North 24 Parganas: BDO-কে বোতল ছুড়লেন TMC নেতা! হাবড়ায় তুলকালাম
Habra News: মহিলা বনাধিকারিককে হুমকি দিয়ে বিতর্কে রাজ্যের কারামন্ত্রী। সেই সময়েই হাবড়ায় বিডিওকে বোতল ছুড়ে মারার অভিযোগ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে।
সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: টেন্ডার নিয়ে বৈঠক চলাকালীন BDO-কে জলের বোতল ছুড়ে মারলেন তৃণমূল নেতা। অভিযুক্ত হাবড়া ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। অভিযোগ স্বীকার করে বিডিওর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ঘটনাকে ঘিরে সামনে এসেছে তৃণমূলের কোন্দল। আর এই ঘটনায় ফিরে এসেছে আরাবুল ইসলামের স্মৃতি। ভাঙড় কলেজে শিক্ষকের দিকে জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
বৈঠকের মাঝেই না কি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন তৃণমূল নেতা। অভিযোগ, BDO-কে জলের বোতল ছুড়ে মারলেন হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দলের মধ্যে শুদ্ধিকরণের বার্তা দিচ্ছেন, তখন উলটপুরাণ উত্তর ২৪ পরগনার হাড়া ২ নং ব্লকে।
টেন্ডার নিয়ে বৈঠক চলাকালীন রীতিমতো তুলকালাম বাঁধে BDO অফিসে। আরাবুল ইসলামের মতো বিতর্ক বাধালেন আরও এক তৃণমূল নেতা। প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার BDO অফিসে ছিল টেন্ডার নিয়ে বৈঠক। BDO সীতাংশুশেখর শীটের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাবড়া দুই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রতন দাস। ছিলেন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মল্লিক এবং কয়েকজন ইঞ্জিনিয়র। মিটিং চলাকালীন টেন্ডার নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং BDO-র মধ্যে। তখনই মেজাজ হারান সভাপতি রতন দাস।
সেই সময়েই টেবিলের ওপরে থাকা জলের বোতল নিয়ে ছুড়ে মারেন BDO-কে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তা লাগে কর্মাধ্যক্ষ ফজলুরের গায়ে লাগে। এরপর BDO-র বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে জেলাশাসক ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে চিঠি দেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
চিঠিতে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অভিযোগ, BDO ঠিকমতো কাজ করছেন না। অফিসে তিনি মত্ত অবস্থায় থাকেন। হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রতন দাস বলেন, 'ওঁর চেয়ার ছেড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলছে, আপনি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বোতল ছোড়াছুড়ি হয়েছে, কিন্তু BDO অশ্লীল ব্যবহার করেছেন আমাকে। উনি বলছে, আমাকে রাত ৭টা, ৮টার পরে কেউ ফোন করবে না। আমি একটু অন্যরকম ব্যস্ত থাকি। উনি মদ্যপান করে থাকেন।'
BDO-সভাপতি দ্বন্দ্ব ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের কোন্দল। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দাবি খারিজ করে BDO-র পাশে দাঁড়িয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ফজলুর রহমান মল্লিক বলেন, 'যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে , আমরা শুনলাম, সেই অভিযোগটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।'
বিজেপির তোপ:
এই ঘটনায় তোপ দেগেছে বিজেপি। দলের দাবি, কাটমানি নেওয়া বা বেআইনি কাজে বাধা দেওয়াতেই হেনস্থা। বিজেপির বারাসাত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, 'BDO তাদের কাটমানিতে বাধা দিচ্ছে, BDO তাদের বেআইনি অন্যায় অবৈধ টেন্ডারে বাধা দিচ্ছে। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতিগুলির একই অবস্থায় চলছে। কোথাও BDO অভিযোগ করছে, কোথাও অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না, নিভৃতে কেঁদে বেড়াচ্ছেন।' 'একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শাসক দলের নেতা জগ ছুড়ে মারবে এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা', কটাক্ষ বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের।
তৃণমূল বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, 'পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে বিডিওর ভাল সম্পর্ক থাকা উচিত। এটা অনভিপ্রেত ঘটনা। এই সমস্যা আর থাকবে না।'
এমন ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। অতীতে প্রাক্তন বিধায়ক ধীমান রায় তৎকালীন হাবরা ২-এর BDO-র সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন। অভিযোগ, লাথি মেরে BDO অফিসের দরজা ভেঙে ফেলেন প্রাক্তন বিধায়ক। ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল, ভাঙড় কলেজে ঢুকে অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে৷ ওই সময় ওই কলেজর পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি। এবার BDO-কে জলের বোতল ছুড়ে বিতর্ক বাধালেন হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি BDO জেলা প্রশাসনও এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।