জেলায় তিনি বৃক্ষরোপণ করেছেন। এবার নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করেই পশু-পাখিদের জন্য এমন উদ্যোগ নিলেন ওই শিক্ষক। 'বাপের হোটেল' চালু করার প্রসঙ্গে শ্য়ামল বাবু বলেন, 'আমি সামান্য প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে দামি উপহার দেওয়ার সাধ্য নেই। গরমে মানুষ থেকে শুরু করে পশু-পাখি, সবারই অবস্থা কাহিল। তাই বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে খুশি করতে এমন একটি পরিকল্পনা নিয়েছি।' শ্যামল বাবুর এই কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকার সকলে। তাঁরা বলছেন, প্রকৃতিকে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে পশু-পাখির অবদান যে অপরিসীম, তা সকলেরই জানা। মানুষের জন্য হোটেল রয়েছে। কিন্তু পশু-পাখিদের জন্য কোনও হোটেল নেই। মানুষ যদি ওদের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। নিরীহ পশু-পাখিদের কথা কেউই ভাবেন না। পশু-পাখিদের খাবারের কথা ভেবে যে শ্যামল বাবু এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। শ্যামল বাবুর এই কাজে দারুণ খুশি তাঁর দাদা কমল কুমার জানা। তিনি বলেন, 'উনি পশু-পাখিদের জন্য যে হোটেল চালু করেছেন, তাতে আমি খুবই খুশি। ওঁকে দেখে আরও পাঁচজন শিখতেও পারবে। আমি চাই, উনি আগামীদিনেও এমন ধরনের নানা উদ্যোগ নেবেন।'