Monsoon Explainer : বর্ষার আকাশে শরতের নীল ! 'অভাগা' দক্ষিণবঙ্গের কপাল, বর্ষা কি বেহাল ?
Weather Update : অনেকেই চড়া রোদে ঘামতে ঘামতে প্রশ্ন তুলছেন ‘কোথায় বর্ষা?’ আসলে বর্ষা এলেই যে প্রতিদিন বৃষ্টি হবে এমনটা একেবারেই নয়। শীত যেমন সমুদ্রের ঢেউ এর মত দফায় দফায় আসে, বর্ষাও একেবারেই সে রকম।
কলকাতা : ঘুম ভেঙে উঠে আকাশের দিকে তাকাতেই মনে মনে কেমন যেন ঘোর লেগে গেল। আজকের আকাশটা তো মনের মধ্যে হু হু করা শরতের সুর বাজাচ্ছে। বর্ষার প্রথম কয়েক দিনের বৃষ্টি আবহমণ্ডলের ধুলো-ময়লা ধুয়ে দিতেই আকাশের নীল রং আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। তার মাঝে ধুনুরির ধুনে যাওয়া তুলোর মত মেঘেরা ধীরে ভেসে চলেছে। ক্যালেন্ডারের আষাঢ়ে এমন শরতের আবহ কেন ?
বর্ষা মানেই বৃষ্টি নয়
অনেকেই চড়া রোদে ঘামতে ঘামতে প্রশ্ন তুলছেন ‘কোথায় বর্ষা?’ আসলে বর্ষা (Monsoon) এলেই যে প্রতিদিন বৃষ্টি হবে এমনটা একেবারেই নয়। শীত যেমন সমুদ্রের ঢেউ এর মত দফায় দফায় আসে, বর্ষাও একেবারেই সে রকম।
মৌসুমী বায়ুর গতি
দেশে মৌসুমী বায়ু বা বর্ষা এল মানে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে অর্থাৎ আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর হয়ে প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে আসা বায়ু প্রবাহ শুরু হল। এই জলীয় বাষ্প প্রাথমিক ভাবে মানুষকে ঘর্মাক্ত করে তোলে। কিন্তু এর থেকে বৃষ্টি তৈরি হতে কিছু বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হতে হয়। যাকে পরিভাষায় ‘সিস্টেম’ বলে।
কেমন করে বৃষ্টি নামে
এই ‘সিস্টেম’ আবার নানা ধরণের হয়। কোনওটাকে বলে অক্ষরেখা আবার কোনোটার নাম ঘূর্ণাবর্ত। বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্প এই সব সিস্টেমের মাধ্যমে মেঘ তৈরি করে এবং আমরা বৃষ্টি (Rain) পাই। সিস্টেমের শক্তি এবং জলীয় বাষ্পের জোগানের ওপরেই বৃষ্টির পরিমাণ নির্ভর করে।
বর্ষার বৃষ্টি
ভারতে যদি আমরা মৌসুমী বায়ু প্রবাহের ধরণটা লক্ষ্য করি তবে দেখব কেরলে ভারতের মূল ভূখণ্ড স্পর্শ করার পর মৌসুমী বায়ু পৌঁছে যায় একেবারে উত্তর-পূর্ব প্রান্তে। ক্রমে তা উত্তর- পশ্চিমে অগ্রসর হয়। প্রায় গোটা বর্ষাকাল জুড়েই পশ্চিম থেকে পূর্বে একটি অক্ষরেখা অবস্থান করে। তাকে মৌসুমি অক্ষরেখা বলে। সেটা আমাদের রাজ্যে কখনও উত্তরবঙ্গের ওপর দিয়ে বিস্তৃত হয় আবার কখনও কিছুটা নেমে এসে দক্ষিণবঙ্গের ওপরে অবস্থান করে। মূলত এর ওপরেই নির্ভর করে কখন কোথায় বৃষ্টি হবে। যেমন গত কয়েক দিন ধরে মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গের ওপরে থাকায় সেখানে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। আবার এই অক্ষরেখা যখন নিচে দক্ষিণবঙ্গের ওপর নেমে আসবে তখনই উত্তরে বৃষ্টি কমে গিয়ে দক্ষিণে বৃষ্টি বাড়বে। একে স্বাভাবিক বর্ষার বৃষ্টি বলে। দফায় দফায় বৃষ্টি হবে। অনেক বড় জায়গা জুড়েও নয় আবার অনেকটা সময় ধরে লাগাতার বৃষ্টিও নয়।
নিম্নচাপের বৃষ্টি
