RG Kar Medical Student Death: মহিলা পুলিশদেরও উত্যক্ত করতেন! নির্বিকার RG কর কাণ্ডে ধৃত সিভিক, বলছেন, ‘ফাঁসি দিলে দিন’
Medical Student Death: সঞ্জয়ের সিভিক ভলান্টিয়ার পরিচয় নিয়েও শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
পার্থপ্রতিম ঘোষ, রঞ্জিত সাউ ও সৌমেন চক্রবর্তী: RG কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগে, গ্রেফতার করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। লালবাজারের সূত্রের দাবি, ধরা পড়ার পর অপরাধ স্বীকার করলেও অনুতপ্ত নন সঞ্জয়। উল্টে তদন্তকারীদের নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলেছেন, "ফাঁসি দিলে দিয়ে দিন"। মাঝে মধ্যেই মহিলা পুলিশকর্মীদের ফোন করে সঞ্জয় উত্যক্তও করলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। (RG Kar Medical Student Death)
নৃশংস, নারকীয়, বর্বরোচিত বললেও কম বলা হয়। RG কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগে, গ্রেফতার করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে। সঞ্জয়ের মা জানেন, ছেলে পুলিশে চাকরি করেন। পুলিশ নয়, সঞ্জয় সিভিক ভলান্টিয়ার জানালে বলেন, "যা০ই হোক, আমি জানি না। আমি পুলিশটুকুই জানতাম।" (Medical Student Death)
সঞ্জয়ের সিভিক ভলান্টিয়ার পরিচয় নিয়েও শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, "আমাদের কাছে অপরাধী উনি। যেই হোন না কেন, সবার আগে অপরাধী। এমন জঘন্য অপরাধ করেছেন, ওঁর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি আমরা। ওঁকে প্রশ্ন করছি। জানার চেষ্টা করছি, কেন ওখানে গিয়েছিলেন। তাঁর সেখানে যাওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধর্ষণ এবং খুনির মামলা দায়ের হয়েছে।"
ধৃত সঞ্জয় কি তাহলে বরাবরই অপরাধমনস্ক ছিলেন? মহিলাদের প্রতি তাঁর আচরণ কি সন্দেহজনক ছিল? এই প্রশ্ন উঠছে লালবাজার সূত্রে পাওয়া কিছু খবরের জন্যই। জানা যাচ্ছে, মহিলা পুলিশ কর্মীদের মাঝে মধ্যেই ফোন করে উত্যক্ত করতেন সঞ্জয়। কলকাতা পুলিশের একটি সংগঠনের হয়ে সেবামূলক কাজে RG কর মেডিক্যাল কলেজে রোগীদের খোঁজ-খবর নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর।
২০১৯ সালে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পান সঞ্জয়। কলকাতা পুলিশের হয়ে বিপর্যয় বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু নিয়ম বেঙে উল্টোডাঙার ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাকে থাকেন তিনি। পরিচিতদের মধ্যে 'গুণধর' হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। প্রতিবেশীরা বলেন, "ও ভাল ছিল না। জীবনে ভাল হবে না ওর। ছেলে হিসেবে একেবারেই ঠিক নয়। অনেকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। অনেক লোকের টাকা নিয়েছিল বলে শুনেছি। ফেরত দিতে পারেনি। এখান থেকে চলে গিয়েছে।"
সিভিক ভলান্টিয়ারদের আচরণ নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে আগেও। পুলিশের সঙ্গে থাকার ফলে এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দাপট এখন মাত্রাছাড়া বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ ওঠে, তাঁরা পুলিশের মতো শৃঙ্খলাপরায়ণ নন। পুলিশের মতো নিয়মানুবর্তিতার পাঠ, প্রশিক্ষণও তাঁদের নেই। ক্ষমতা হাতে পেয়ে তাঁদের একটা বড় একাংশই বার বার হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। দায় কম, অলিখিত ক্ষমতা বেশি, আর তার জেরেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশের দৌরাত্ম্য বা রবার সামনে চলে আসছে। কখনও বুট পরা পা বুকে তুলে দেওয়া, কখনও আবার, সিভিক ভলান্টিয়ারের মারে স্কুটার আরোহীর মৃত্যু বা পিকআপ ভ্যানের চালককে মারধর করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ। বিভিন্ন সময়, সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে নানা ধরণের এক্তিয়ার বর্হিভূত কাজ ও চাঞ্চল্য়কর ঘটনায় জড়িত থাকার ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বলেন, "এই দুঃসাহস কোথা থেকে পেল? কী তার ক্ষমতা? কলকাতা পুলিশের গায়ে কালি ছিটিয়ে দিয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।" কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বিকাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সিভিক ভলান্টিয়ারের এই বেপরোয়া এই মনোভাবের কারণ হল আমাদের প্রশাসন। প্রশাসনিক স্তর থেকে এদের ঠিক মতো দেখা হচ্ছে না। কেন প্রশিক্ষণ দিয়ে ছাড়ছে না। বেতন পায় ওরা। অন্তত তিন মাসের প্রশিক্ষণ হোক!"
যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, "সিভিক ভলান্টিয়ারও আমাদের সমাজের মধ্যে থেকেই আসে। এতজন ভাল করে কাজ করছেন, পরিষেবা দিচ্ছেন, ব্যতিক্রমী ভাবে যদি কেউ এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন, তার জন্য সকলকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়।" কিন্তু বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "এমডি পাঠরতার যদি এই সুরক্ষা হয়, তাহলে কলকাতা থেকে ৪০০-৫০০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের কোনও মহিলা, যাঁরা পড়াশোনার সুযোগও হয়নি, তাঁর নিরাপত্তা কী?"
এবার, খাস শহরের নামজাদা মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে ঢুকে, এক কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায়। ফাস্টট্র্যাক কোর্টে বিচার করে দোষীকে দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি করেছেন বিশিষ্টদের একাংশ। 'দেশবাঁচাও গণ মঞ্চে'র ব্যানারে এই দাবিতে সই করেছেন গায়ক সৈকত মিত্র, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, নচিকেতা চক্রবর্তী এবং কবি জয় গোস্বামীরা।