ABP Live Exclusive: ক্যাটরিনাকে শাড়ি পরানোর 'সিক্রেট' জানালেন কলকাতার বধূ ডলি জৈন
দেশের সবথেকে বড়লোক আম্বানীদের পরিবারের মেয়েদের শাড়ি পরান তিনি। এমন কোনও সেলিব্রেটি মহিলা নেই, যাঁকে শাড়ি পরাননি ডলি জৈন। সদ্য বিয়ে হওয়া ক্যাটরিনাকেও শাড়ি পরানোর গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধেই।
দেশের সবথেকে বড়লোক আম্বানীদের পরিবারের মেয়েদের শাড়ি পরান তিনি। বলিউডের সবথেকে বেশি পারিশ্রমিকের অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনকে শাড়ি পরান তিনি। দেশের ক্রিকেট ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলির বিয়েতে তাঁর স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে শাড়ি পরান তিনি। মিস ওয়ার্ল্ড প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকেও শাড়ি পরানোর জন্য ডাক পড়ে তাঁর। হ্যাঁ, দেশের এমন কোনও সেলিব্রেটি মহিলা নেই, যাঁকে শাড়ি পরাননি ডলি জৈন। সদ্য বিয়ে হওয়া ক্যাটরিনাকেও শাড়ি পরানোর গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধেই। ভিকি-ক্যাটরিনার শুভপরিণয় সম্পন্ন হওয়ার পরেই এবিপি লাইভের প্রশ্নের ডালির সামনে ডলি জৈন।
এবিপি লাইভ : ক্যাটরিনা কাইফকে শাড়ি পরানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ডলি জৈন : দেখুন যখন আমার কাছে ফোন আসে, তখন জানতাম না যে, আমাকে ক্যাটরিনাকে শাড়ি পরাতে হবে। অ্যাডভ্যান্স দিয়ে ওনারা আমার ডেট নিয়ে নেন। আমি ভেবেছিলাম, এটাও আরও একটা নর্ম্যাল বিয়ের কাজই আমার জন্য, যেখানে বধুকে শাড়ি পরাতে হবে। কিন্তু, বিয়ের ১০ দিন আগে জানতে পারি যে, এবার আমায় ক্যাটরিনাকে শাড়ি পরাতে হবে। ভেবে খুব খুশি হয়েছিলাম। বেশ উত্তেজনাও অনুভব করছিলাম। কারণ, অনেক সেলিব্রেটিদের শাড়ি পরালেও আমার অনেকদিন ধরেই স্বপ্ন ছিল যে, ক্যাটরিনার যখন বিয়ে হবে তখন যেন আমি ওঁকে শাড়ি পরাতে পারি। মাঝে-মাঝেই কল্পনা করতাম, ক্যাটরিনার মতো সুন্দরীকে শাড়ি পরিয়ে নববধুর সাজে দেখতে কেমন লাগবে। তাই, অবশেষে যখন ক্যাটরিনাকে শাড়ি পরালাম, ওই মুহূর্তটা আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের ছিল। যেন একটা স্বপ্নপূরণ ছিল।
এবিপি লাইভ : আপনি তো কলকাতার মানুষ? সেই হিসেবে কেমন লেগেছে?
ডলি জৈন : আমি আসলে বেঙ্গালুরুর মেয়ে। সেখানেই বড় হয়েছি। কিন্তু, আমার বিয়ে হয়েছে কলকাতায়। আমার শ্বশুরবাড়ি কলকাতায়। তাই ক্যাটরিনার বিয়েতে ওঁকে শাড়ি পরানোটা আমার থেকেও বেশি গর্বিত কলকাতাবাসীরা হবে। কারণ, সারা দেশের, সারা পৃথিবীর এত মানুষ থাকতে কলকাতারই ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়, কলকাতারই আমাকে ড্রেপ আর্টিস্ট হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। তাই আমার সবসময় মনে হয়েছে, এটা কলকাতার গর্ব।
এবিপি লাইভ : ক্যাটরিনা-ভিকির বিয়ে নিয়ে তো অত্যন্ত গোপনীয়তা ছিল। অনেক নিরাপত্তার ব্যাপার। তো এত নিরপত্তার বলয়ের মধ্যে কাজ করাটা কেমন অভিজ্ঞতার?
ডলি জৈন : হ্যাঁ, এটাও একটা বিষয়। খুব চাপ থাকে আমাদের মাথায়। সেটা দীপিকা পাড়ুকোন থেকে ক্যাটরিনা সবক্ষেত্রেই প্রায় একরকম। আমাদের ফোন আমাদের কাছে থাকে না। চারিদিকে সবসময় দেখা হয় কোথাও কোনও ক্যামেরা আছে নাকি। খুব কম মানুষের উপস্থিতিতে বিয়েটা হয়। আমিও এটা ভালভাবে নিই। কারণ, যাঁদের বিয়ে, তাঁদেরও তো বিয়েটা উপভোগ করা উচিত। অনেক অতিথি হলে, পাত্র-পাত্রী বিয়েটা ঠিক মতো উপভোগ করতে পারে না। কিন্তু, ক্যাটরিনা এবং ভিকি কী সুন্দর করে সব নিয়ম-কানুন মেনে বিয়েটা করলো। সেটা কিন্তু, এই আঁটোসাটো নিরাপত্তার জন্যই।
এবিপি লাইভ : শুনেছি, আপনি অনেকরকমভাবে শাড়ি পরাতে পারেন। কতরকমভাবে?
ডলি জৈন : হ্যাঁ, আমি একটা শাড়ি ৩২৫ রকমভাবে পরাতে পারি।
এবিপি লাইভ : ক্যাটরিনাকে কতরকমভাবে শাড়ি পরিয়েছেন?
ডলি জৈন : ক্যাটরিনাকে ১১ রকমভাবে শাড়ি পরিয়েছি। আলাদা-আলাদাভাবে। আপনি যদি এমন কাউকে শাড়ি পরাতে চান যিনি শাড়ি পরতে অভ্যস্থ নন, তাহলে অসুবিধা হবে। কিন্তু ক্যাটরিনা খুব ভালো শাড়ি ক্যারি করতে পারে। তাই ওঁকে শাড়ি পরানোতে কোনও অসুবিধাই হয়নি। বরং, খুব খুব ভালো লেগেছে।
এবিপি লাইভ : এই যে ক্যাটরিনাকে এত সুন্দর লাগছিল, এর ক্রেডিট তো পুরো আপনার।
ডলি জৈন : একদম নয়। ক্যাটরিনা এত সুন্দরী আর এত ভালোভাবে শাড়ি ক্যারি করতে পারে যে, পুরো ক্রেডিটটাই ওঁর পাওয়া উচিত। তবে, যেহেতু কাজটা আমিও করেছি, তাই আমাকে ২০ পার্সেন্ট ক্রেডিট দিতে পারেন। বাকি ৮০ পার্সেন্ট ক্রেডিট কিন্তু ক্যাটরিনারই।
এবিপি লাইভ : আজ পর্যন্ত অনেক সেলিব্রেটিকে শাড়ি পরালেন। কাদের শাড়ি পরিয়ে খুব খুশি হয়েছেন বলবেন?
ডলি জৈন : সবাইকেই। আমি শাড়ি পরাতেই ভালবাসি। তবু যদি আপনি কয়েকজনের নাম শুনতে চান তাহলে, বলবো - শ্রীদেবী, রবিনা ট্যান্ডন, মালাইকা অরোরা, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, অনুষ্কা শর্মা, ঐশ্বর্য রাই, সোনম কপুর, দীপিকা পাড়ুকোন এঁদেরকে শাড়ি পরিয়ে খুব খুব খুশি হয়েছি।
এবিপি লাইভ : ডলি জৈনের জীবনে কী এমন হল যাতে সেই মানুষটার কাছেই দেশের সব সেলিব্রেটিরা শাড়ি পরেন?
