এক্সপ্লোর

Anup Kumar: মঞ্চ থেকে বড়পর্দা! বাঙালি বুঁদ হতো 'জীবনপুরের পথিক' অনুপকুমারে!

Anup Kumar Death Anniversary: সিনেমা আর নাটকই ছিল জীবন। নানা ঘরানার সিনেমায়, নানা চরিত্রে প্রাণ ঢেলেছেন তিনি। আর মোহিত হয়েছে দর্শকরা।

কলকাতা: নাটক থেকে সিনেমা। মঞ্চ থেকে বড়পর্দা। প্রায় ৬ দশকের অভিনয়-জীবন। নাহ, সে অর্থে কোনও কেতাদুরস্ত নায়ক ছিলেন না তিনি। কিন্তু সিনেমাপ্রেমী বাঙালির স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে তাঁর ছবি। তাঁর সময়ে নাট্যপ্রেমী জনতাও তাঁর অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকতেন। তাঁর পিতৃদত্ত নাম সত্যেন দাস। কিন্তু এ নামে বাঙালি তাঁকে চেনে না- কারণ বাঙালির কাছে তিনি অনুপকুমার (Anup Kumar)।

অভিনয় ছিল তাঁর ভালবাসা। শুধু প্যাশন নয়, তার সঙ্গে মিশেছিল চূড়ান্ত পেশাদারিত্বও। শিল্পের প্রতি ভালবাসা হয়তো পরিবার সূত্রেই আসা। সেই সময়ের বিখ্যাত গায়ক-সুরকার এবং অভিনেতা ধীরেন দাসের ছেলে তিনি। আর শিষ্য ছিলেন শিশির কুমার ভাদুড়ির। ১৯৩০-এর দশকে অনুপকুমার শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন হাল বাংলা ছবিতে। পরে পুরোদমে সিনেমা করেছেন, একের পর এক ছায়াছবি করেছেন। ১৯৪৮ সালে 'ধাত্রীদেবতা' সিনেমায় সম্ভবত প্রথম নায়কের ভূমিকায় অভিনয়। কিন্তু তারপর আর সেরকম সুযোগ পাননি তিনি। সেই সময় একের পর এক চরিত্র তিনি যা পাচ্ছেন তা বেশিরভাগই কমেডি। সেইভাবেই দর্শকও তাঁকে নিচ্ছিল সেই সময়। এই নিয়ম ভাঙে বেশ কিছুদিন পর, পরিচালক তরুণ মজুমদারের হাত ধরে। ততদিনে তাঁর হাত দিয়ে 'চাওয়া-পাওয়া', 'স্মৃতিটুকু থাক', 'কাচের স্বর্গ' বেরিয়ে গিয়েছে। তারপর 'আংটি চাটুজ্জ্যের ভাই' উপন্যাস অবলম্বনে তিনি বানালেন 'পলাতক'। এই ছবিতেই নায়কের ভূমিকায় দেখা যায় অনুপকুমারকে। সাদাকালো ওই ছবি-এখনও রঙিন হয়ে গেঁথে রয়েছে বাংলার সিনেপ্রেমীদের মনে। আগাগোড়া ট্র্যাজেডি এই সিনেমায় নতুন করে পাওয়া গেল অনুপকুমারকে। রবি বসু তাঁর সাতরঙ বইয়ে লিখছেন, এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট নাকি সবার পছন্দ হচ্ছিল, কিন্তু নায়ক হিসেবে অনুপ কুমারের নাম শুনতেই বেঁকে বসছিলেন প্রযোজকরা। ততদিনে কমেডিয়ান হিসেবে নাম হয়ে যাওয়ায় এমন সিরিয়াস চরিত্রে অনুপকুমারকে দর্শক মানবেন না, এমনটাই নাকি দাবি করেছিলেন প্রযোজকরা। কিন্তু তরুণ মজুমদার কারও কথা না শুনে অনুপকুমারকেই নায়ক হিসেবে ওই ছবি করেন। অবশেষে তৎকালীন বোম্বাইয়ের বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক ভি শান্তারাম সিনেমাটার প্রযোজনা করেন। সুপারহিট হয় পলাতক। বাংলা পেয়েছিল নতুন জুটি- সন্ধ্যা রায়-অনুপ কুমার জুটি, সময়টা ষাটের দশক। তারপরেও অবশ্য কমেডির মোড়কেই বাঁধা থেকেছিলেন অনুপকুমার। অনুপকুমার নাম বললেই হয়তো অধিকাংশ সময়েই বাঙালি দর্শকের মনে পড়ে কমেডির (Comedy) কথা। বাংলা সিনেমায় যে কয়েকজন 'লেজেন্ড' কমেডিয়ানের কথা সিনেপ্রেমীদের স্মৃতিতে রয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন অনুপকুমার। কিন্তু যখনই সুযোগ হয়েছে, অন্য অবতারে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সে 'আলোর পিপাসা'-তে ছোট্ট চরিত্র হোক কিংবা 'ঠগিনী'-র মতো সিনেমা।

শোনা যায়, 'পলাতক', 'ঠগিনী' কিংবা 'নিমন্ত্রণ'-এর মতো সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করার পরেও শুধুমাত্র নায়কের চরিত্র পাওয়ার জন্য বসে থাকতে পারেননি তিনি। সাংসারিক বহু দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে, সেগুলো পূরণের জন্য প্রয়োজন ছিল অর্থ। সেকারণেই পার্শ্ব অভিনেতা-চরিত্রাভিনেতার ভূমিকায় একের পর এর রোল করে গিয়েছেন। 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে', 'বসন্ত বিলাপ', 'ফুলেশ্বরী', 'বালিকা বধূ', 'বাবা তারকনাথ', 'গণদেবতা', 'দাদার কীর্তি'- এই তালিকার শেষ নেই। প্রতিটিতেই তাঁর অভিনয়ে মোহিত হয়েছেন দর্শকরা। কিন্তু তাঁর প্রতিভার মতো চরিত্র পেয়েছেন কী? সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। শুধুই বাংলা নয়, হাতেগোনা কিছু হিন্দি ছবিও করেছেন, প্রশংসা কুড়িয়েছেন সেখানেও।

বিভিন্ন লেখা-আলোচনায় শোনা যায় সাংসারিক দায়িত্ব পালনের জন্যই চরিত্র বাছাই সেরকম করতেন না তিনি। তাঁর দায়িত্ববোধ শুধু রক্তের সম্পর্ক-আত্মীয়তার সম্পর্কের মধ্য়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। গোটা সিনেজগৎকেই নিজের পরিবার ভাবতেন তিনি। সহ-অভিনেতার যে কোনও প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। গীতা সেনকে নিজের বোনের মতো ভালবাসতেন। মৃণাল সেন-গীতা সেনের সংসারেও বটগাছের ছায়ার মতো ছিলেন অনুপকুমার। সিনে-নাটক জগতের যে কারও যে কোনও বিপদে পাশে হাজির হতেন তাঁদের 'অনুদা'। একাধিক সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি।

শুধু সিনেমা বললে তাঁর জীবনের অর্ধেক বলা হবে হয়তো, কারণ বাকি অর্ধেক ছিল নাটক। 'শ্রেয়সী', 'শ্যামলী' থেকে 'নূরজাহান'- মঞ্চ মাতিয়েছেন তিনি। প্রথম সারির বিভিন্ন নাট্যদলে পেশাদারি নাটক করেছেন তিনি। শ্রীরঙ্গম, স্টারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তৈরি করেন নিজের নাট্যদল 'ভদ্রকালী নাট্যচক্র'। শুধু অভিনয়ই নয়, নাটক নির্দেশনাও করেছেন তিনি।

বিএফজেএ পুরস্কার, জাতীয় পুরস্কার, দীনবন্ধু পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাদেমি অ্যাওয়ার্ড-সহ একাধিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ভক্তদের ভালবাসাতেও কার্পণ্য ছিল না। কিন্তু তাঁর প্রতিভার যোগ্য সম্মান বা সুযোগ? তাঁর মনেও কি এই নিয়ে কোনও ক্ষোভ ছিল? ১৯৯৮ সালে সেপ্টেম্বরে মারা যান অনুপকুমার। শোনা যায়, মৃত্যুর পর নাকি তাঁকে স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয়নি, সেরকমই নাকি নির্দেশ ছিল তাঁর। তাহলে কি বাইরে থেকে আদ্যন্ত রসিক এই মানুষটির অন্তরেও অভিমানের ফল্গুধারা বয়েছিল? উত্তর অজানা। 

যত বড় পদই হোক- রান্নায় অল্প নুন না হলে সব স্বাদ যেমন বৃথা যায়। তেমনই ছিলেন অনুপকুমার। বাঙালির সিনেমায় নুনের মতো। 

তথ্যসূত্র:
চৌরঙ্গী পত্রিকা- অনুপকুমার বিশেষ সংখ্যা
সাতরঙ- রবি বসু

আরও পড়ুন: কখনও সৈনিক, তো কখনও সাংবাদিক-সাহিত্য়িক, দুখু মিয়া তাঁর জীবনজুড়ে তৈরি করেছিলেন একের পর এক গল্প

