Teacher's Day 2021 Exclusive: 'আমার শিক্ষক মা, বাবা আর রবীন্দ্রনাথ'
শিক্ষক দিবসটা ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কাছে বিজয়া, নববর্ষের মতোই বিশেষ।
কলকাতা: তিনি নিজে একজন শিক্ষিকা। কিন্তু যখন আবৃত্তিকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন, শিক্ষকতার কথা ভাবেননি কখনও। মঞ্চই ছিল তাঁর প্রিয় জায়গা, নিজেকে মেলে ধরার আধার। তারপর অনেকের অনুরোধে শিক্ষকতা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেললেন নতুন ভূমিকাকে। লকডাউনের সময় বাড়িতে একা বসেও ভরসা যুগিয়েছে, সঙ্গে থেকেছে ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসাই। শিক্ষক দিবসটা ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কাছে বিজয়া, নববর্ষের মতোই বিশেষ।
শিক্ষকতার শুরু প্রায় ৩০-৩২ বছর আগে। এবিপি লাইভকে ব্রততী বলছেন, 'তখন আমি দূরদর্শনে সবে খবর পড়ছি। ছোট থেকেই আকাশবাণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতাম। একটা পরিচিতি ছিলই। তবে কখনও শিক্ষকতা করব ভাবিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই আমার কাছে আবৃত্তি শিখতে চাইত। সবার অনুরোধে আবৃত্তি শেখাতে শুরু করলাম। জন্ম হল কাব্যায়নের। ধীরে ধীরে এই পেশাটার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। ছাত্রছাত্রীরাও আমার একটা পরিবার হয়ে উঠল। আমার আনন্দে ওরা হাসে, আমার কষ্টে কষ্ট পায়। সবসময় আমায় ঘিরে রাখে। ওদের এই উষ্ণতাটা যেন আমায় প্রতি মুহূর্তে প্রেরণা যোগায়।'
লকডাউনে প্রায় ২ বছর কার্যত গৃহবন্দি মানুষ। কঠিন সময়ে ব্রততীর মন ভালো করার রসদ ছিল অনলাইন ক্লাস। ব্রততী বলছেন, 'কাব্যায়নের পর যখন ব্রততী পরম্পরা শুরু করি, তখন আমার প্রচুর ছাত্রছাত্রী। ব্রততী পরম্পরা শুধু আবৃত্তি নিয়ে কাজ করে না। এখানে সংবাদপাঠ, নাটকপাঠ, রবীন্দ্রচর্চা থেকে শুরু করে গান পর্যন্ত শেখানো হয়। শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়েই ব্রততী পরম্পরার কাজ। লকডাউনের সময় অনলাইনেই সমস্ত ক্লাস হত। সারাদিন ল্যাপটপের সামনে.. কিন্তু যখন গ্যালারি ভিউতে গিয়ে যখন রাশি রাশি হাসিমুখ দেখতে পেতাম, সব খারাপ লাগা কেটে যেত। শুধু ছোটদের কেন, বয়স্করাও আবৃত্তি শেখেন। প্রত্যেকটা ক্লাসেই যেন ভালোলাগা মিশে থাকে।'
আজ শিক্ষক দিবসে প্রচুর উপহার, শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছেন। ছোট থেকেই শিক্ষক দিবস বিশেষভাবেই কেটেছে ব্রততীর। বেথুন স্কুলের ছাত্রী ব্রততী শিক্ষক দিবস সহ, স্কুলের সমস্ত অনুষ্ঠানেই অংশগ্রহণ করতেন। এমনকি বেথুন স্কুলের শতবর্ষ উদযাপনেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাঁকে। অনলাইনে ভর করে সেখানেও আবৃত্তিতে মুগ্ধ করেছেন সকলকে।
আর তাঁর জীবনের শিক্ষক? ব্রততী বললেন, 'মা, বাবা আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লকডাউনের মধ্যে আবার নতুন করে রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়েছি। বইয়ের পাতা উল্টে সাহস সঞ্চয় করেছি। এখনও, প্রতি মুহূর্তে ওঁনার থেকে শিখি।'