Murshidabad News: নিমতিতা রাজবাড়ি সংরক্ষণের উদ্যোগ? ঘুরে দেখল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন
কালের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে বিশ্বম্ভর রায়ের ‘জলসাঘর’? যে ঠাকুর দালানে নিজের ছোট বউমা দয়াময়ীকে মাতৃজ্ঞানে পুজো করেছিলেন শ্বশুর কালীকিঙ্কর, ‘দেবী’ মাহাত্ম্যের সেই ঠাকুর দালান আদৌ বাঁচবে?
রাজীব চৌধুরী, নিমতিতা: বহু ইতিহাসের সাক্ষী মুর্শিদাবাদের নিমতিতা রাজবাড়ি ঘুরে দেখল রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। ভাগিরথী পাড়ের ধ্বংসপ্রায় ঐতিহ্যের প্রাসাদ শেষ পর্যন্ত কী তাহলে সংরক্ষণ হতে চলেছে? আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়রা।
কালের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে বিশ্বম্ভর রায়ের ‘জলসাঘর’? যে ঠাকুর দালানে নিজের ছোট বউমা দয়াময়ীকে মাতৃজ্ঞানে পুজো করেছিলেন শ্বশুর কালীকিঙ্কর, ‘দেবী’ মাহাত্ম্যের সেই ঠাকুর দালান আদৌ বাঁচবে? আপন খেয়ালে বয়ে চলা ভাগিরথীকে সাক্ষী রেখে যেন অতীত রক্ষার উদ্যোগপর্ব নীরবে ঘোষিত হল ১৫৭ বছরের পুরনো মুর্শিদাবাদের নিমতিতা রাজবাড়িতে।
বৃহস্পতিবার জরাজীর্ণ রাজবাড়ি ঘুরে দেখেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চার প্রতিনিধি, যার নেতৃত্বে ছিলেন ওএসডি বাসুদেব মালিক। কোথাও ভেঙে পড়েছে ছাদ। দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে চুন-সুরকি। ইটের ফাঁকে ফাঁকে আগাছার বংশবিস্তার। যেন নিশ্চিত মৃত্যুর প্রহর গুণছে বুড়ো রাজবাড়ি। অথচ ৩ সিনেমার সূত্রে বাঙালি হৃদয়ে চির অম্লান ভাগিরথী পাড়ের ভগ্নপ্রায় এই রাজপ্রাসাদ।
১৯৫৭ সালে ‘জলসাঘর’, ১৯৫৯ সালে ‘দেবী’, ১৯৬০ সালে ‘সমাপ্তি’ সত্যজির রায়ের তিন-তিনটি ছবির শ্যুটিং হয়েছে এই নিমতিতা রাজবাড়িতে। সেই সূত্রে দীর্ঘ দিন এই বাড়িতে সময় কেটেছে ছবি বিশ্বাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুরের। ১২৭২ বঙ্গাব্দে গৌরসুন্দর চৌধুরী ও তাঁর ভাই দ্বারকানাথ চৌধুরী চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের আওতায় নিমতিতা এস্টেট নামে জমিদারি স্থাপন করেন।
পাঁচ উঠোন ও দেড়শো কামরার ইতালিয়ান ধাঁচের রাজবাড়ি ভাঙতে ভাঙতে এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, হেরিটেজ ভবন হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক এই রাজবাড়িকে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধিদের পরিদর্শনের পর তাঁদের আশার আলো উজ্জ্বল হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের ওএসডি বাসুদেব মালিক বলেন, “আমরা পরিদর্শন করলাম, প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়া হবে কমিশনকে। হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার মতো এই বাড়ি।‘’ নিমতিতার শিক্ষক ও বাসিন্দা জুলফিকর আলি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আশায় রয়েছি এই রাজবাড়ি সংরক্ষণের জন্য এখানে সত্যজিৎ রায়ের শুটিং হয়েছিল। হেরিটেজ ঘোষণা করলে পর্যটনের উন্নতি হবে। অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হবে এলাকাবাসী। আমরা চাই দ্রুত বাস্তবায়িত হোক।‘’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহু স্মরণীয় ও বরণীয়দের স্মৃতিবিজড়িত এই রাজবাড়ি। কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কারক বাঙালি বিজ্ঞানী উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। শিশু সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়, সাহিত্যিক লীলা মজুমদার, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, দাদাঠাকুর কে আসেননি এই বাড়িতে! সংরক্ষণের সোনালি হাত নিমতিতা রাজবাড়ির হৃত গৌরব কীভাবে ফিরিয়ে আনে, এখন তারই প্রতীক্ষা।
আরও পড়ুন: Coochbehar News: পদে ফিরে দলেই সমালোচনার মুখে কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি