Surajit Banerjee Exclusive: 'স্বপনকুমারের পালার জন্য তৈরি হয় রানওয়ে', নববর্ষে মুক্তি পাওয়া সে যাত্রা লিখেছিলেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
Bengali New Year 2024: 'তখন আমি নাটক লিখি। সেই সময়ে অজিত গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি 'হংসরাজ' ছবি পরিচালনা করেছিলেন, 'রাতের রজনীগন্ধা' করেছিলেন, তিনি স্বপন কুমারের পালা লিখছিলেন।'
কলকাতা: রাত পোহালেই বাঙালির নতুন বছর। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে স্বাগত জানাতে তৈরি বঙ্গবাসী (Nabobarsho 2024)। বাংলা বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে বহু বছর ধরে জড়িত অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (Surajit Banerjee)। মঞ্চ, যাত্রা, সিনেমা, ধারাবাহিক, সর্বত্রই তাঁর অবাধ বিচরণ। পয়লা বৈশাখের আগে এবিপি লাইভের মুখোমুখি হলেন অভিনেতা। ভাগ করে নিলেন তাঁর নববর্ষের স্মৃতি। (Bengali New Year 2024)
নববর্ষ নিয়ে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নস্ট্যালজিয়া
অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'আমি বাগবাজার পাড়ায় থাকি। এখানের বেশ কিছু অঞ্চলে বহু বছর ধরে বউবাজারের মতো অংখ্য সোনার দোকান। তাছাড়া পাশে হাতিবাগানে কাপড়ের দোকান। অনেকদিনই আমার মা-কাকিমা-জ্যেঠিমা বা পাড়ার কাকিমা-জ্যেঠিমাদের মধ্যে চল ছিল ওই দোকানে গিয়ে হালখাতায় কিছু টাকা দেওয়া আর সঙ্গে ক্যালেন্ডার ও মিষ্টি আনা। তখনও দেওয়ালে অকারণ ক্যালেন্ডার রাখাটাকে খারাপ দেখতে লাগার মধ্যে ধরা হত না। মিষ্টির বাক্স বাড়িতে এসে উজাড় হত। সেদিন রাত্রে আর রান্না হত না। এখানের চপ, ওখানের ক্ষীরমোহন... এই ব্যাপারটার একটা অসম্ভব নস্ট্যালজিয়া কাজ করে।'
তিনি আরও বলে চলেন, 'আরও একটি নস্ট্যালজিয়া আমার মামা স্বপন কুমারকে ঘিরে। তখন আমি নাটক লিখি। সেই সময়ে অজিত গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি 'হংসরাজ' ছবি পরিচালনা করেছিলেন, 'রাতের রজনীগন্ধা' করেছিলেন, তিনি স্বপন কুমারের পালা লিখছিলেন। 'ভাঙা গড়া' বলে একটি পালা খুব উৎকৃষ্ট হয়। তারপরে 'ভাইবোন'। সেইটা ভাল লিখতে পারছিলেন না। আমি মামার অসম বয়সের বন্ধু ছিলাম। সেই সময় মামা প্রেমের কথাও আমাকে বলতেন। মামা তখন আমাকে বলেন, 'তুই লেখ না।' একটা দৃশ্য লিখতে বলেন, আমি লিখলাম। অসম্ভব ভাল লাগল। এই করতে করতে পুরো পালাটা লিখেছিলাম। এবং পয়লা বৈশাখে, মামার ছবির পাশে আমার হাতজোড় করা ছবি দিয়ে, ৮৬ সালে, প্রকাশ্যে আসে আমন্ত্রণ পত্র। সেই পালাটি এত হিট করেছিল, যে তা ইতিহাস তৈরি করেছিল।'
পালা সাফল্য লাভ করার অন্যতম কারণ সুন্দরবনের দর্শক। সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান তখন বহুদিন স্বপন কুমার সুন্দরবনে শো করতে যান না, কারণ তিনি নদী পেরোবেন না। অভিনেতার কথায়, 'বলতেন, নদীতে ওঁর ফাঁড়া আছে, কিন্তু তা বাজে কথা। উনি ওই নদী পেরনোর ক্লেশ নেবেন না। এরকম ওঁর অনেক বাধ্যবাধকতা ছিল, সেগুলি প্রযোজকদের মানতে হত। ওই জন্যও তাঁকে 'যাত্রার উত্তমকুমার' বলা হত। সেই সময় পুরনো স্টার থিয়েটারের গ্রিন রুমে তিনি বসে আছেন, কিছু মানুষ তাঁকে ঘিরে।' তখন তাঁদের প্রশ্ন যে স্বপন কুমারকে কি সজনেখালির লোক দেখবেন না? মজার ছলে স্বপন কুমারও উত্তর দেন, 'উড়িয়ে নিয়ে গেলেই দেখবে'। কিন্তু সত্যিই ওই অঞ্চলের মানুষের দাবিতে হেলিকপ্টারে চড়ে স্বপন কুমারের সজনেখালিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ বি এ গনি খান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, অপর মন্ত্রী রাজেশ পাইলটকে ধরে, সেখানে হ্যালিপ্যাডের ব্যবস্থা করা হয়। সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'যেটা খুব অন্যায় হয়েছে, এখন দাঁড়িয়ে মনে হয়, সেই সময়ে সুন্দরবনে প্রচুর গাছ কেটে ২০ বিঘা জমিজুড়ে রানওয়ে তৈরি করা হয়। ফকার প্লেন নামবে এমন পাইলট এলেন। দমদম থেকে স্বপন কুমার উঠলেন প্লেনে, সজনেখালিতে নামলেন। রাত ১১-১২টা পর্যন্ত যাত্রা হল। ফকার প্লেন অপেক্ষা করল সারারাত। উনি রাতে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন ভোরে প্লেনে চড়ে দমদমে এলেন। রানওয়ে তৈরি হল স্বপন কুমারের এই পালার জন্য। সেই পালায় পয়লা বৈশাখে আমার ছবি বেরনো, অর্থাৎ বাণিজ্যিকভাবে আমি একটি পালায় কাজ করছি, সেই স্মৃতি আমার কাছে খুব উজ্জ্বল।'
এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা এও জানান, নববর্ষের মেনুতে, মটন থাকা মাস্ট! সেই সঙ্গে বড় বাগদা চিংড়ির মালাইকারি, আর শেষ পাতে রাবড়ি বা রসমালাই।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।