ডলি জৈন : আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক কথা বলার। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। অতীতে ফিরে গেলাম। মনে আছে ১৭ বছর আগে যখন আমি শাড়ি পরানো শুরু করি, তখন সকলে ভেবেছিলো এটা কী পাগলামো করছে? তখন কেউ বুঝতে পারেনি, আমি কী করতে চাইছি! কিন্তু, আমি সবসময় নিজেকে ধন্যবাদ দিই। তার কারণ, খেয়াল করে দেখবেন ভারতীয় মেয়েরা শাড়ি পরাটা তখন ছেড়ে দিচ্ছিল। হয়তো আমি এগিয়ে না এলে, আজকের এই বিয়েগুলোতে কেউ শাড়ি পরতোই না। ওয়েস্টার্ন পোশাকেই বিয়ে হত। সেলিব্রেটিরা যে পোশাক পরে, সেটাই তো সাধারণ মানুষ পরে। তাই সেলিব্রেটিরা যেহেতু আজ নিজের বিয়েতে শাড়ি পড়ছে বা যেকোনও উৎসব এবং অনুষ্ঠানে শাড়ি পরছে।
এবিপি লাইভ : শাড়ি পরার ব্যাপারে মেয়ের মায়েদের কোনও পরামর্শ দিতে চাইবেন?
ডলি জৈন : ভারতের মায়েরা এখনও তাঁর মেয়েকে সবকিছু হাতে ধরে শিখিয়ে দেন। সে কীভাবে রান্না করবে। সে কীভাবে ঘর গোছাবে। আবার সে কীভাবে ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাইরের কাজও করবে। সব অবদানই মায়েদের। তাই মায়েদের কাছে আমার আবেদন, তাঁরা যেন এবার থেকে আরও একটা জিনিস শেখানোর তালিকায় যোগ করে দেন। তা হলো, মেয়েকে শাড়ি পরানো। মেয়ে যেন ঠিকমতো শাড়িটা পরতে পারে। কারণ, শাড়ি আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি। মায়েদের বলছি না যে, আপনারা ৩২৫ রকমভাবে শাড়ি পরানো শেখান মেয়েদের। কিন্তু একটা বেসিক যদি শিখিয়ে দেন। একটা উদাহরণ দিলে বোঝানো যাবে। আজ আমরা ভারতীয়রা নমস্কার বলা ছেড়ে দিয়েছি। আমরাও হ্যালো বা হাই বলছি। এটা তো ঠিক নয় না। আমাদের সংস্কৃতিটাকে তো রাখতে হবে।
এবিপি লাইভ : এ তো গেল মায়েদের জন্য আপনার পরামর্শ। কিন্তু, আজকের যুগের অনেক মেয়েরাই শাড়ি পরতে পছন্দ করেন না। তার কারণ, শাড়ি হ্যান্ডল করা খুব কঠিন। তাঁদের জন্য কোনও পরামর্শ দেবেন?
ডলি জৈন : নিশ্চয়ই দেবো। একটা কথা মনে পড়ছে। একজন মানুষের ৫০তম বিবাহবার্ষিকীতে আমি ছিলাম। দেখলাম ভদ্রমহিলা ওই বিশেষ দিনে গাউন পরেছেন। আমি থাকতে না পেরে গিয়ে বলেই ফেললাম, যে আপনি আজকের এই বিশেষ দিনটাতেও শাড়ি পরলেন না? উনি বলেছিলেন, ঠিক, ভুল হয়ে গিয়েছে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল আমারও। আমি আজকের দিনের মেয়েদের বলতে চাই যে, আপনি কোনও উৎসব, অনুষ্ঠান বা পার্টিতে গেলে একটা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরে যান। আর একটা শাড়ি হাতে করে নিয়ে যান। যেটা আপনি ফিরে আসার সময় পরবেন। তখন অন্যদের প্রতিক্রিয়া দেখেই বুঝতে পারবেন, একটা শাড়ি আপনাকে কতটা বদলে দিয়েছে। আপনার অ্যাটিটিউড, চালচলন, সবই বদলে দিয়েছে শাড়ি। তাই মেয়েরা, শাড়িটা পরতে ভালবাসো।
এবিপি লাইভ : বাংলার মেয়েদের শাড়ি পরা নিয়ে কিছু বলতে চাইবেন?
