(Source: Poll of Polls)
Bappi Lahiri: 'আমার সোনার লকেট মাইকেল জ্যাকসনের পছন্দ ছিল, কিন্তু আমি দিইনি', একান্ত আড্ডায় কারণ জানিয়েছিলেন বাপ্পি
Bappi Lahiri Exclusive Interview: এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-এর সঙ্গে 'হ্যালো ভিআইপি' অনুষ্ঠানে (১৪.১৩.২০১০) একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছিল বেশ কিছু অজানা তথ্য
কলকাতা: এত সুর, এত ছন্দময় সফর কি কখনও থেমে যেতে পারে? সময় হয়তো কেড়ে নিতে পারে নশ্বর শরীর, কিন্তু ছন্দ? তার তো মৃত্যু নেই। বাপি লাহিড়ি চলে গিয়েছেন। রেখে গিয়েছেন দশকের পর দশক ধরে ছড়িয়ে থাকা সুর আর ছন্দের উত্তরাধিকার। শ্রোতাদের মনের আকাশে চিরকাল চলতে থাকবে সেই রিদমের রামধনুর খেলা।
বাপ্পি লাহিড়ি- টলিউড থেকে হলিউড তাঁর এক অসাধারণ যাত্রাপথ। ভারতীয় সঙ্গীত হারাল তার ডিস্কো কিং’কে। এগারো বছর বয়সে প্রথম সুর। তারপর একা হাতেই কার্যত বদলে দিয়েছিলেন ফিল্মি সঙ্গীতের চালচিত্র। কয়েক বছর আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা। শুনেছিলাম তাঁর গড়ে ওঠার অসামান্য কাহিনি।বাপি লাহিড়ির প্রয়াণে আজও গোটা দেশ শোকস্তব্ধ, আসুন আমরা ফিরে দেখি, এই ব্যতিক্রমী স্রষ্টার সঙ্গে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো।
এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-এর সঙ্গে 'হ্যালো ভিআইপি' অনুষ্ঠানে (১৪.১৩.২০১০) একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছিল বেশ কিছু অজানা তথ্য। বাপি থেকে বাপ্পি লাহিড়ি হয়ে ওঠার যাত্রাপথের কিছু অদেখা দিক।
প্রশ্ন: বাঙালি সবসময় গর্ববোধ করেছে যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এক কৃতি বাঙালি আপনি। কিন্ত বাপি কেন বাপ্পি হল? সংখ্যাতত্ত্বের জন্য?
বাপ্পি লাহিড়ি: আমার নাম ছিল মাস্টার বাপি। তখন খুব ছোট। তবলা বাজাতাম। এরপর ১৯ বছর বয়সে বম্বেতে সমু মুখোপাধ্যায় (কাজলের বাবা) বলেন যে বাপ্পি করে দাও। উনি নিউমেরোলজি করতেন।
প্রশ্ন: অনেকেই বলেন বাঙালি কাঁকড়ার জাত, একজন উঠলেও আরেকজনকে উঠতে দেয় না, আপনি কতটা এর মুখোমুখি হয়েছেন?
বাপ্পি লাহিড়ি: আমি যখন বম্বেতে তখন সেখানে সব বড় নাম। কে নেই। লতাজি, আশাজি, কিশোর কুমার, রফি সাহেবরা। ভগবানের কৃপায় এক বছর লড়াইয়ের পর নিজের স্থান পাই কাজের মাধ্যমে। আর আমি বাঙালি হিসেবে গর্বিত। তখনকার দিনে আরডি বর্মন ছিলেন, কিশোর কুমার ছিলেন। আমার কাছে উনি কিশোর মামা। তাই এসব দেখিনি। তবে আরডি বর্মনের ব্যানার চলে গেল তখন আমাকে একটু ফেস করতে হয়েছিল। টেনে নামানোর কোনও বিষয় ছিল না। তখন কম্পিটিটর ছিলাম আমি আর আরডি বর্মন। আর কেউ ছিলেন না। সলিল চৌধুরী অনেক আগে ছিলেন।
প্রশ্ন: কিশোর কুমার মারা যাওয়ার পর আপনি শোকে পাথর হয়ে গেছিলেন এটা কি সত্যি?
