আসনের হেরফের হলেও ২০১৪ সালে অনুমান ছিল সঠিক, বুথ ফেরত সমীক্ষায় এবারও কি জনতার মন বুঝেছে মিডিয়া? ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই উত্তর
গতবারের মতো এবারও কি ট্রেন্ড ধরতে পেরেছে সমীক্ষকরা? নাকি সব অঙ্কই পাল্টে দেবে ২৩ তারিখের ফল? উত্তর জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও ৭২ ঘণ্টা।
নয়াদিল্লি: রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোটদান পর্ব। সাত দফা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ রায় দিয়েছে। ২৩ তারিখ ফল ঘোষণা। সেদিনই ঠিক হবে, আগামী ৫ বছর দিল্লির ক্ষমতা থাকবে কার হাতে? যদিও ভোট মিটতেই গণমাধ্যম তার বুথ ফেরত সমীক্ষায় একটা আভাস ইতিমধ্যেই দিয়ে ফেলেছে। দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে যে সমীক্ষা রবিবার সম্প্রচারিত হয়েছে এবং সোমবার সকালেও যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এটা ‘কার্যত নিশ্চিত’, আগামী ১৫ অগস্ট দিল্লির লাল কেল্লায় তেরঙ্গা তুলছেন নরেন্দ্র মোদিই।
নিউজ এইটটিন, ইন্ডিয়া টুডে ও অ্যাক্সিস সহ নিউজ টোয়েন্টি ফোর এবং চাণক্য তাদের যৌথ সমীক্ষায় দেখিয়েছে, ২০১৯ নির্বাচনে তিনশতাধিক আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স। নিউজ এইটটিন-এর বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেতে পারে ৩৩৬টি আসন। ইন্ডিয়া টুডে ও অ্যাক্সিস, যৌথ সমীক্ষায় দেখিয়েছে, এনডিএ কেবল ৩০০ আসনই পাচ্ছে না, বিজেপির বিজয় রথ সাড়ে তিনশোও ছাড়াতে পারে। এই সমীক্ষায় গেরুয়া শিবিরের ৩৩৯ থেকে ৩৬৮ আসন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে। নিউজ টোয়েন্টি ফোর এবং চাণক্যের সমীক্ষা বলছে এনডিএ পেতে পারে ৩৩৬ থেকে ৩৬৪টি আসন। একমাত্র এবিপি নিউজ ও নিয়েলসেন (২৭৭) এবং নেটা ও নিউজ এক্স (২৪২) তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখিয়েছে, ম্যাজিক ফিগারের আগেই থামছে এনডিএ।
এই বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশিত হতেই বিজেপির চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি ইভিএম লুঠের মতো বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন। বিরোধীদের অনেকেই বলছেন, বিজেপি ন্যাশনাল মিডিয়াকে প্রভাবিত করেছে। ২৩ তারিখের আগে বিজেপি-র পালে হাওয়া তুলে আসলে বিরোধী ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গ অনুযায়ী ২০১৪ সালের ছবিটা একবার সামনে রাখা যাক। ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে ভুল প্রমাণিত হওয়া অনেক সংবাদমাধ্যমই তাদের সম্ভাবনা মিলিয়ে দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। ওই বছর নিউজ টোয়েন্টি ফোর এবং চাণক্য তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখিয়েছিল, এনডিএ ৩৪০টি আসন পাবে। শেষ পর্যন্ত এনডিএ পেয়েছিল ৩৩৬টি আসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। এবিপি নিউজ নিয়েলসেন, সিএনএন-আইবিএন এনডিএ-কে দিয়েছিল সর্বোচ্চ ২৮১টি আসন। এনডিটিভি-র ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, এনডিএ পেতে পারে ২৭৯টি আসন আর ইউপিএ পেতে পারে ১০৩টি আসন। আদতে তার থেকে অনেক বেশি আসনই গিয়েছিল মোদি-শাহর ঝুলিতে। অন্যদিকে কংগ্রেসের ভরাডুবিতে আসন কমেছিল ইউপিএ জোটেরও।
তবে যে বিষয়ে সিংহভাগ গণমাধ্যমই একেবারে সঠিক ছিল, তা হল তারা ট্রেন্ড ধরতে পেরেছিল। আসনের বিচারে হেরফের হলেও কংগ্রেসের নিশ্চিত হার এবং দেশের জনতার মন বুঝতে কোনও ভুলই করেনি সংবাদমাধ্যম। এখন প্রশ্ন, গতবারের মতো এবারও কি ট্রেন্ড ধরতে পেরেছে সমীক্ষকরা? নাকি সব অঙ্কই পাল্টে দেবে ২৩ তারিখের ফল? উত্তর জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও ৭২ ঘণ্টা।