Health Year Ender 2023 : অ্যাডিনো দিয়ে শুরু, করোনা দিয়ে শেষ, ২০২৩ এ কোন কোন রোগ নাকাল করল মানুষকে?
Health Year Ender : বাংলার দিকে চোখ রাখতে গেলে বছরের শুরুটায় আতঙ্কে রেখেছিল অ্যাডিনোভাইরাস আর বছর শেষে কোভিডের নয়া প্রজাতি।
কলকাতা : অসুখ বিসুখ প্রতিবছরই ঝামেলায় রাখে সকলকে। ২০২৩ র দিকে তাকালে দেখা যাবে, মশাবাহিত রোগ আর শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণই এ দেশের মানুষকে ভীষণভাবে পর্যুদস্ত করেছে। সেই সঙ্গে কম বয়সীদের মধ্যে হার্টের অসুখের বাড়বাড়ন্তও ঘুম কেড়েছে চিকিৎসকদের। ২০২৩ আবার শেষ হতে চলেছে কোভিডের আতঙ্ক নিয়ে। আর বাংলার দিকে চোখ রাখতে গেলে বছরের শুরুটা আতঙ্কে রেখেছিল অ্যাডিনোভাইরাস আর বছর শেষে কোভিডের নয়া প্রজাতি।
অ্যাডিনোভাইরাস
বছরের শুরুতেই কলকাতায় শিশুদের মধ্যে বেড়েছিল অ্য়াডিনো ভাইরাসের প্রকোপ। জ্বর-শ্বাসকষ্টজনিত সমস্য়ায় একের পর এক শিশুর মৃত্য়ু পর্যন্ত হয়। শুরু হয় হাসপাতালে হাসপাতালে বেড নিয়ে হাহাকার। পেডিয়াট্রিক ICU না পেয়ে, একের পর এক সঙ্কটজনক শিশুকে নিয়ে ফিরে যেতে হয় পরিবারগুলিকে। শুধু কলকাতা নয়, সারা ভারতে বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায় এই অসুখ। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগতে শুরু করে শিশুরা, বহু শিশুর শরীরে মেলে অ্য়াডিনো ভাইরাসের অস্তিত্ব। আবার বছরের মাঝখানে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এই রোগ। রাজ্য় স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অবশ্য আক্রান্তের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি। তবে জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ নিয়ে সরকারি হাসপাতালগুলির আউটডোরে শিশুদের ভিড় উপচে পড়ে। বিশেষত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য়ে শিশুদের মধ্যে অ্য়াডিনো ভাইরাসের মারাত্মক প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। উপচে পড়েছিল শিশু হাসপাতালগুলি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় টাস্ক ফোর্স গঠন করে বিশেষ অভিযান চালানোর পাশাপাশি সব সরকারি হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক খুলতে হয়।
কনজাঙ্কটিভাইটিস
প্রতিবছরই মূলত বর্ষার মরশুমে কনজাঙ্কটিভাইটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। চোখ লাল হয়ে যাওয়া, করকর করা, চোখ থেকে জল এবং তরল নিঃসরণের মতো উপসর্গ দেখা যায়। তবে তা সেরেও যায় ৩-৪ দিনে। তবে এবার তার সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়। কলকাতা থেকে দিল্লি পিঙ্ক-আই সিনড্রোমে ভুগেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। প্রায় ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। কারও কারও সংক্রমণ আতঙ্কের জায়গায় পৌঁছে যায়। সারতে লেগে যায় দিন ২০। দৃষ্টিশক্তির ভয়ঙ্কর ক্ষতিও হয় সাময়িক ভাবে। বিশেষত বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণ হয় মারাত্মক। উপসর্গগুলির মধ্যে ছিল,
- একটি বা দুই চোখেই লালভাব। ( Redness in one or both eyes )
- একটি বা উভয় চোখেই অসম্ভব চুলকানি। (Itchiness in one or both eyes)
- চোখে কিছু ফুটে যাওয়ার অনুভূতি (A gritty feeling in one or both eyes)
- রাতের বেলা চোখ দিয়ে তরল নিঃসৃত হওয়া ( A discharge in one or both eyes)
- অনবরত চোখ থেকে জল পড়া ( Tearing )
- আলোর দিকে তাকাতে না পারা ( Sensitivity to light) । একে ফটোফোবিয়াও বলে।
১২ বছরে সর্বোচ্চ ডেঙ্গি সংক্রমণ
ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অনুসারে, ২০২৩ সালে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত হিসেব দেখলে , বিশ্বব্যাপী ৮০ টি দেশ থেকে ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। সারা বাংলাতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের গ্রাফ ছিল বেশ আতঙ্কের। শীতের শুরুতেও এবার ভয় ধরিয়েছে সংক্রমণের সংখ্যা। প্রত্য়েক বছর বর্ষায় ভয়াবহ চেহারা নেয় ডেঙ্গি সংক্রমণ। চলতি বছরেও ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিসংখ্যান উদ্বেগ তৈরি করেছিল। ডেঙ্গি মোকাবিলায় কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয়। বাংলার পরিসংখ্যান ধরলে, ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্য়া ১ লক্ষ ৩ হাজার। যা গত ১২ বছরে সর্বোচ্চ। দক্ষিণবঙ্গের ১৬ জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ১৭ জন। ডেঙ্গি আক্রান্তের নিরিখে রাজ্যে শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা। উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গি আক্রান্ত ২৭ হাজার ৭৬০ জন। কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্য়া ১০ হাজার ৭৪ জন। ডেঙ্গি ছাড়াও এবছর জিকা এবং চিকুনগুনিয়ার মতো অন্যান্য ভেক্টর-বাহিত রোগেও আক্রান্ত হন অনেকে।
চিনা নিউমোনিয়া
করোনার পর বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করা যায় রহস্যজনক নিউমোনিয়ার। নভেম্বর নাগাদ চিনে রকেট গতিতে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রামক ব্যাধি। ফলে ভয় তৈরি হয় এ দেশেও কি থাবা বসাতে পারে ওই নিউমোনিয়া? আশঙ্কা উড়িয়েদেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে করোনা পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আগেভাগেই সতর্ক হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয় কেন্দ্রের তরফে।
পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, বেড, ওষুধপত্র, ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা, অক্সিজেন, অ্য়ান্টিবায়োটিক, পিপিই, টেস্ট কিট মজুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক রোজিস্ট্যান্স
অ্য়ান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্য়বহারে অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধছে মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্স । ফলে চিকিৎসার খরচ যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনই রোগীর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বৈঠকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধের দোকানে অ্য়ান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে এবং ব্যবহার রুখতে নজরদারি বাড়ানোর কথা ভাবছে প্রশাসন। চিকিৎসকরাও বারবার সতর্ক করছেন। এবছর ভারতে এই মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্সের কেসগুলি রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদের।
করোনাভাইরাস
বছর শেষে ফিরেছে কোভিড-আতঙ্ক। ২০২০, ২০২১, ২০২২-এর পর এবার ২০২৩। আরও একটা বর্ষবরণের আগে দেশজুড়ে ফের কোভিড-আতঙ্ক! এবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট JN.1। ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। তবে এখনও অবধি করোনার এই নতুন উপপ্রজাতি বা এই নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিকে আতঙ্কের বলে মনে করছেন না চিকিৎসকরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্য়া নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্য়া বাড়লে, তার জন্য় তৈরি থাকতে বলা হয়েছে সমস্ত সরকারি হাসপাতালকে।
২০২০-তে বছরের শুরু থেকেই আছড়ে পড়েছিল করোনার প্রথম ওয়েভ। এবারও সামনে নতুন বছর। এই পরিস্থিতিতে সকলেই জানতে চাইছেন কোভিডের এই নতুন ভ্য়ারিয়েন্ট কতটা মারাত্মক? না। ভয়ের কথা শোনাচ্ছেন না ডাক্তাররা। তবে সতর্ক থাকার কথা বলছেন। আর এই সতর্কতাটুকু সঙ্গী করেই নতুন একটি বছর যেন সুস্থভাবে কাটে, সেই আশাতেই বুক বাঁধছে মানুষ।
আরও পড়ুন : কনজাঙ্কটিভাইটিস আর জয় বাংলা কি এক ? কোন ক্ষেত্রে কোন আইড্রপ কাজ করবে? জানালেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )