Ritabhari Chakraborty Exclusive: 'দর্শকরা বুঝুক, পরির মতো নিখুঁত নয়, নায়িকারা রক্ত-মাংসের মানুষ'
কেরিয়ার থেকে ব্যক্তিগত জীবন, এই বছরে তাঁর প্রাপ্তির ঝুলি ভরেছে। কিন্তু তার মধ্যেও কোথাও কোথাও লুকিয়ে রয়েছে মনখারাপ।
কলকাতা: '২০২১ সালটা যেন টক, ঝাল, মিষ্টি কাটল।' ২০২২-এ পা রেখে পুরনো বছরকে ফিরে দেখতে গিয়ে এই কথাটাই প্রথম বললেন তিনি। কেরিয়ার থেকে ব্যক্তিগত জীবন, এই বছরে তাঁর প্রাপ্তির ঝুলি ভরেছে। কিন্তু তার মধ্যেও কোথাও কোথাও লুকিয়ে রয়েছে মনখারাপ। এবিপি লাইভের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গোটা বছরের অভিজ্ঞতা, মনখারাপ আর ভালো থাকার গল্পের ঝুলি উপুড় করলেন ঋতাভরী চক্রবর্তী (Ritabhari Chakraborty)।
২০২১ সালের অনেকটাই তাঁর কেটেছে শারীরিক অসুস্থতায়। ঋতাভরী বলছেন, 'শারীরিকভাবে এই বছরটা আমার মোটেই ভালো কাটেনি। তবে, নিজের পছন্দের কাজ করে উপার্জন করতে পারছি। নিজের যা পছন্দ সেটা করতে পারছি, খেতে পারছি.. এটা আমার কাছে অনেক বড়। আমি সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষদের নিয়ে কাজ করি। এতটা কাছ থেকে মানুষের কষ্ট দেখেছি, নিজের যা যা আছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ২০২১ সালে আমার এই উপলব্ধিটা হয়েছে।' তবে ২০২১ সালে একাধিক মনে রাখার মতো মুহূর্ত রয়েছে ঋতাভরীর। অভিনেত্রী হাসতে হাসতে বললেন, 'তার মধ্যে সেরা মুহূর্ত হল আমার ইউসিএলএ থেকে স্নাতক হওয়া। আমাদের ক্লাসের মধ্যে সেরার পুরষ্কার পেয়েছিলাম। ওটা আমার কাছে ভীষণ গর্বের মুহূর্ত ছিল। ওই ক্লাসে একমাত্র ভারতীয় ছিলাম আমি।' প্রসঙ্গত, 'অ্যাকটিং ফর ক্যামেরা প্রোগ্রাম'-এ প্রথম পুরষ্কার পেয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্ণিয়া থেকে স্নাতক হয়েছেন ঋতাভরী।
বছরের শেষদিনটা বোধহয় সবচেয়ে খারাপ কাটল নায়িকার। মা শতরূপা আর দিদি চিত্রাঙ্গদার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ। ঋতাভরী বলছেন, 'বছরের শেষদিন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুজন মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না। তাঁদের কাছে যেতে পারলাম না। দিদির বিয়ে পিছিয়ে দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ মনখারাপ হল বছরের শেষ দিনটায়।'
নতুন বছরে নাকি রেজ়োলিউশন করেন না ঋতাভরী। তবে এই বছর নিজেকে নিজেই একটি কথা দিয়েছেন ঋতাভরী। কী সেই কথা? নায়িকা চুপি চুপি বললেন, 'আমি সবকিছু নিয়ে খুব বেশি ভাবি। ওভারথিঙ্কিং যাকে বলে আর কি.. সেটাকে কমাতে চাইব। সেই আমি সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভালোবাসি। কিন্তু ২০২১ আমায় শিখিয়েছে চাইলেই সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায় না। কিছুটা ঈশ্বরের ওপর আস্থা রেখে ছেড়ে দিয়ে হয়। জীবন তোমার জন্য যা যা সাজিয়ে রেখেছে, সেটাকেই আপন করে নিতে হয়। কেবল ২০২২ কেন, আগামী সব বছরেই আমি এই শিক্ষাটা নিয়েই চলতে চাই।'
'নতুন বছরে প্রেম আসুক সিনেমার রূপে'
২০২১ সালে ঋতাভরীর জীবনে পা রেখেছে প্রেম। সেই প্রশ্ন করতেই লজ্জায় লাল 'বং ক্রাশ'। সলজ্জ গলায় বললেন, '২০২১ সাল আমার জীবনে এমন একজন মানুষকে এনে দিল যার ওপর আমি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি। এর আগে আমি জানতামই না, কারও কাছে আমি আমার নিজস্ব সত্তাকে অকপটে মেলে ধরতে পারি। আর হ্যাঁ, কারও সঙ্গে যে এতটা নিরাপত্তা দেয়, আগে কখনও অনুভব করিনি। এই বছরে যা যা ভালো জিনিস হয়েছে, সবকিছুর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এমন কেউ আমার জীবনে আছে যার ওপর আমি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি।'
চলে যেতে যেতে কী শেখালো ২০২১? একটু গাঢ় গলায় ঋতাভরী বললেন, 'নিজের আসল সত্তাকে সবার সামনে তুলে ধরো। নিজের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। ২০২১ সালে আমার ২টো অস্ত্রোপচার হয়েছিল। প্রথমে আমি গোপন রেখেছিলাম আমার অসুস্থতার কথা। কিন্তু রোজ ফোন.. মেসেজ.. দর্শকরা, অনুরাগীরা জানতে চাইতেন আমি কেমন আছি, কী করছি। একসময় আমি সবাইকে জানালাম আমি কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। অবাক হয়ে দেখলাম, আমায় বিচার করার পরিবর্তে সবাই আমার পাশে দাঁড়ালেন। আমায় সবাই ভালোবাসলেন, সমর্থন করলেন। সবার ভালোবাসায় আমি আবার কাজে ফেরার সুযোগ পেলাম। সবাই ভাবে, নায়িকারা পরি। তাঁদের অসুখ, রোগ, ওজন বেড়ে যাওয়া... এই মানুষসুলভ সমস্যাগুলো হতেই পারে না। আমাদের সবকিছু সবসময় নিখুঁত হবে। আমি যখন আমার অসুস্থতার কথা মানুষকে জানালাম, দেখলাম সবাই আমায় আপন করে নিলেন। আমি আগামী সব বছরে মানুষের মনে আমার এই ভাবমূর্তিটাই বজায় রাখতে চাই। মানুষ আমায় ভাবুক, আমি তাদেরই একজন, কোনও পরি নয়। আমি মানুষের একজন হয়েই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।'