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

India-Pakistan Relations: জলপথেও বাজিমাত, সমুদ্রে পাকিস্তানি জাহাজকে ধাওয়া করে ৭ মৎস্যজীবীকে উদ্ধার ভারতের উপকূলরক্ষী বাহিনীর
জলপথেও বাজিমাত, সমুদ্রে পাকিস্তানি জাহাজকে ধাওয়া করে ৭ মৎস্যজীবীকে উদ্ধার ভারতের উপকূলরক্ষী বাহিনীর
ED Raid: ডিয়ার লটারি কেলেঙ্কারির তদন্তে টাকার পাহাড়, উদ্ধার হল কত কোটি?
ডিয়ার লটারি কেলেঙ্কারির তদন্তে টাকার পাহাড়, উদ্ধার হল কত কোটি?
Tab Scam: 'জালিয়াতির মূল পাণ্ডা স্কুলেরই শিক্ষক ও কর্মীদের একাংশ' ট্যাব কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস
'জালিয়াতির মূল পাণ্ডা স্কুলেরই শিক্ষক ও কর্মীদের একাংশ' ট্যাব কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস
Sanjay Ray : সঞ্জয় রায় আদালতে ঢোকার সময়ই এক যোগে গাড়ি-হর্ন বাজানো শুরু পুলিশের !
সঞ্জয় রায় আদালতে ঢোকার সময়ই এক যোগে গাড়ি-হর্ন বাজানো শুরু পুলিশের !
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

The Telegraph: টেলিগ্রাফ স্কুল অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স নর্থবেঙ্গল-২৪'-এর মঞ্চে সম্মানিত একাধিক স্কুল | ABP Ananda LIVERG Kar News : প্রিজন ভ্যান থেকে সঞ্জয় রায় যা বলছে হয়ত সত্যি বলছে : চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরীMoney Recovered: 'উদ্ধার হয়েছে ৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোসিট সার্টিফিকেট', দাবি ইডির | ABP Ananda LIVESoumitra Khan: ফুটবল খেলার অনুষ্ঠানে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির পাশে SI, ভিডিও পোস্ট করে আক্রমণ সৌমিত্রর | ABP Ananda LIVE

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
India-Pakistan Relations: জলপথেও বাজিমাত, সমুদ্রে পাকিস্তানি জাহাজকে ধাওয়া করে ৭ মৎস্যজীবীকে উদ্ধার ভারতের উপকূলরক্ষী বাহিনীর
জলপথেও বাজিমাত, সমুদ্রে পাকিস্তানি জাহাজকে ধাওয়া করে ৭ মৎস্যজীবীকে উদ্ধার ভারতের উপকূলরক্ষী বাহিনীর
ED Raid: ডিয়ার লটারি কেলেঙ্কারির তদন্তে টাকার পাহাড়, উদ্ধার হল কত কোটি?
ডিয়ার লটারি কেলেঙ্কারির তদন্তে টাকার পাহাড়, উদ্ধার হল কত কোটি?
Tab Scam: 'জালিয়াতির মূল পাণ্ডা স্কুলেরই শিক্ষক ও কর্মীদের একাংশ' ট্যাব কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস
'জালিয়াতির মূল পাণ্ডা স্কুলেরই শিক্ষক ও কর্মীদের একাংশ' ট্যাব কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস
Sanjay Ray : সঞ্জয় রায় আদালতে ঢোকার সময়ই এক যোগে গাড়ি-হর্ন বাজানো শুরু পুলিশের !
সঞ্জয় রায় আদালতে ঢোকার সময়ই এক যোগে গাড়ি-হর্ন বাজানো শুরু পুলিশের !
Partha Attacks Arjun : 'বাইরের ক্রিমিনালদের সঙ্গে কার বেশি যোগাযোগ ব্যারাকপুরের মানুষ জানে', নিশানা পার্থর
'বাইরের ক্রিমিনালদের সঙ্গে কার বেশি যোগাযোগ ব্যারাকপুরের মানুষ জানে', নিশানা পার্থর
Kasba Incident: কসবাকাণ্ডের পর বিস্ফোরক TMC কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ, 'অন্যায় করলে, দায় হায়দরকে নিতে হবে..' !
কসবাকাণ্ডের পর বিস্ফোরক TMC কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ, 'অন্যায় করলে, দায় হায়দরকে নিতে হবে..' !
Nurse Harassment: 'তোমাদের মতো মেয়েদের জন্য আরজি করের মতো ঘটনা ঘটেছে' নার্সকে হেনস্থা কাউন্সিলরের
'তোমাদের মতো মেয়েদের জন্য আরজি করের মতো ঘটনা ঘটেছে' নার্সকে হেনস্থা কাউন্সিলরের
Uma Dasgupta: থামল 'পথের পাঁচালি', প্রয়াত সত্যজিতের 'দুর্গা' উমা দাশগুপ্ত
থামল 'পথের পাঁচালি', প্রয়াত সত্যজিতের 'দুর্গা' উমা দাশগুপ্ত
Embed widget