এক্সপ্লোর

Nitaidas Mukherjee : ২৫ দিন ইনভেসিভ কোমা থেকে নতুন জীবনে ফিরেই বললেন 'করোনা হারবেই'

২৫ দিন ইনভেসিভ কোমা, ৩৮ দিন ভেন্টিলেশন। এবিপি লাইভ এর সঙ্গে আলোচনায় ফিরে গেলেন সেই কঠিন সময়ে। ভাগ করে নিলেন মনের মধ্যে চলা এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের কথা যা হয়তো কখনো কোনদিনও লোকসমক্ষে বলেননি তিনি।


কলকাতা : '' কত দিন ? কত মাস ? নাকি অনেক বছর ? ঠিক কতদিন ? আমার চোখ যেন খুলল এক যুগ পার করে। বা বলা ভালো একটা নতুন জন্ম হল।  এর মধ্যে কোনো আলো-আঁধারি পার করে এসেছি আমি, মনে হল আমি দাঁড়িয়ে আছি । আসলে কিন্তু শুয়ে আছি। আদতে কেটে গেছে ২৫ টা দিন ইনভেসিভ কোমায় । এরমধ্যে আমার ভিতরে - বাহিরে কত বিপ্লব ঘটে গেছে যা আমি জানিনা। আমার চোখের সামনে এক মধ্য বয়স্ক মহিলা, আকাশী রঙ হাসপাতালের গাউন পরা, মুখে মাস্ক। ... বললেন, মিস্টার মুখার্জি আপনি আমরি হাসপাতাল এ আছেন। এরপর আমার আবার বহু সময়ে কিছু মনে নেই । কিন্তু আজও চোখ খুলে দেখা ঈশ্বর স্বরূপ ওই ডাক্তারের মুখটা আমি ভুলিনি। সারা জীবনেও ভুলবনা ।' বলছিলেন ২০২০ সালের এই রাজ্যের সম্ভবত দশম করোনা রোগী, সমাজকর্মী নিতাই দাস মুখোপাধ্যায়। পথবাসী দুর্গত মানুষদের কাছে তাঁর পরিচালিত হাইভ ইন্ডিয়া সংস্থা মসীহার মত। এই মানুষটি করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে লড়তে লড়তেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখনও করোনা অনেকের কাছেই মারণ রোগ, অজানা অসুখ কিংবা অপরিচিত কঠিন শত্রু।

 দিনটা ছিল ২৯ শে মার্চ । করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন নিতাইদাস মুখোপাধ্যায়। কাশি, জ্বর ছিল । সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ। শরীরে শক্তি যেন ক্রমেই কমে আসছিল । আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ে ছিলেন তিনি । অবশেষে পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা তাঁকে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে নিয়ে যান। সেদিনের স্মৃতি তাঁর কাছে আবছা। তবু তিনি জানেন, করোনা আক্রান্ত বুঝেও তাঁর পাশে থাকা মানুষজন সরে যাননি। রামকৃষ্ণ মিশন হাসপাতালে করোনা ধরা পড়ার পর, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আমরি হাসপাতালে।

 তারপর থেকেই লম্বা এক লড়াই শুরু। ২৫ দিন ইনভেসিভ কোমা, ৩৮ দিন ভেন্টিলেশন। বেশিরভাগ সময়টাই নিতাইদাসবাবুর স্মরণে নেই। তবু এবিপি লাইভ এর সঙ্গে আলোচনায় ফিরে গেলেন সেই কঠিন সময়ে। ভাগ করে নিলেন মনের মধ্যে চলা এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের কথা যা হয়তো কখনো কোনদিনও লোকসমক্ষে বলেননি তিনি।


শ্বাসকষ্ট শুরুর আগেই কীভাবে সতর্ক হবেন ? হলে চটজলদি কী করবেন ?