বর্ষা স্বাভাবিক নিয়মে চললে বঙ্গোপসাগরে বর্ষার চার মাস (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) গড়ে প্রতি মাসে দু থেকে তিনটে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার কথা। তার থেকে আরও অনেকটা বৃষ্টি পাওয়া যায়। একে নিম্নচাপের (Depression) বৃষ্টি বলে। কয়েকদিন লাগাতার মেঘলা আকাশ। অনেকটা জায়গা জুড়ে বিরামহীন ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি এর পরিচয়।
এল-নিনো এবং বর্ষায় তার প্রভাব
এল-নিনো কথাটি আমরা প্রথম শুনি ১৯৮৭ সালে। সেই বছর দেশজুড়ে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা খরা পরিস্থিতির কারণ হিসাবে সক্রিয় এল-নিনোকে দায়ী করেছিলেন। তবে সব সময় যে সরলরৈখিক নিয়মে এল-নিনোর জন্য বর্ষা কম হয় এমনটা নয়।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস এবছর সক্রিয় ও তীব্র এল-নিনো (El Nino)। সেই সঙ্গে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস এবছর বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার শতাংশ কম বা ৯৬ শতাংশ যা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বলেই গণ্য করা হয়। দেশে মোট বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হলেও দক্ষিণ, উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০০ শতাংশ বা তার থেকে সামান্য বেশি হবে। তাই এবছর বর্ষায় বৃষ্টিপাতের অসম বন্টনে দেশের বিভিন্ন অংশে কোথাও বন্যা আবার কোথাও খরা পরিস্থিতি তৈরি হবার আশঙ্কা থেকেই যাবে ।
এল-নিনো আসলে কী
স্বাভাবিক অবস্থায় প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে বাণিজ্য বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলভাগ থেকে উষ্ণ জল এশিয়ার দিকে সরে যায়। সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করার জন্য সমুদ্রের নিচ থেকে ঠান্ডা জল ওপরে উঠে আসে। প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে জল এবং বায়ু প্রবাহের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হয়। তাকে এল-নিনো বলে। এল-নিনো স্প্যানিশ শব্দ যার অর্থ ছোট ছেলে। এল-নিনোর বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ সমুদ্র জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কম হলে তাকে লা-নিনা বলে যার অর্থ ছোট মেয়ে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাসে সিলমোহর দিয়ে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ভাবে জানিয়েছেন যে জুন মাসেই এল-নিনো অবস্থা শুরু হয়েছে এবং এর তীব্রতা বাড়ছে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের বর্ষাকাল জুড়ে এল-নিনো সক্রিয় থাকছে এবং আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত তা বজায় থাকার সম্ভাবনা।
ভারতে মৌসুমি বায়ুর স্বাভাবিক ছন্দ শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরে জলের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে না। ইন্ডিয়ান ওসান ডাইপোলও তাতে বড় ভূমিকা নেয়। আবহবিজ্ঞানীদের মতে এল-নিনো অবস্থা বর্ষার প্রতিকূল হলেও এবার ইন্ডিয়ান ওসান ডাইপোল বর্ষার অনুকূলে রয়েছে।
আরও পড়ুন- রোদ, গরম, অস্বস্তি ! মুক্তি কবে দক্ষিণবঙ্গের ? জানাল আবহাওয়া দফতর
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন