Tusu Utsav: আজ মকর সংক্রান্তি, চোখের জলে টুসু বিদায় রাঢ় বাংলার
Makar Sankranti: টুসু গানে গানে গ্রামগঞ্জ মাতিয়ে শোভাযাত্রা হাজির হয় স্থানীয় নদী ও পুকুরে
পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: আজ মকর সংক্রান্তি (Maka)। সারা পৌষ মাস (Poush Mash) জুড়ে ঘরে ঘরে টুসু (Tusu) আরাধনার পর রাঢ় বাংলার মানুষ আজ বিদায় জানালেন ঘরের মেয়ে টুসুকে। নাচ গানের সঙ্গে চোখের জল আর বিষাদের সুর মিলেমিশে রাঢ় বাংলা কামনা জানাল পরের বছর 'আবার এসো মা টুসু'।
টুসু রাঢ় বাংলার ঘরের মেয়ে। ঘরের মেয়েকে সারা পৌষ মাস জুড়ে ঘরে ঘরে জাগিয়ে রাখেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার গ্রামগঞ্জের মানুষ। মকর সংক্রান্তির আগের রাতে সারা রাত ধরে লোকায়ত সুরের গানে গানে টুসুর জাগরণ উদযাপন করেন মানুষেরা।
আজ ভোর থেকে শুরু হয় টুসু ভাসানের পর্ব। গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষেরা টুসুর চৌদল নিয়ে শোভাযাত্রা করে বের হন। টুসু গানে গানে গ্রামগঞ্জ মাতিয়ে শোভাযাত্রা হাজির হয় স্থানীয় নদী ও পুকুরে। সেখানে গান নাচে টুসু বন্দনা করে চৌদল ভাসিয়ে টুসুকে চোখের জলে বিদায় জানায় মানুষ। গানে গানেই গ্রাম গঞ্জের মানুষ কামনা করেন সামনের বছর আবার এসো মা টুসু।
টুসুর উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ আছে। অঞ্চল ভেদে সেই ব্যাখ্যাও আলাদা। ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, 'টুসু' শব্দটি অস্ট্রিক ভাষার অন্তর্গত। যার অর্থ ছোট পুতুল বা ছোট মেয়ে। কারও কারো মতে, তস্য নক্ষত্র থেকে 'টুসু' বা 'তুষু' নামকরণ। ভাষাবিদ্ সুকুমার সেনের কথায়, 'টুসু উৎসব তিষ্য নক্ষত্রে অনুষ্ঠিত শস্যোৎসবের প্রবহমান ধারা'। 'টুসু'র সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ইউরোপের 'Garden of Adonis' অনুষ্ঠানের। যা শস্যের পুনঃর্জন্মকে ত্বরান্বিত করার কৌশল।
আরও পড়ুন, গঙ্গাসাগরে শাহি স্নানে 'কুয়াশা' বিপত্তি, মুড়িগঙ্গা নদীতে বন্ধ ভেসেল
কারো কারো মতে, টুসু হল শস্যোৎসব; উর্বরতা উপাসনার সংস্কারজাত। টুসু শব্দটি এসেছে 'তুষ' শব্দটি থেকে। ধানের খোসাকে বলে তুষ। যার রং পাকা সোনার মতো। টুসু পুজো বা উৎসবের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তাই পুরোহিত লাগে না এই পুজোয়। বাড়ির মেয়েরা নিজেরাই গানের মাধ্যমে আরাধনা করে টুসুর। তাই বলা যেতে পারে ভক্তির পরিবর্তে ভালবাসাই এই উৎসবের প্রধান উপাদান।
এ সবের মধ্যেও আধুনিক নগর সভ্যতার চাপে কমছে টুসুকে নিয়ে উন্মাদনা। মানছেন বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই। কিন্তু তার মধ্যেও পৌষ পড়লেই বৃদ্ধা বেলা মালদের মতো কেউ কেউ ফিরে যান অতীতে। তিনি বলেন, 'টুসু আমাদের ঘরের মেয়ে। এখনও নিজের মতো করে টুসু গান করি। আগে এক পাড়ার টুসু অন্য পাড়ায় গিয়ে মালাবদল করা হত। তবে সব থেকে বেশি 'মন খারাপ' লাগে পৌষ সংক্রান্তির দিন টুসু বিসর্জনের সময়।'