Anandapur Child Murder : মদ্যপানের সময় বিরক্ত করায় নিজের ৩ বছরের সন্তানকে খুন বাবার ! আনন্দপুরে শিশুমৃত্যুতে চাঞ্চল্যকর তথ্য
Kolkata : পুলিশের টানা ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়েন অভিযুক্ত বাবা। স্বীকার করে নেন গোটা ঘটনা।
পার্থ প্রতিম ঘোষ ও অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা : মদ্যপানের সময় বিরক্ত করছিল ৩ বছরের সন্তান। তাই নিজের হাতে শিশুকে খুনের অভিযোগ। আনন্দপুরে শিশুমৃত্যুর ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত বাবাকে। ধৃতের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বাবার হাতে শিশুর মৃত্যু
ছেলের বয়স মাত্র ৩। একা একা বাথরুমে যেতে ভয় পাচ্ছিল। বাবাকে বলছিল, তার সঙ্গে যেতে। কিন্তু বাবা তো সেই সময় মদ খেতে ব্যস্ত। বাচ্চার আবদারে রীতিমতো বিরক্ত হচ্ছিলেন তিনি। তাই বলে, বিরক্তির এমন ভয়ঙ্কর বহিঃপ্রকাশ !
অভিযোগ, বিরক্ত হয়ে সন্তানকে এমন চড় মারেন বাবা, যে শিশুটি ছিটকে গিয়ে ধাক্কা খায় বাথরুমের দেওয়ালে। সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারায় সে। বাবার মারেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। খুনের একসপ্তাহের মাথায়, আনন্দপুরে ৩ বছরের শিশুর রহস্যমৃত্যুর কিনারা করল পুলিশ।
গ্রেফতার অভিযুক্ত
শিশুর বাবা, বিজয় বড়ালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের অবশ্য মুখে দাবি, 'আমি খুন করিনি।' পুলিশ সূত্রে খবর, গত রবিবার আনন্দপুরের নোনাডাঙার বাসিন্দা রোহন বড়াল নামে তিন বছরের এক শিশুর রহস্যমৃত্যু হয়। প্রতিবেশীদের দাবি, তাঁদের কাছে শিশুর বাবা জানান খেলতে খেলতে বাথরুমে জল ভর্তি বালতির মধ্যে পড়ে যায় শিশুটি। বালতির জলে ডুবে মৃত্যু হয় রোহনের। মৃতের বাবা আরও জানান, দুর্ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। শিশুর মা সেই সময় কাজে বেরিয়েছিলেন। স্ত্রীকেও তিনি ফোনে জানান, শৌচাগারে জলের বালতিতে পড়ে ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর পরের ঘটনাক্রম
ঘটনার আকস্মিকতায় শিশুর মৃত্যুতে বাবা এতটাই কাতর হয়ে পড়েন যে শিশুর ব্যবহৃত কম্বল, বালিশ, গায়ে মাখার তেল, বাটি, এমনকি বালতি পর্যন্ত একটি পুকুরে ফেলে দেন। এরপর সোমবার সকালে সমাধিস্থ করা হয় ৩ বছরের শিশুটিকে। অদ্ভূতভাবে সোমবার থেকে বেপাত্তা হয়ে যান শিশুর বাবা ও মা। তাঁদের মোবাইল ফোনও ছিল বন্ধ। এতেই সন্দেহ হয় শিশুর দিদার। নিছক দুর্ঘটনা নয়, শিশুটিকে খুন করা হয়েছে! পুলিশের কাছে এমন অভিযোগ জানান তিনি।
এরপরই, খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে আনন্দপুর থানার পুলিশ। আদালতের নির্দেশে, গত বৃহস্পতিবার, কবর থেকে তোলা হয় শিশুর দেহ। পাঠানো হয় ময়নাতদন্তে। পুলিশ সূত্রে খবর, পোস্ট মর্টেমের প্রাথমিক রিপোর্ট জানা যায়, শিশুর দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এরপরই শিশুর মা-বাবার খোঁজ শুরু করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার
মোবাইল ফোনের টাওয়াল লোকেশনের সূত্র ধরে শনিবার সকালে তিলজলা থেকে বিজয় বড়াল ও তাঁর স্ত্রীকে পাকড়ও করে পুলিশ। এরপর, ১১ ঘণ্টার টানা জিজ্ঞাসাবাদ। তাতেই ভেঙে পড়েন অভিযুক্ত। পুলিশ সূত্রে দাবি, অভিযুক্ত জানান, বিরক্ত হয়ে ছেলেকে চড় মারেন তিনি। তার জেরে দেওয়ালে সজোরে ধাক্কা লেগে, মৃত্যু হয় তার। বাচ্চাকে ওই অবস্থায় রেখেই ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যান বিজয়। খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই গল্প ফাঁদেন তিনি।
এদিকে, শিশুর ফেলে দেওয়া সামগ্রী পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বালতির যা মাপ, তাতে ডুবে ৩ বছরের শিশুর মৃত্যু কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এরপরই সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। পুলিশের ধারণা, তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্যই শিশুর ব্যবহৃত সামগ্রী পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এরপরই, খুনের অভিযোগে, বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
একাধিক মামলা রুজু
ধৃতের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায়- খুন ও ২০১ ধারায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করে পুলিশ। সূত্রের খবর, অভিযুক্তের ২ সন্তান। বড় ছেলে দিদার কাছে থাকে। ছোট ছেলে, রোহন বাবা-মার সঙ্গে আনন্দপুরেই থাকত। পরিবার সূত্রে খবর, সন্তানের ওপর সেরকম স্নেহ ছিল না বাবার। ৩ বছরের সন্তানের সঙ্গে প্রায়শই দুর্ব্যবহার করতেন। গায়ে হাত তুলতেন।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, স্থানীয় এক চিকিত্সক শিশুর ডেথ সার্টিফিকেট দেন। তাতে লেখা ছিল, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।কেন এই সার্টিফিকেট দিলেন তিনি? চিকিত্সকের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।