 

সে সময় হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড বলে কিছু ছিল না । নিতাই দাস বাবুর করোনা ধরা পড়ার পরই আমরি হাসপাতালে আইসোলেটেড আইসিইউ তৈরি করা হয়। মনে পড়ে, স্ট্রেচারে করে তাঁকে হাসপাতালে ঢোকানো হল। ব্যাস এটুকুই। তারপর ২৫ দিন তিনি কোথায় কীভাবে ছিলেন একেবারে মনে পড়ে না। আজ তাঁর মনে হয়, সে সময়ে মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ঘোর চলছিল। যেমনটা দেখা যায় স্বপ্নে । কিছু কিছু ছেঁড়া ছেঁড়া ঘটনার কোলাজ । অনেকটাই অবাস্তব-পরাবাস্তব মিলিয়েয মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা কিছু উদ্বেগ তিনি চোখের সামনে দেখতে পেতেন। ভেসে আসতো কিছু পরিচিত মানুষের মুখ। মনে হত, তিনি অসুস্থ আর কেউ যেন তাঁকে কোথাও একটা আটকে রেখেছে। তিনি নড়তে পারছেন না। পারছেন না নিজের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। মনে হত, তাঁকে আটকে রেখে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে .... ইত্যাদি ইত্যাদি।  ভিতরে ভিতরে হয়তো ভীষণ অসহায় বোধ করতেন তিনি । তারপর যেদিন প্রথম চোখ মেলে তাকালেন তিনি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তিনি কোথায় ! গলায় লাগানো ছিল ভেন্টিলেটরের নল। কথা বলার উপায় ছিল না। জিজ্ঞাসা করতে পারেননি মুখ ফুটে কিন্তু অদ্ভুতভাবে চোখের ভাষা বুঝে নিয়েছিলেন ডাক্তার সিনহা। জবাব দিয়েছিলেন ' আপনি হাসপাতালে আছেন।' অনেক পরে তিনি বুঝতে পারেন, শুধু তাকে বাঁচাতে যে ডাক্তাররা লড়াই করেছিলেন তা নয়, একটা লড়াই চলছিল তাঁর মনেও। বেঁচে থাকার সংগ্রাম । নব্বইয়ের দশকে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরে অক্লান্ত কাজ করে গেছেন নিতাইদাস বাবু। তাই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে জিতে যাওয়ার চরম জেদটা অবচেতন মনে তাঁকে ছাড়েনি। যদিও তিনি জানতেন না তাঁর করোনা হয়েছে।

নিতাইদাস বাবুর কথায় চোখ খুললেই দেখতেন পিপিই পরা মানুষজন অক্লান্তভাবে তার কষ্ট কমানোর চেষ্টা করছেন। সীমান্তে দাঁড়ানো প্রহরী শত্রু আটকানোর জন্য যেমন অক্লান্ত সংগ্রাম করে। প্রথমদিকে নাড়াতে পারতেন না একটা আঙ্গুলও।  একটা চোখ অর্ধেকটা খুলতে পারতেন। তারপর ধীরে ধীরে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করতে শুরু করলেন। এরই মাঝে আবার ধাক্কা ১০ এপ্রিল রাতে। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় । সারা কলকাতায় একপ্রকার চাউর হয়ে গিয়েছিল 'নিতাইবাবুর অবস্থা ভালো নয়'।  প্রতিবারের মতো সেই লড়াইতেও জিতে গিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ৮ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন নিতাইদাস মুখোপাধ্যায় । প্রায় ৪৩ দিন পর দেখেছিলেন আলোর মুখ। সেই রণক্লান্ত সৈনিকের মুখে শোনা গিয়েছিল একটাই কথা করোনা হেরেছে, মানুষ জিতেছে । 

দিন দশেক যমে-মানুষে লড়াই, তারপর মৃত্যুকে হারিয়ে জীবনে ফেরা

তারপর আরও অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। সুস্থ হতে তার সময় লেগেছে আরও অনেকটা কাল। কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই তিনি জোর গলায় বলতে পারেন আমরা জিতবই, এখনও রাত-বিরেতে মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা থেকে অসহায় মানুষকে খাবার পৌঁছে দিয়ে সাহায্য করা কিংবা রাত তিনটে সাড়ে তিনটেয় ফোন-মারফত কাউকে শিখিয়ে দেওয়া কী করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগাতে হবে। নিতাইদাস মুখোপাধ্যায় তাঁর কাজকে কোনদিন কাজ বলেন না । বলেন মিশন । বলেন বাবার স্বপ্ন। 

