Teacher Recruitment: হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও নেই চাকরি, বাধ্য হয়েই কাপড়ের দোকান কাজ বেছে নিয়েছেন হবু শিক্ষক
Recruitment Scam, High Court: অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। দাঁতে দাঁত চিপে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে সফলও হয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশের পরও এখনও বাবার চাকরি পাননি বাঁকুড়ার কোতলপুরের প্রভাতকুমার পাল।
তুহিন অধিকারী এবং পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: হাইকোর্টের নির্দেশের পর চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও বাবার চাকরি পাননি বাঁকুড়ার কোতলপুরের প্রভাতকুমার পাল। বাধ্য হয়েই কাপড়ের দোকান কাজ বেছে নিয়েছেন হবু শিক্ষক। আদালতের নির্দেশে চাকরির আশায় দিন গুণছেন তিনি। এনিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
হাইকোর্টের নির্দেশের পর ৪ সপ্তাহ পার, এখনও প্রয়াত বাবার চাকরি পেলেন না বাঁকুড়ার কোতলপুরের প্রভাতকুমার পাল। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু বাবার চাকরি পাওয়ার জন্য় ১৪ বছর আইনি লড়াই লড়েছেন মদনমোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়াকাটা গ্রামের বাসিন্দা প্রভাতকুমার পাল। দাঁতে দাঁত চিপে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে সফলও হয়েছেন। প্রয়াত বাবার শিক্ষকতার চাকরি তাঁকে দিতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল ৪ সপ্তাহের মধ্যে বাবার চাকরি দিতে হবে তাঁকে। কিন্তু, আদালতের নির্দেশের পরেও এখনও মেলেনি চাকরি। ফলে এখন চোখে মুখে শুধুই হতাশার ছাপ দীর্ঘ দিন বাবার চাকরি পাওয়ার আশায় বসে থাকা প্রভাতকুমার পালের।
মুড়াকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন প্রভাতকুমার পালের বাবা দুর্গাপদ পাল। ১৯৯৩ সালে মৃত্যু হয় তাঁর। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর চাকরি পাওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরে আবেদন করেন স্ত্রী অঞ্জলি পাল। অভিযোগ শিক্ষা দফতর চাকরির নিষ্পত্তি করেনি। ২০০০ সালে মৃত্যু হয় অঞ্জলি পালের। ২০০৮ সালে ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর বাবার চাকরির জন্য আবেদন করেন প্রভাতকুমার পাল।
চাকরি না মেলায় ২০০৯ সালে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালতের নির্দেশের পর আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু, তারপরেও যে কে সেই। বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরতে কাপড়ের দোকান কাজ বেছে নিয়েছেন তিনি। মৃত শিক্ষকের ছেলে প্রভাতকুমার পাল বলেন, 'চার সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আমি কিন্তু এখনও কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইনি। ডিপিএসসি চেয়ারম্যান, এসএসসির চেয়ারম্যান, কমিশনার, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি যাতে বাবার চাকরিটা তাড়াতাড়ি দেওয়া হয়। জোর হাত করে আবেদন করছি আদালতের নির্দেশ যাতে মান্যতা দেওয়া হয়।'
বাঁকুড়ার প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'প্রভাত পালের যে চাকরি আমরা এসএসসি অফিসে ২৩-০৮-২৩ তারিখে জমা দিয়েছি। কিন্তু, এসএসসির থেকে এখনও অ্য়াপয়েন্টমেন্ট দেয়নি। যেতা আমাদের হাতে নেই। এসএসসির হাতে রয়েছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার ব্য়াপারটা। এসএসসির থেকে রেকমেন্ড এলেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইস্যু করা হবে। শিক্ষা দফতরের কোনও গাফিলতি নেই। এসএসসি না দিলে আমাদের কিছু করার নেই।'
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র, দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, 'এই দুটো সরকারের নেতারা নিজেদের জনদরদী বলে। কী নরক যন্ত্রণা ভোগ করে এই পরিবারটা আছে। কেউ কিন্তু এদের পাশে দাঁড়ান না। কালু ডাকাত গিয়ে রঘু ডাকাত এসে দাঁড়িয়েছে। এদের টাকা পেতে গেলে কাদের কাছে টাকা দিতে হবে জানতে হবে।'
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বামফ্রন্টের আমলে এরকম অনেক ঘটনাই ঘটেছে। ৯৩ সাল মানে তো বামফ্রন্টের আমল। কেন হয়নি সেটা তারাই বলতে পারবেন। কোর্টের অর্ডার আছে নিশ্চয়ই প্রসেসিংয়ে আছে। আমাদের সরকার মানবিক সরকার। তাঁর আইনি সব কিছু ঠিক থাকে নিশ্চয়ই হবে।'
কবে মিলবে বাবার চাকরি? আদালতের নির্দেশের পর এখন সেদিকেই তাকিয়ে অসহায় যুবক।