Malda News: ঘুচল 'কালো তকমা', WBCS-এ পঞ্চম হয়ে কালিয়াচকের মুকুটে নয়া পালক জুড়লেন নিশাক
Malda WBCS Nishak: রাজ্য শুধু নয়, দেশবাসীর চোখেও কালিয়াচক মানে একটি পিছিয়ে পড়া এলাকা৷ আর সেই কালিয়াচকের মুকুটেই WBCS-র বি গ্রুপে পঞ্চম স্থান জয় করে নয়া পালক জুড়লেন নিশাক।
করুণাময় সিংহ,মালদা: রাজ্য শুধু নয়, দেশবাসীর চোখেও কালিয়াচক (Kaliachak) মানে একটি পিছিয়ে পড়া এলাকা৷ যেখানে জাল টাকা, মাদক-সহ বিভিন্ন জিনিসের চোরা কারবার চলে, যেখানে অবাধে বিচরণ করে দুষ্কৃতীরা৷ কিন্তু সেই জমানার অবসান ঘটেছে৷ একসময় যথেষ্ট সুযোগ না পেয়ে সংখ্যালঘু সমাজের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকলেও এখন সেই কালিয়াচকের ছেলেমেয়েরাই রাজ্য, দেশ তথা বিশ্বের দরবারে নিজেদের শিক্ষার ধ্বজা তুলে ধরছে৷ ইংল্যান্ডের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হয়ে কালিয়াচকের পতাকা তুলে ধরেছেন আলিশা ইবকার৷ এবার ডব্লিউবিসিএসের বি গ্রুপে (WBCS Group B) পঞ্চম হয়ে সেই ঝান্ডাটা আরও একবার নাড়িয়ে দিলেন বামনগ্রামের মোহাম্মদ নিশাক আলি৷ শ্রমিক পরিবারের ছেলে হয়েও নিজের সংকল্পে অটুট থেকেছেন তিনি৷
মালদা জেলার অর্থনীতিতে (Malda Economics) সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে কালিয়াচক৷ এখানকার আম আর রেশম শিল্পের নাম বিশ্বজোড়া৷ এই দুই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষ৷ অনেকে আবার বিভিন্ন ব্যবসায় সুপ্রতিষ্ঠিত৷ কিন্তু এই অর্থনীতির বাইরেও থেকে যায় স্থানীয় সমাজের একটা অংশ৷ এই অংশের ছেলেমেয়েরাই শিক্ষার স্বাদ না পেয়ে একসময় বিপথে চালিত হত৷ কিন্তু সময় পালটেছে৷ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করেছেন অভিভাবকরা৷ তাই দু’বেলা পেট ভরে খেতে না পেলেও এখন তাঁরা ছেলেমেয়েদের আগে পড়াশোনা করতে পাঠান৷ এভাবেই মাত্র ১০ বছরে কালিয়াচক গোটা জেলার এডুকেশন হাবে পরিণত হয়েছে৷ বেরিয়ে আসছে একের পর এক রত্ন৷
সেই রত্নেরই একজন মোঃ নিশাক আলি৷ কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের বামনগ্রাম মসিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দাহাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা৷ বাবা মাহাবুল শেখ স্থানীয় একটি প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক৷ দিনভর আবর্জনা সাফাই করে প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন৷ গরিব হলেও তিনি তাঁর দুই ছেলে আর এক মেয়েকে শিক্ষার রাস্তায় হাঁটিয়েছেন৷ নিশাক যেমন এবার ডব্লিউবিসিএসের বি গ্রুপে পঞ্চম হয়ে সরাসরি পুলিশ বিভাগে ডিএসপি পদমর্যাদার চাকরি পাচ্ছেন। তেমনই তাঁর ছোট ছেলে সাফিক আহমেদ ডাক্তারি পড়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ মাহাবুল বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এলাকার সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েরা এখন উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে৷ গোটা এলাকায় শিক্ষার হার বেড়েছে৷ তাঁর বড় ছেলে খালেদ যদিও আল আমিন মিশন থেকে পড়াশোনা করেছে৷ কিন্তু স্কলারশিপের টাকাতেই তার উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে৷ এলাকার আরও অনেক ছেলেমেয়ে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েছেন৷ কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে এমন ছেলেমেয়ের সংখ্যা কয়েকশো৷
নিশাক বলেন, ‘ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল প্রশাসনিক কর্তা হয়ে এলাকার জন্য, সমাজের জন্য কাজ করব৷ কালিয়াচকের কথা উঠলেই মানুষ খারাপ কিছু ভাবেন৷ কিন্তু এখন কালিয়াচক শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টাতেই সেটা সম্ভব হয়েছে৷ কালিয়াচক মানে এখন আর বোমা-গুলি কিংবা চোরা কারবার নয়, কালিয়াচক মানে এখন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-আমলাও বটে৷ তবে এখানে আরও অনেক কাজ করার রয়েছে৷ এখনও যুব সমাজের একাংশ শিক্ষা থেকে পিছিয়ে রয়েছে৷ তাদের সামনে এগিয়ে আনতে হবে৷ একজন পুলিশ অফিসার হিসাবে তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য৷’
আরও পড়ুন, 'পিসি ভাইপো সবার নাম উঠবে', বালিগঞ্জে টাকা উদ্ধারকাণ্ডে বিস্ফোরক দিলীপ
এলাকার সমাজসেবী আবদুস সালাম বলেন, কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে শিক্ষার প্রসারে সরকারের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে অনেক সংগঠনও৷ এখন এই এলাকা জেলার এডুকেশন হাবে পরিণত হয়েছে৷ প্রায় ৩০০টি আবাসিক মিশন স্থাপিত হয়েছে৷ তিন থেকে চার হাজার পড়ুয়া বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে৷ এর সুফলও মিলছে৷ প্রতি বছর অসংখ্য ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার এই এলাকা থেকে বেরিয়ে আসছে৷ আগামীতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে৷ গায়ে লেগে থাকা কালো তকমা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে কালিয়াচক৷