West Bengal Voter List Revision: বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলি, ফাঁকা বাড়িতে আটকে দিতে হবে দরজায়, বাংলায় SIR-এর তোড়জোড় শুরু
West Bengal Special Intensive Revision: ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।

কলকাতা: বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই বুথ স্তরের অফিসার বা BLO-দের ট্রেনিং দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। CEO-র দফতর থেকে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, কী করতে হবে BLO-দের। বলা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণনার ফর্ম দেবেন বুথ লেভেল অফিসাররা। সেই সময় সঙ্গে নিজেদের পরিচয়পত্র রাখতে হবে তাঁদের। ফর্ম দেওয়া এবং সেই ফর্ম নিয়ে আসার দায়িত্বও BLO-দের। কেউ বাড়িতে না থাকলে দরজায় ফর্ম লাগিয়ে রেখে আসতে হবে। সেই ফর্ম সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে তিন বার কোনও বাড়িতে যাবেন। বাড়ি, বাড়ি যাওয়া শুরু করার আগে বুথ লেভেল এজেন্টদের সঙ্গে মিটিং করবেন BLO-রা। (West Bengal Voter List Revision)
বিহারে ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গেও একই কাজে হাত দিচ্ছে কমিশন। সেই মর্মে BLO-দের কাছে নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি এনিউমারেশন ফর্ম পৌঁছে দিতে হবে BLO-দের। বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে ফর্ম দিতে হবে। বাড়িতে লোক না থাকলে, ফর্ম বাড়িতে পৌঁছে দিতে এবং সংগ্রহ করতে তিন বার করে যেতে হবে তাঁদের। এই গোটা সময়ে নিজেদের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। ভোটার তালিকা বিশেষ সংশোধন শুরু হলে, বিভিন্ন দলের যে এজেন্ট রয়েছেন বুথ স্তরে, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে BLO-দের। গোটা বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে গেল। (West Bengal Special Intensive Revision)
ভোটার তালিকা সংশোধনে যে ফর্ম দেওয়া হবে, তাতে ভোটারের এপিক নম্বর থাকবে, ভোটার কার্ডের ছবি থাকবে বাঁ দিকে। ডান দিকে বর্তমান সময়ের নিজের ছবি বসাতে হবে। ফর্মটি পূরণ করে ১১টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি দিতে হবে, সেটি পাসপোর্টও হতে পারে, জন্মের শংসাপত্রও হতে পারে। ২০০২ সালের আগের ভোটার যদি হন কেউ, তাঁকে কোনও তথ্য দিতে হবে না। তার পরের হলে, নথি দিতে হবে। তবে পশ্চিমবঙ্গে কমে থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হবে, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে প্রস্তুতি চরমে উঠেছে।
এ নিয়ে তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, "তিনবার যেতে হবে বুঝলাম। কিন্তু কখন? ঘণ্টায় একবার করে গেলেও তিন বার হয়। কেউ যদি ১০-১৫ দিনের জন্য বাইরে গিয়ে থাকেন, তাঁর নাম কি উঠবে না? সেই অর্থে মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, অন্য রাজ্যে স্থানান্তরে নাম বাদ যাওয়া, বিয়ের পর অন্যত্র চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে তালিকা সংশোধন হয়। তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু এখানে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন নাগরিকত্ব যাচাই করতে পারে না। SIR-এর নামে যারা ঘুরিয়ে NRC করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ আমাদের। এখনও বহু মানুষ বন্যার জলে ডুবে রয়েছেন, প্রতিবছর বন্যা হয়, প্রাণ বাঁচাবেন, না ঠাকুরদার কাগজ? আসলে গরিব মানুষরা বেশি সমস্যায় পড়বেন।"
CPM নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "রিভিশন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর আগে সব দলের বৈঠক হয়। BLO- নিযুক্ত করা হয়। চালু পদ্ধতির বাইরে এক্ষেত্রে স্পেশ্যাল করতে হচ্ছে কেন? সর্বদল বৈঠক না ডেকে কেন করতে হচ্ছে? অন্দর মেঁ কুছ কালা হ্যায়। বহুত কালা হ্যায়। রিভিশনের উদ্দেশ্য হল মৃতের নাম বাদ দেওয়া, ডাবল এন্ট্রি বাদ দেওয়া, পুরনো আবেদন খতিয়ে দেখে নতুন ভোটার যুক্ত করা। কিন্তু এক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাজ করা হচ্ছে নাকি আসলে তথ্য তালাশ করা হচ্ছে? পরিযায়ী শ্রমিক কি বাড়িতে থাকে? আসলে মানুষের নাম বাদ দিতে অথবা মানুষদের সন্দেহের তালিকায় ফেলে দেওয়াই লক্ষ্য। অসমে দেখুন, সন্দেহজনক ভোটার বলে দিচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চলছে। বাংলায় খুঁজে খুঁজে সন্দেহজনক নাগরিক করতে চায়, নাগরিকত্বের প্রশ্ন তুলতে চায়, তথ্য তালাশ করতে চায়। এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়, জনসংখ্যা গণনার আওতায় পড়ে। জেনে শুনে মানুষকে বিপদে ফেলার মনোভাব। স্বাভাবিক সংশোধন ঠিক আছে, কিন্তু অস্বাভাবিক সংশোধন ভাল নয়।"
কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "এসব আগে হয়েছে, কয়েক বার। নির্বাচন কমিশন করতে পারে। কিন্তু এবার এই বিশেষ সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রমাণের চেষ্টা হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে ভোটার অধিকার হরণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই আমাদের প্রতিবাদ। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় যে প্রশ্ন উঠছে, তা মোটেও শুভ নয়। সুপ্রিম কোর্টে এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার শুনানি হবে। এবারের গণনা বিতর্কিত। আমরা বলিনি মৃত ভোটারের নাম থাক তালিকায়। পশ্চিমবঙ্গে দু'টি নির্বাচন ছাড়া বাকি সব প্রহসন। দু'টি নির্বাচনেও ঝামেলা হয়। অবশ্যই স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। কিন্তু মানুষ ভোটাধিকার হারান, সেটা মানতে পারব না। তাই আমরাও কংগ্রেসকে বলেছি, মানুষকে সাহায্য় করা হোক। রাজ্য সরকারকেও বলব, ভোটারদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুক।"
যদিও বিজেপি নেতা রাহুল সেনার বক্তব্য, "তৃণমূল চায় ভোটার তালিকা যেমন আছে তেমন থাকুক। কোনও সংশোধন না হোক। কারণ হলেই বুয়ো ভোটার, বাংলাদেশি মুসলমান, অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাম বাদ পড়ে যাবে। কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছে, বার বার প্রয়োজন হলে ফর্মন ফিলআপ করিয়ে সব যাচাই করা। অর্থাৎ শুদ্ধতা চাইছে কমিশন। তাহলে একবার যেতে বলতো। শুদ্ধতাকে পরখ করে নিতে চাইছে। এতেই আপত্তি তৃণমূলের। কারণ তাতে তাদের সর্বনাশ। তাই নানা তথ্য ছড়িয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কমিশন একেবারে স্থির ভাবে কর্তব্য পালন করছে, যাতে সঠিক ভোটারদের নাম থাকে। ভুয়ো ভোটার, বিদেশিদের নাম বাদ যায়। কমিশনকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।"






















