Ramakrishna Mission 125th Anniversary : বলরাম মন্দিরে রামকৃষ্ণ মিশনের ১২৫ বছর উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান, কেমন ছিল শুরুর দিনটা?
Ramakrishna Mission 125th Anniversary : স্বামীজি যে কর্মকাণ্ডের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে গেছেন, তার আলো আজ গোটা বিশ্বকে আলোকিত করছে।
সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: শ্রীরামকৃষ্ণ ( Ramakrishna Mission ) সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘‘এখন থেকে দেড় হাজার বছর শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবতরঙ্গ গোটা বিশ্বকে প্লাবিত করবে।’’ সেই সঙ্ঘ আজ ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। রামকৃষ্ণ মিশনের ১২৫ বছর উদ্ যাপনের বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠান শেষ হল সোমবার। এদিন বিকেলে বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ( Ramakrishna Math & Ramakrishna Mission ) সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ-সহ মঠের বরিষ্ঠ সন্ন্যাসীরা।
কলকাতার বলরাম মন্দিরের যে ঘর থেকে রামকৃষ্ণ মিশনের সূচনা। সেখানেই সোমবার, এক বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়। দিনভর ছিল নানা অনুষ্ঠান, আয়োজন করা হয় বিশেষ পুজোর।
পয়লা মে, ২০২২। রামকৃষ্ণ মিশন পদার্পণ করে ১২৫ বছরে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এই ফলিত বেদান্তেরই ধারক ও বাহক হয়ে বিরাজ করছে গত ১২৫ বছর। এই যুগ্ম সংগঠন বিশ্বব্যপী কাজ করে চলেছে সর্বধর্ম সমন্বয় ও সেবার ভাবকে অবলম্বন করে। এটি একটি অনন্য আধ্যাত্মিক সংগঠন যা সর্ব অর্থেই অসাম্প্রদায়িক ও অরাজনৈতিক। তারই বর্ষপূর্তিতে সোমবার বিকেলে বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ-সহ মঠের বরিষ্ঠ সন্ন্যাসীরা। ১২৫ বছরের কর্মকাণ্ড, ও আগামী দিনের পথ চলার রূপরেখা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন তাঁরা। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক শশী পাঁজা। সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্যতম সহ অধ্যক্ষ স্বামী সুহিতানন্দ। এদিনের ভক্ত সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
পয়লা মে, ১৮৯৭। কলকাতার বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণের ত্যাগী ও গৃহী ভক্তদের নিয়ে এক সভা ডাকেন স্বামী বিবেকানন্দ। সভার শুরুতেই তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের নামে একটি সঙ্ঘ স্থাপনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘নানা দেশ ঘুরে আমার ধারণা হয়েছে, সঙ্ঘ ব্যতীত কোনও বড় কাজ হতে পারে না। আমরা যাঁর নামে সন্ন্যাসী হয়েছি, আপনারা যাঁকে জীবনের আদর্শ করে সংসার আশ্রমে কার্যক্ষেত্রে রয়েছেন, যাঁর দেহাবসানের বিশ বছরের মধ্যেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জগতে তাঁর পূণ্য নাম ও জীবনের আশ্চর্য প্রসার হয়েছে, এই সঙ্ঘ তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা প্রভুর দাস। আপনারা এ কাজে সহায় হন।’’ উপস্থিত সবাই স্বামীজির এই প্রস্তাব সমর্থন করলেন। তারপর আরও ঠিক হল যে, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে ইতিমধ্যেই যে সব সমভাবাপন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, এই সঙ্ঘ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে এবং সঙ্ঘের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাদের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করবে।
৫ মে, দ্বিতীয় সভায় নতুন সঙ্ঘটির নাম ঘোষণা করা হল। নাম হল- রামকৃষ্ণ মিশন অ্যাসোসিয়েশন। স্বামীজি তার সাধারণ সভাপতি হলেন এবং কলকাতা কেন্দ্রের সভাপতি হলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ। সম্পাদক হলেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র। স্বামীজি চেয়েছিলেন, শ্রীরামকৃষ্ণের ত্যাগী ও গৃহী শিষ্যরা যৌথভাবে এই সঙ্ঘের পরিচালনার দায়িত্ব নিক। কিন্তু, পরবর্তীকালে মিশনের কাজকর্মের ভার মূলত ত্যাগী শিষ্যদের উপরই পড়ে। এর চার বছর পর, স্বামীজি সম্পাদিত একটি ট্রাস্ট ডিডের মাধ্যমে রামকৃষ্ণ মঠ আইনানুগ স্বীকৃতি লাভ করে। ‘রামকৃষ্ণ মিশন অ্যাসোসিয়েশন’ একটি রেজিস্টার্ড সোসাইটি রূপে আইনানুগ স্বীকৃতি লাভ করে ১৯০৯ সালের ৪ মে। ১৮৯৭-এর পয়লা মে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সঙ্ঘের তখন থেকে আইনসম্মত নাম হয় রামকৃষ্ণ মিশন। স্বামীজি যে কর্মকাণ্ডের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে গেছেন, তার আলো আজ গোটা বিশ্বকে আলোকিত করছে।