Holi 2021: প্রিয় ছিল জলবেলুন, আপত্তি ছিল বাঁদুরে রঙে
মনে পড়ে, শেষ দোল খেলেছিলেন ১২ বছর বয়সে। বাটানগরে থাকতে। তারপর কলকাতা দক্ষিণ, কাজ... শহরে আর দোল খেলার মত বন্ধু খুঁজে পাননি লেখক। রঙের উৎসব বলতে তাই শৈশবের কথাই মনে পড়ে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর।
কলকাতা: মনে পড়ে, শেষ দোল খেলেছিলেন ১২ বছর বয়সে। বাটানগরে থাকতে। তারপর কলকাতা দক্ষিণ, কাজ... শহরে আর দোল খেলার মত বন্ধু খুঁজে পাননি লেখক। রঙের উৎসব বলতে তাই শৈশবের কথাই মনে পড়ে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর।
বাটানগরের ভাড়ার বাড়িতে একসঙ্গে ৪ ভাইবোন থাকতেন। খোলা সেই বাড়ির সদর দরজার কোল্যাপসিবল গেটটাই ছিল প্রথম রঙ খেলার চৌহদ্দি। স্মরণজিৎ বলছেন, ‘সারা বছর ওই গেটটায় আমরা ভাইবোনরা ঝুলে ঝুলে কন্ডাকটর খেলতাম। আর দোলের দিন পিচকিরি আর বেলুনে রং ভরে ওই গেটে দাঁড়াতাম। সামনে দিয়ে যে যেত, তার রক্ষে ছিল না। রং আমরা দেবই। একবার এক ভদ্রলোকের নতুন স্কুটারে রং দিয়ে দিয়েছিলাম। তিনি তো রেগে আগুন। বাড়িতে এসেছিলেন ঝগড়া করতে। সবাই যখন আমাদের বকছে, তখন ন’কাকা আমাদের বাঁচিয়েছিলেন। বেশ রেগে ওই ভদ্রলোককে বলেছিলেন, ‘আপনার অসুবিধা হলে আজকের দিনে নতুন স্কুটার নিয়ে বেরোবেন না। আজ তো রঙেরই দিন।‘
ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের। কোথাও অশান্তি হলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই চলতেন। তবে দোল নাকি অনেকের কাছে রাগ মেটানোর দিনও ছিল! কী করে? স্মরনজিৎ বলছেন, ‘আমাদের বাটানগরে কোয়ার্টার চত্বরে একটা ম্যানহোল ছিল। দোলের দিন যাদের ওপর রাগ থাকত, ওই ম্যানহোল দিয়ে নর্দমার জল তুলে নিয়ে গায়ে ঢেলে দেওয়া হত। আর খুব বেশি রাগ হলে এক্কেবারে চুবিয়ে দেওয়া হত ম্যানহোলে। আরও একটা অস্ত্র ছিল অবশ্য.. জুতোর কালি। বাটার জুতো কোম্পানি থেকে লুকিয়ে কালি চুরি করে আনত অনেকে। তারপর সেই কালি রঙের সঙ্গে মিশিয়ে মাখিয়ে দেওয়া হত। ব্যাস.. চামড়া উঠে গেলেও সেই কালি উঠত না।‘
ইংরাজি মাধ্য়মের স্কুলে পড়াশোনা করেছেন লেখক। সেখানকার নিয়ম ছিল, দোলের পরের দিন হাতে রঙ থাকা যাবে না। দোল খেলার পর সেটাই ছিল প্রধান ভয়। রঙ তুলতে গিয়ে নাকি হাত-পা ছড়ে গিয়েছে অনেকবার। আর রঙ খেলার স্মৃতি? লেখক বললেন, ‘আমার সবচেয়ে ভালো লাগত জলবেলুন। ছুড়ে মারতাম। তবে অনেকসময় তাতে ঠিক করে রঙ ভরা না হলেই মুশকিল। ফাটত না। তখন যাকে ছুড়তাম, পাল্টা সেই আবার তুলে আমায় ছুড়ে মারত। স্কুলের ভয়ে বাঁদুরে রঙ মাখতাম না কোনওদিন। আর ছোটবেলায় এত বেঁটে ছিলাম, কারও মুখ, মাথা অবধি হাত পৌঁছত না আমার। বরং অন্যরাই আমায় পুঁটলি করে ধরে রং মাখিয়ে দিত। বাড়ির সামনে ইট পাতা রাস্তা ছিল। সেটা দিয়ে বড়জোর ৫০ মিটার যেতাম। আর ছাদ থেকে জলবেলুন ছুড়তাম। তবে তার বেশিরভাগটাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হত। অর্জুন তো আর নই..’ হেসে ফেললেন তিনি। তারপর যোগ করলেন, ‘পাড়ায় একটা ছেলে ছিল। তার গায়ে রং দিলেই সে বাড়ির লোকজন নিয়ে ঝগড়া করতে আসত। আমি ভয়ে তাকে কখনও রঙ দিতাম না। কিন্তু যদি রাস্তায় কাউকে দেখতাম, রং নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভয়ে কাউকে দিতে পারছে না, তার কাছে গিয়ে বলতাম, দে আমায় একটু রঙ দিয়ে দে।‘
দোলের দিনের সন্ধের ছবিটা আবার ছিল অন্যরকম। লেখক বলছেন, ‘কাকাদের একটা ক্লাব ছিল। অরুণাচল সঙ্ঘ। সেখান থেকে হারমোনিয়াম, খোল, করতাল নিয়ে গান করতে বেরনো হত। সেসময় এত গিটারের চল ছিল না। একমুঠো সেই শহরটায় সবাই সবাইকে চিনত। গান করতে করতে শহরের অনেক রাস্তায় ঘুরে বেড়াত সেই দলটা। আর সঙ্গে থাকত লাড্ডু। কেউ আবির দিলে তাকে মিষ্টিমুখ করানো হত।‘
বড় শহর কলকাতায় হারিয়ে গিয়েছে শৈশবের সেই অনর্থক ছোট ছোট ভয় আর স্মরণজিতের দোল খেলার বন্ধুরা। দোল এখন কেবল একরাশ রঙিন স্মৃতি। লেখকের কথায়, ‘সবার সমস্ত সাহসী রঙ খেলার মধ্যে আমার সেই ভীতু দোল চিরকাল মনে থাকবে।‘