বাপ্পি লাহিড়ি: কিশোর মামার শেষ গান 'গুরু গুরু আজা শুরু' ৬টা অবধি গাইলেন। সেই দিন উনি এট হাসিয়েছেন আমাকে আর আশাজিকে সে বলার নয়। আমাকে বললেন, আজ তোমাদের এতো হাসালাম। যখন থাকব না মনে পড়বে এমন ভালবাসার কথা। উনি চলে যাওয়ার পর ভাবলাম কাকে দিয়ে গান করাব। 'ইয়াদ আ রাহা হ্যায়' এই গানটা ওঁর গাওয়ার কথা ছিল। আমার গলায় গানটা শুনে আর গাইলেন না। 'গুরুদক্ষিণা'র সময়ও এমনটা হয়েছিল।
প্রশ্ন: বাপ্পি লাহিড়ি গান ছাড়া অভিনয়ও করবেন?
বাপ্পি লাহিড়ি: আমাকে টেলিভিশন শো এর পর আমার অ্যাপিয়ারেন্স সবার খুব ভাল লেগেছিল। বিশ্বজুড়েই একটা ফ্যান ফলোয়িং বাড়ল। তখন নিজেরও ভাল লাগে। আমার স্টাইলটা অনেকের ভাল লাগে। এই গোল্ডেন ম্যান বিষয়টা।
প্র: বাপ্পি লাহিড়ি মানেই একটা আলাদা বিষয়?
উ: এই ইমেজটা ক্রিয়েট হয়েছে। অনেকেই বলে এত সোনা পড়ে বাপ্পি লাহিড়ি। যখন আমেরিকায় বলল শেয়ার বাজার পড়ে গেছে, তখন বলেছিল বাপি লাহিড়ি সবচেয়ে লাভবান। (হাসি)। আমি ছোটবেলা থেকে এলভিস প্রেসলির ভক্ত ছিল। ওঁর এমন একটা হার ছিল সোনার। এখন আমাকে সোনা ছাড়া লোকে চেনেই না। (হাসি)। আমি সোনা ভালবাসি।
প্র: সোনা এত ভালবাসেন?
উ: আমার শৌখিনতা একটাই তা হল সোনা। আমার সোনার গণেশের লকেট মাইকেল জ্যাকসনের খুব পছন্দের ছিল। তখন একবার ভেবেছিলাম চেনটা খুলে ওঁকে পরিয়ে দেই। কিন্তু গণেশজি আমাকে রক্ষা করেন। তাই আর...
প্রশ্ন: আদ্যন্ত বাঙালি বাপ্পি লাহিড়ি, কী কী খেতে ভালবাসেন?
বাপ্পি লাহিড়ি: আমি খেতে ভালবাসি মাছ-ভাত। ডাল, ভাত ও মাছ ভাজা সবসময়ের জন্য পছন্দের। বাঙালি খাবার সব সময় পছন্দের তালিকায় থাকে, তা সে আমি যেখানেই থাকি। লুচি-ছোলার ডাল, ইলিশ সবসময়ই প্রিয়।
প্রশ্ন: বাপ্পি লাহিড়ি ব্র্যান্ড, ওজন কমানো নিয়ে কিছু ভাবনা?
উ: স্বাভাবিকভাবে যা কমছে সেটাই ভাল। অনেকেই আছেন যারা আমেরিকায় গিয়ে এসব করান। আমি এসবে বিশ্বাস করি না। আমার চুল, আমার দাঁত, গলার ডাবল চিন সবটাই আসল।
প্রশ্ন: আপনাকে অনেকেই মিমিক করেন, ক্যারিকেচার করেন। কেমন লাগে তা?
উ: আমার তেমন কিছু মনে হয় না। যারা নাম করে তাঁদের নিয়েই তো নাম হয়। আর গলা নকল তো অনেকেরই হয়। বাঙালি যারা বলিউডে কাজ করেন অনেক সময় সমালোচনা হয়। কিন্তু গানের ক্ষেত্রে বাঙালিরা অনেক ভাল গান করেন।