ডলি জৈন : নিশ্চয়ই। প্রথম কথা কথা হচ্ছে শাড়ি পরা অর্থাত ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে। এবার বিষয় যদি সংস্কৃতি হয়, তাহলে বাংলার থেকে বেশি সাংস্কৃতিক মানুষ গোটা দেশে আর কোন রাজ্যে আছে! আমি সবসময় সারা দেশের মেয়েদের বলি, কলকাতাকে বা বাংলাকে দেখে শেখা উচিত। পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা, সকালবেলায় শাড়ি পরে রাস্তায় বেরোয়। তারপর ভিড় বাসে চেপে অফিসে যায়। তারপর সেই শাড়ি পরে নিজেদের অফিসে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ডিউটি করে। তারপর আবার সেই শাড়ি পরেই বাড়ি ফিরে আসে বাসে বা ট্রেনে চেপে। তাহলে ওরা যদি সারাদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা ব্যস্ত শহরের মধ্যেও শাড়ি পরে দিব্যি সাবলীল থাকতে পারে, তাহলে গোটা দেশের মেয়েরা পারবে না কেন?
এবিপি লাইভ : বাংলার শাড়ি পরা অন্য রাজ্যের তুলনায় কেমন জায়গায় থাকবে?
ডলি জৈন : একেবারে উপরের দিকে। একজন দক্ষিণ ভারতের মেয়ে তাঁর বিয়েতে কাঞ্জিভরম পরবেই। তেমনই একজন বাংলার মেয়ে বিয়েতে লাল বেনারসি পরবেই। আবার মহারাষ্ট্রের শাড়ি পরাটাও খুব সুন্দর। দক্ষিণ ভারতে আবার বেল্ট দিয়ে শাড়ি পরা হয়। আর এই শাড়ির জন্যই দেশের এক-একটা রাজ্যকে সাংস্কৃতিকভাবে তুলে ধরে।
এবিপি লাইভ : এত সেলিব্রেটিকে শাড়ি পরালেন। সবথেকে বেশি দামের শাড়ি কাকে পরিয়েছেন?
ডলি জৈন : (হাসতে-হাসতে) এই রে। এটা তো কাউকে জিজ্ঞাসা করিনি। আসলে কাউকে শাড়ি পরানোর সময় তো আর জিজ্ঞেস করি না যে, তোমার এই শাড়িটার দাম কত? ওটা ভদ্রতা নয়। তবে, এটুকু বলতে পারি যখন অনুষ্কাকে শাড়ি পরালাম, তখন মনে হল কী সুন্দর শাড়িটা। তারপর দীপিকার সময় মনে হল, এটা সবথেকে ভাল। তারপর সোনমেরটা দেখে মনে হল, এটা কী সুন্দর। এখন ক্যাটরিনারটা দেখে মনে হচ্ছে এটাই সবথেকে সুন্দর। আসলে, আমি তো শাড়িপ্রেমী। যখন যাঁকে যে শাড়িটা পরাই, মনে হয় ওটাই বিশ্বের সবথেকে সুন্দর শাড়ি।
এবিপি লাইভ : আপনার থেকে কেউ শাড়ি পরা শিখতে চাইলে কী করতে হবে|?
ডলি জৈন : আমাকে একটা মেল করতে হবে। আর এই কথাটাই বলতে হবে। ব্যস। তারপর আমি তাঁকে শিখিয়ে দেবো।
আরও পড়ুন - ABP LIVE Exclusive: কোন 'টনিক'-এর জোরে এই বয়সেও রাফটিং-প্যারাগ্লাইডিং করলেন? বললেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়