দশ বছর বয়স থেকে সমাজসেবার কাজে যুক্ত হন তিনি । কখনও কাজ করেছেন পথবাসী মানুষের জন্য। কখনও ঠিকানা হারানো মানুষকে খুঁজে দিয়েছেন ঠিকানা। তাঁর সংস্থা HIVE INDIA র সকর্মীরা কখনও রাস্তায় পড়ে থাকা দুঃস্থ মানুষকে ভর্তি করেছেন হাসপাতালে । কখনও আবার এইচ এইচআইভি প্রতিরোধে চালিয়েছেন কঠিন লড়াই । বউবাজার বিস্ফোরণের ঘটনা হোক কিংবা ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতাল এ অগ্নিকাণ্ড, বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় পৌঁছে গেছে তাঁর টিম দাঁড়িয়েছে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে।সঙ্গে পেয়েছেন তাঁর টিম-মেম্বারদের। বিরাট কর্মকাণ্ডে সঙ্গে থেকেছে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ এবং আরও কিছু সংগঠনকে। এহেন সমাজযোদ্ধাকেও করোনাভাইরাস ঘায়েল করে দিয়েছিল বেশ কিছুদিন। প্রায় খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছিলেন তিনি। তবুও থামেননি। এখনও দিনরাত চালিয়ে যাচ্ছেন কাজ। এখনও তিনি বিশ্বাস করেন, সবাই মিলে হাতে হাত ধরলেই এই লড়াইতে জয়লাভ মাত্র সময়ের অপেক্ষা। 

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

RG Kar Protest: রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
Roopa Ganguly: জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
RG Kar Protest : এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়, বললেন ডা. কুণাল সরকার
'এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়'
Bashdroni Student Death: ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

UP News: রোগীমৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বেধড়ক মারধর, প্রতিবাদে গণ ইস্তফা ২৫০ চিকিৎসকেরRG Kar News: আন্দোলন চলুক, তবে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হোক, পরামর্শ সিনিয়র ডাক্তারদের | ABP Ananda LIVEHoy Ma Noy Bouma: নতুন সিরিয়ালের সফরের মাঝেই একান্ত আড্ডায় মুখোমুখি হলেন অ্যানমেরি আর সিদ্ধার্থ।Jeet Ganguly: জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে মুক্তি পেল নতুন মিউজিক ভিডিও

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
RG Kar Protest: রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
Roopa Ganguly: জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
RG Kar Protest : এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়, বললেন ডা. কুণাল সরকার
'এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়'
Bashdroni Student Death: ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
Fake SBI Branch: প্রতারণার নয়া নজির, SBI-এর ভুয়ো শাখা খুলল প্রতারকরা
প্রতারণার নয়া নজির, SBI-এর ভুয়ো শাখা খুলল প্রতারকরা
Fruits: খালি পেটে এই ফলগুলি মোটেই খাওয়া চলবে না, সময় থাকতে সতর্ক হোন
খালি পেটে এই ফলগুলি মোটেই খাওয়া চলবে না, সময় থাকতে সতর্ক হোন
Asteroids Collision: আজ পৃথিবীর গা ঘেঁষে ছুটে যাবে দুই গ্রহাণু, প্রথমে বিকেলে, তার পর রাতে, সতর্কবার্তা দিল NASA
আজ পৃথিবীর গা ঘেঁষে ছুটে যাবে দুই গ্রহাণু, প্রথমে বিকেলে, তার পর রাতে, সতর্কবার্তা দিল NASA
Kangana Ranaut: গাঁধী জয়ন্তীতে বিতর্কিত পোস্ট, ফের বিপাকে কঙ্গনা, 'রাজনীতি ওঁর জন্য নয়', বলছে BJP-ই
গাঁধী জয়ন্তীতে বিতর্কিত পোস্ট, ফের বিপাকে কঙ্গনা, 'রাজনীতি ওঁর জন্য নয়', বলছে BJP-ই
Embed widget