Sovon-Ratna Divorce Case: 'আমি যখন হাত ধরি তখন ছাড়ি না, বৈশাখী রয়েছেন, ছিলেন', হাইকোর্টে যাওয়ার ভাবনা শোভনের
Divorce Case Cancelled: শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা এদিন খারিজ করে দেয় আলিপুর আদালত।

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : "বৈশাখী রয়েছেন, ছিলেন...আমি সেদিনও বলেছিলাম...আজও বলি...আমি যখন হাত ধরি তখন কিন্তু ছাড়ি না।" রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা খারিজ হওয়ার পর এমনই মন্তব্য করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা এদিন খারিজ করে দেয় আলিপুর আদালত। ২০১৭ সাল থেকে আলিপুর আদালতে বিচ্ছেদের মামলা চলছিল তাঁদের। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছিলেন শোভন। শোভনের সঙ্গে থাকতে চান বলে আদালতে পাল্টা আবেদন করেছিলেন রত্না। কিন্তু, আজ আদালত দুই জনের আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টে যাওয়ার ভাবনা-চিন্তা করছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই রায়ের পর এবিপি আনন্দকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দেন শোভন-বৈশাখী। রত্নার প্রতিক্রিয়া, "এই রায় সমাজের উপর খুব বড় প্রতিফলিত হবে।"
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য
এরপর কী ? এবিপি আনন্দর প্রতিনিধির এই প্রশ্নের জবাবে শোভন বলেন, "এটা একটা বিচিত্র রায় ! এ রায়ের ব্যাখ্যা যে যার নিজের মতো করবে। কিন্তু আমি মনে করি, যে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা আমি করেছিলাম, তার যথেষ্ঠ গ্রাউন্ড ছিল। তার ষথেষ্ঠ যুক্তি ছিল-প্রমাণ ছিল, সমস্ত কিছু পেশ করেছিলাম। রায় একটা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি, আইনগতভাবে যে রেস্টিটিউশনের দাবি রত্না চট্টোপাধ্যায় করেছেন, সে রায়ও খারিজ করে দিয়ে...প্রমাণ করে দিয়েছি যে এখানে হার-জিতের প্রসঙ্গেও এর কোনও ব্যাখ্যা হয় না। সোজা কথায়, ডিভোর্স ডিক্রি ছাড়া এখানে কোনও বিকল্প নেই। এটা হল বাস্তব সত্য। কিন্তু, রায় যেহেতু এসেছে, আমি সেই নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু, যে বহিঃপ্রকাশ করা হয়েছে আদালতে দাঁড়িয়ে তাতে আমি বলি, পাগলের গো-বধেও আনন্দ।"
তাঁর সংযোজন, "দীর্ঘ আট বছর ধরে আমি যে লড়াই করেছি, যে সত্যের উপর লড়াই করেছি, যে কারণে লড়াই করেছি, যে কারণে বিবাহ-বিচ্ছেদ করতে চেয়েছি, তাতে এখনও বিশ্বাস করি। তাতে আমি স্টিক করে আছি। তারজন্য সামাজিক বিচ্ছেদ তো হয়েই গেল, আইনে যেটুকু সুতোয় লাগিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে, সেটা থেকেও কী করে বিচ্ছেদ করতে হয়, সেই পদ্ধতির জন্য যা পর্যালোচনা করা দরকার সেটা নিশ্চয়ই আলোচনা করব। যে পদ্ধতিতে করতে হয়, সেই পদ্ধতি নিশ্চয়ই আমি অবলম্বন করব। বৈশাখী রয়েছেন, ছিলেন...আমি সেদিনও বলেছিলাম...আজও বলি...আমি যখন হাত ধরি তখন কিন্তু হাত ছাড়ি না। আমি বিশ্বাস করি বৈশাখীর সঙ্গে যে বন্ধনটা সেটা হৃদয়ের বন্ধন। পরস্পর বোঝাপড়া, পরস্পর ভালবাসা, পরস্পরের চিন্তা-ভাবনার একাকিত্বে ...সেই সম্পর্ক কতটা শক্তিশালী, কতটা দামী আমার কাছে, সেটা আমি জানি। আমরা দু'জনেই বিশ্বাসী ...সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে। কোনও শক্তি এসে এর থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।"
কী বললেন রত্না চট্টোপাধ্যায় ?
আট বছরের লড়াইয়ের একটা ধাপ শেষ হল। আমি আট বছর ধরে অন্যায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি আমার বাচ্চাদের জন্য। আমার এক ছেলে, এক মেয়ে...আপনারা সকলে জানেন। তাদের উপর মানসিকভাবে যেরকম অত্যাচার করা হয়েছে, সেই লড়াইটাই আমি আট বছর ধরে লড়লাম এবং আমার সঙ্গে আমার শ্বশুরবাড়ি, আমার বাপেরবাড়ি এবং এই সমস্ত আইনজীবীরা আট বছর ধরে লড়াই করেছেন। আজ আমি বিশ্বাস করি, আমাদের যে রায়টা এটা সমাজের উপর খুব বড় প্রতিফলিত হবে। কারণ, পুরুষ-শাসিত সমাজে মহিলারা যেভাবে নির্যাতিত হন, ক্ষমতার কাছে তাঁরা হেরে যান, আমি সেই লড়াইটা দিতে পেরেছি।
রত্না-শোভনের ছেলে কী বললেন ?
খুশি। এইজন্য খুশি যে, আজকে বিচারক যে রায় দিয়েছেন, সেটা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে পুরো রাজ্যে। সমাজে পুরুষদের বেশি অ্যাডভান্টেজ দেওয়া হয়। তাঁর নিষ্ঠুরতা...তিনি যা করে গেছেন...আমার মায়ের মানহানি থেকে শুরু করে নিজের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না রাখা, সবকিছু করেও আজ এসে যাঁরা মূল সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। আর সেটার জন্য শুধু আমার মা জেতেনি, এজন্য বাংলা, ভারত, পৃথিবীতে অনেক মহিলা আছেন, যাঁরা এখান থেকেই জোর পাবেন যে, দে ক্যান অলসো ফাইট ব্যাক। আই অ্যাম ওপেনিং মাই আর্মস অ্যান্ড আই অ্যাম টেলিং মাই ফাদার দ্যাট, প্লিজ কাম-ব্যাক, নাথিং ইজ টু লেট অ্যান্ড উই উইল ফিক্স ইট।
কী প্রতিক্রিয়া বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ?
খাতায় কলমে রত্না চট্টোপাধ্যায় এখনও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, না, সে তো গতকালও ছিলেন। আজ আছেন। আগামীকাল থাকবেন কি না, সেটা হায়ার কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে। যখন আমার আর ওঁর মধ্যে বন্ধন গড়ে উঠেছে, তখনও এই সত্যটা সত্যই ছিল যে, ও ডিভোর্স কেস লড়ছিল। আজও সেই লড়াইটা জারি আছে। আমাদের সম্পর্কের মূল রসদটাই জোগায় আমাদের লড়াইগুলো। আমাকে আর ওকে নানারকম লড়াই করতে হয়েছে। তাতে সমস্ত লড়াইয়ে জিতে এগিয়ে গেছি। তাতে আমাদের সম্পর্কে কোনও রেখাপাত ঘটেনি, একদিকে শোভনের জয়, একদিকে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের জয়। এই ছোট ছোট হিসাব দিয়ে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপ্তি মাপা যাবে না।






















