Durga Puja 2022: ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে বেড়ানো, কিন্তু পুজোয় থাকা চাই, হরিপালের এই পুজো বিপ্লবী নেতার স্মৃতিধন্য
Haripal News: হরিপালের জেঁজুর গ্রামে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে বাস ঘোষেদের। সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধি ক্ষণ এবং নবমীতে চার বার কুমারী পুজো হয় সেখানে।
সোমনাথ মিত্র, হরিপাল: সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। সব আরাম, বিলাসিতাই ছিল হাতের কাছে। তাও দেশরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ইংরেজ শাসকের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াতেন সর্বক্ষণ। বাংলার দামাল ছেলের গল্প গোটা দেশ জানে। কিন্তু বিপ্লবী তথা কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষের পৈতৃক বাড়ি হুগলির হরিপালে, তা ক'জন জানেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে আর কেউ মনে রাখুন বা না রাখুন, পারিবারিক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আজও বয়ে চলেছেন হরিপালের ঘোষেরা। বিগত ৪০০ বছর ধরে দুর্গাপুজো করছেন তাঁরা (Durga Puja 2022)।
হরিপালের ঘোষবাড়ির পুজোর বয়স ৪০০ বছর
হরিপালের (Haripal News) জেঁজুর গ্রামে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে বাস ঘোষেদের। সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধি ক্ষণ এবং নবমীতে চার বার কুমারী পুজো হয় সেখানে। দুর্গা মন্দিরের স্থায়ী হোমকুণ্ডে অগ্নি প্রজ্জ্বলন করা হয় সপ্তমীতে। নবমীতে বলিদান পর্যন্ত একটানা প্রজ্জ্বলিত থাকে আগুনের সেই শিখা। এই ধরনের আরও নানা আচার রয়েছে ঘোষবাড়ির পুজোয়। বংশ পরম্পরায় আজও সেই প্রাচীন রীতিনীতি বজায় রয়েছে (Hooghly News)।
ঘোষ বাড়ির এই পুজো হরিপালের অধিকাংশ মানুষের কাছেই বিপ্লবী তথা কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষের বাড়ির পুজো হিসেবে পরিচিত। নয় নয় করে প্রায় ২৭ পুরুষ আগে হুগলির আকনা থেকে উঠে এসে জেঁজুরে বসবাস শুরু করে ঘোষ পরিবার। তাঁদেরই কোনও পিতৃপুরুষ আঝ থএকে প্রায় ৪০০ বছর আগে মায়ের আরাধনা শুরু করেন। এই পরিবারের স্বনামধন্য সদস্যদের মধ্য়ে রয়েছেন শান্তিময় ঘোষ, বিজয়কুমার ঘোষ, ভবানীপ্রসাদ ঘোষ, হারাধন ঘোষ, কিরণময় ঘোষ। রাজ্য জুড়ে ঘোষ পরিবারের অনেক সদস্যের নামডাক, পরিচিতি রয়েছে। এঁদের মধ্যে সর্বোপরি ছিলেন অতুল্য ঘোষ।
ইংরেজ আমলে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন অতুল্য ঘোষ। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁর। তাই তাঁর নামেই ঘোষবাড়ির পুজো বেশি পরিচিত। তবে পরিবারের সদস্য জনার্দন ঘোষের দাবি, ভারতের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য অতুল্য ঘোষ তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ফলে দুর্গাপুজোয় সে ভাবে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। বরং তাঁর সহধর্মিনী বিভাবতী ঘোষই চারদিন ধরে পুজোর সবকিছু সামলাতেন। মহিলামহলের সকলে তাঁর কথায় চলতেন, পুজো-অর্চনায় সহায়তা করতেন। তবে ইংরেজ শাসকের চোখে ধুলো দিয়ে বেশ কয়েক বার বাড়ির দুর্গা পুজোয় উপস্থিত হয়েছিলেন অতুল্য ঘোষ।
আরও পড়ুন: Mahalaya : বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে উদ্যোগ, এবার‘মহিষাসুরমর্দিনী’র ইংরেজি ভার্সন
জেঁজু্র গ্ৰামের ঘোষবাড়ির এই পুজোয় প্রাচীনকালের রীতিনীতি সিংহভাগ এখনও বজায় রয়েছে, নিষ্ঠার সঙ্গে যা পালন করে আসছেন বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা চার বার কুমারী পুজো ছাড়াও বলিপ্রথা এখনও চালু রয়েছে। সপ্তমী, সন্ধি ক্ষণ, নবমীতে এখনও ছাগ বলি হয়ে থাকে। গ্ৰামের মানুষ এখনও ঘোষ বাড়ির প্রতিমাকে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেন। আধুনিক কোনও যানবাহন নয়, স্থানীয়দের কাঁধে চেপেই মায়ের বিসর্জন হয়।
অতীতের স্মৃতি নিয়েই নতুনের সূচনা
অতীতে পরিবারের মহিলাদের মণ্ডপে আসার জন্য পর্দার আবরণে মোড়া নির্দিষ্ট রাস্তা ছিল। অন্দরমহলের সেই রাস্তা দিয়েই পরিবারের মহিলারা এসে প্রতিমা দর্শন-সহ পুজো-অর্চনার কাজ করতেন। কিন্তু আধুনিক কালে, যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে। পুরনো প্রথার মধ্যে আরও যে প্রথা চালু রয়েছে, তা হল, যাত্রা। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের পর বাড়ির পুরুষ সদস্যরা ধুতি পরে কুলদেবতাকে প্রমাণ করেন। বাড়ির বাইরে হাটতলায় কালী মন্দিরে মাথা ঠেকিয়ে ফিরে আসেন। ফলে সারা বছর বাড়ির কোনও সদস্য বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে শুভ অশুভ মুহূর্ত বা পঞ্জিকা দেখার প্রয়োজন পড়ে না। এই যাত্রার ফলেই নির্দ্বিধায় যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন বাড়ির সদস্যরা।
এ ছাড়াও, পরিবারের মহিলা সদস্।রা সপ্তমীর দিন লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে মাথায় করে লক্ষ্মী প্রতিমাকে দুর্গা দালানে বসান। বাড়ির সদস্যরা যাঁরা দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন, পুজোর সময় সকলেই বাড়িতে এসে উপস্থিত হন। সকলে মিলে হই-হুল্লোড় করে কাটে পুজোর দিনগুলি।