Howrah News: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সরাসরি প্রভাব, সমস্যা হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে
Howrah News: বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বন্ধ হয়েছে আমদানি-রফতানি। এর ফলে চরম সমস্যার মুখে পড়েছে হাওড়ার মাছ ব্যবসায়ী।
সুনীত হালদার, হাওড়া: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের (Bangladesh Crisis) সরাসরি প্রভাব পড়েছে হাওড়ার পাইকারি মাছ (Fish) বাজারে। সীমান্তে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে দু'দেশের মাছ ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। এর পাশাপাশি এবারের পুজোয় পদ্মার ইলিশ এপারের বাঙালির পাতে পড়বে কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় এক মাস আগে ছাত্রদের চাকরিতে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। সেই সময় দু'দেশের সীমান্তে ট্রাক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে মাছ ভর্তি ট্রাক হাওড়া মাছ বাজারে আসতে পারেনি। আবার একইভাবে ভারত থেকেও মাছের ট্রাক ওদেশে যেতে পারেনি। ফলে দু'দেশের ব্যবসায়ীরাই যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। দিন দশেক আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ফের দু-দেশের মধ্যে মাছের আমদানি ও রফতানি শুরু হয়।
কিন্তু, দিন চারেক ধরে ফের বাংলাদেশ জুড়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় দু-দেশের মধ্যে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সীমান্তে দাঁড়িয়ে পড়ে সারি সারি ট্রাক। আবার সোমবার বাংলাদেশে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তারপরই গোটা বাংলাদেশ জুড়ে অরাজকতা দেখা যায়। বেনাপোল এবং পেট্রাপোল সীমান্তে ফের সমস্ত ট্রাক দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার হাওড়া মাছ বাজারে বাংলাদেশ থেকে মাছ ভর্তি ট্রাক ঢোকার কথা থাকলেও একটাও ট্রাক আসেনি।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৮ থেকে ১০ টি ট্রাকে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন পাবদা , পারশে, ভেটকি, টেংরা, পমফ্রেট এবং অন্যান্য মাছ আমদানি হয়। আবার ভারত থেকে ১০ থেকে ১২ টি ট্রাকে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন বোয়াল, রুই, কাতলা , ভেটকি, কাজরি এবং অন্যান্য মাছ বাংলাদেশে রফতানি হয়। মাছের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যবসা বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি টাকা করে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি কীভাবে তাঁরা সামাল দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। তারা চাইছেন রাজনৈতিক ডামাডোল কাটিয়ে বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি সরকার গঠন হোক। তাহলেই তাঁরা সুস্থভাবে ব্যবসা করতে পারবেন।
২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে এপার বাংলায় পদ্মার ইলিশ আশা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পূর্বতন ভারত সরকার বারবার ইলিশ রফতানি নিয়ে বাংলাদেশকে অনুরোধ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিন্তু বছর ছয়েক আগে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার পর বাংলাদেশ সরকার দুর্গা পুজোর আগে ইলিশ রফতানিতে অনুমতি দেয়। এটাকে তারা পূজোর উপহার বলতেন। গত বছরেও সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছিল। হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রায় ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করেছিলেন। কিন্তু, এবারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী অবস্থায় দাঁড়াবে তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানিয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক গণ্ডগোলের কারণে কী হবে বোঝা যাচ্ছে না। নতুন সরকার এলে তাদের কাছে একই আবেদন করা হবে। তারা যদি ইলিশ রফতানি অনুমতি দেয় তবেই বাঙালির পাতে দেখা যেতে পারে ওপার বাংলার রুপোলি ইলিশ। এদিকে বাংলাদেশের এক মাছ ব্যবসায়ী শেখ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি কার্যত আটকে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ফিরতে পারেননি। এখানকার মাছ বাংলাদেশে আমদানি করতে না পারায় তিনি বড়সড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। তিনি চান দেশে দ্রুত একটি সরকার গঠন হোক যাতে তাঁরা খোলা মনে ব্যবসা করতে পারেন।.
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।