East Burdwan : জামালপুরের শতাব্দী প্রাচীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাঁচাতে আদালতের দ্বারস্থ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, দায়ের জনস্বার্থ মামলা
বন্ধ হয়ে যাওয়া শতাব্দী প্রাচীন এক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ন্ত্রণে তা চালু করার আর্জি জানিয়ে আদালতের দরজায় কড়া নেড়েছেন বিরানব্বই বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক !
কমলকৃষ্ণ দে, জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান) : বন্ধ হয়ে যাওয়া শতাব্দী প্রাচীন এক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ন্ত্রণে তা চালু করার আর্জি জানিয়ে আদালতের দরজায় কড়া নেড়েছেন বিরানব্বই বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ! তাঁকে সমর্থন করে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন এক কৃষক। দু’জনে মিলে দায়ের করেছেন জনস্বার্থ মামলা। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের ঘটনা।
শতায়ু পেরনো দাতব্য চিকিৎসালয়। স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মব্যস্ততা ছেড়ে এখন নিঝুম। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে মূল ভবন। শুনসান পড়ে চিকিৎসক ও কম্পাউন্ডারদের কোয়ার্টার্স। এই ছবি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন দাতব্য চিকিৎসালয়ের।
পাঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা আশিস ভট্টাচার্য বলেন, সাপে কাটা রোগী, বিষ খাওয়া রোগী, সেলাইন, ডেন্টাল সব ধরনের পরিষেবা, ছোটখাট অপারেশন হত। আজ বন্ধ। শয়ে শয়ে মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসতেন। আজ ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলকে খোদাই করা তথ্য বলছে, ১৯১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর বর্ধমানের তৎকালীন ডিভিশনাল কমিশনার পি.এইচ. ওয়াডেল ইসোর হাত ধরে পথচলা শুরু করেছিল এই দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। অর্থাৎ এর বয়স প্রায় ১০৪ বছর !
এই হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থানীয় হৈমাবতীদেবীর জায়গার ওপর তৈরি বলে সাধারণের নাম অনুসারে নামকরণ হয় পাঁচড়া হৈমাবতী দাতব্য চিকিৎসালয়। অভিযোগ, একমাত্র চিকিৎসক গত ডিসেম্বরে অবসর নেওয়ার পর থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ পরিচালিত এই দাতব্য চিকিৎসালয় ধুঁকছিল। কয়েক মাস আগে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই চিকিৎসাকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দাবি, বিকল্প সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠায় গুরুত্ব হারিয়েছে দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র। এপ্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, এর প্রয়োজনীয়তা কমে গিয়েছে। চিকিৎসক অবসর নেওয়ার পর নতুন নিয়োগ হয়নি প্রয়োজন না থাকায়। কারণ, প্রতিটি ব্লকে স্বাস্থ্য ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এমনকী অঞ্চলেও আছে।
এই পরিস্থিতিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন গ্রামের বিরানব্বই বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং এক কৃষক। গত ১৯ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন তাঁরা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও জনস্বার্থ মামলাকারী গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, মামলা করেছি। এটা গরিব মানুষের দেশ। লোক ওষুধ পায় না। কতবার আমরা বলেছি, হাসপাতাল চালু করুন। কত দরখাস্ত করা হয়েছে, কিন্তু কিছুই করা হয় না।
পাঁচড়ার বাসিন্দা ও জনস্বার্থ মামলাকারী চিত্তরঞ্জন নন্দী বলেন, ১৯৭২ সালে প্রথম এমবিবিএস ডাক্তার। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ করে লোক। ২০২০ সাল থেকে বন্ধের মুখে। সব জায়গায় পিটিশন করেছিলাম। কোনও জায়গা থেকে সাড়া না পেয়ে মামলা করি আমি ও ৯২ বছরের শিক্ষক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়। আমরা চাই, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আওতায় আসুক ও চালু হোক।
জনস্বার্থ মামলার শুনানি আগামী ৫ অক্টোবর।