(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Women's Diet And Nutrition : ঘরে-বাইরে ঝক্কি সামলাতে 'অবহেলিত' মেয়েদের স্বাস্থ্য, কোন মন্ত্রে থাকা যায় সুপারফিট?
Women's Health : নানা পর্যায়ে নানারকম শারীরবৃত্তীয় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মেয়েরা। আর সেগুলি কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় পুষ্টি।
কলকাতা : কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকারের দাবিতে আন্দোলন চলেছে, চলবেও। সামাজিক অধিকার নিয়েও সাম্যের দাবি নিয়ে মহিলারা সরব হয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলারা সামাজিক,অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলেন, আলোচনা করেন, অধিকারলাভের উদযাপন করেন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে , সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার অনেকটা অর্জন করা গেলেও, কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা নিজেরা অনেকটা উদাসীন। যেমন নিজেদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে । অনেক চিকিৎসকরাই মনে করেন, ভারতীয় মেয়েরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে এখনও ততটা সচেতন নন। পরিবারের সকলের কথা ভেবে, ঘরে-বাইরে কাজ সামলে নিজেদের ডায়েট ও স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখার সুযোগ খুবই কম হয়। এমনকী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ( WHO ) মনে করে, কিছু আর্থ সামাজিক কারণে স্বাস্থ্য নিয়ে বড়ই উদাসীন মেয়েরা।
তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ গুলি হল -
- মহিলা ও পুরুষদের সম্পর্কে ক্ষমতার সমীকরণে অসমতা আছে।
- এখনও সমাজে বহু মহিলারা পর্যাপ্ত শিক্ষা পান না কিংবা তাদের কাজের জন্য অর্থ পান না।
- মেয়েদের এখনও বহুক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার মেশিন ভাবা হয়।
- নানা ক্ষেত্রে মেয়েরা এখনও শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার।
- অর্থের অভাব যদিও নারী ও পুরুষ উভয়েরই স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে, তবুও অনুপাতে মেয়েদের ক্ষতিই বেশি। কারণ, তাঁদের সন্তানদের স্তনদান করতে হয়, তাই পুষ্টি যতটা পায়, তার থেকে খরচ বেড়ে যায়। এছাড়া অসুরক্ষিত রান্নার পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য সিওপিডির মতো অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
( সূত্র : https://www.who.int )
পুষ্টিবিদ ড. অনন্যা ভৌমিক জানালেন, এইরকম বেশ কিছু কারণেই পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে মেয়েরা বঞ্চিত থেকে যায়। অথচ জন্মের পর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে মেয়েদের পুষ্টির দিকে আলাদা করে খেয়াল রাখা দরকার। কারণ, একটি মেয়ের শরীরকে নানা শারীরবৃত্তীয় অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যেমন ঋতুস্রাব, সন্তানধারণ, সন্তানের জন্ম দেওয়া, স্তনদান, মেনোপজ ইত্যাদি। এছাড়াও একটি মেয়েকেই মূলত ঘরে ও বাইরে সমান চাপ নিয়ে কাজ সামলাতে হয়। তাই তাদের ডায়েটের উপর নজর দেওয়া বিশেষ জরুরি।
বয়ঃসন্ধি
বয়ঃসন্ধি থেকেই মেয়েদের ডায়েটের দিকে আলাদা করে নজর দেওয়া দরকার। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পরই নজর রাখতে হবে আয়রনের ঘাটতি হচ্ছে কি না শরীরে, তার দিকে। কারণ এই সময় শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায়। কারও কারও আবার স্রাব চলে বেশিদিন ধরে। তাই শরীরে প্রয়োজনীয় আয়রন ধরে রাখতে দরকারে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা খুবই দরকার। এবার বয়স ১৮ পেরলে নজর রাখতে হবে, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যথেষ্ট পরিমানে খাওয়া হচ্ছে কি না। কারণ ভিটামিন সি আয়রন শরীরের কাজে লাগাতে সাহায্য করে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অবশ্যই খেতে পারেন, কুমরোর বীজ, নানা রকমের ডাল, সবুজ শাক, নানারকমের বাদাম, চিকেন ইত্যাদি। তবে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে চা-কফি খেলে আবার আয়রনটা শরীরের কাজে লাগে না। বদলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান । যেমন লেবু, সেবুর জল, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি।
সন্তানধারণ
সন্তান ধারণ করার আগে শরীরটাকে তৈরি করা দরকার। অপুষ্টিতে ভোগা শরীর সন্তানধারণে নানারকম জটিলতা আনতে পারে। পুষ্টিবিদ ড. অনন্যা ভৌমিকের মতে প্রেগন্যান্সির আগে থেকেই সুষম খাবার খেয়ে শরীরটাকে তৈরি করতে হবে। তাতে সন্তানের স্বাস্থ্য ও গর্ভধারিনীর স্বাস্থ্য উভয়ই সুরক্ষিত থাকে। এই সময় ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খাওয়া খুব দরকার। এছাড়া বিভিন্ন শাক, যেমন, পালং শাক, পুঁইশাক, পাট শাক, কচু শাক, মেথি শাক, সজনে পাতা, লাল শাক, নটে শাক, সবুজ ডাঁটা শাক খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া মটরশুঁটি, ঢ্যাঁড়স, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকলি, ছোলার ডাল ও নানারকম ফলে ফোলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। প্রেগন্যান্ট মহিলাদের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অতি প্রয়োজন। সন্তান জন্মের দিন এগিয়ে এলে বারেবারে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়া এসময় শরীরের দরকার ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া খেয়াল রাখতে হবে, শরীরে অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। যেমন ডায়াবেটিসের সমস্যা হচ্ছে কি না, উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে কি না।
স্তনদান
স্তনদানের পর্যায়টি মেয়েদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় ডায়েটের দিকে বিশেষ নজর দিতেই হবে। মানসিক ভাবেও এই সময়টা মেয়েদের জন্য চ্যালেঞ্জে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই মায়েদের মধ্যে কারও কারও ডিপ্রেশন লক্ষিত হয়। তাই এই সময় ভাল খাবার-দাবার তো বটেই পাশাপাশি প্রয়োজন একটু সহমর্মিতা। সন্তান জন্মের পর প্রথম ৬ মাস, তাকে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংই করাতে হয়। তাই এই মায়েদের দরকার ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার। সেই সঙ্গে ৩ থেকে ৪ লিটার জল দরকার। দুধ খাওয়ারও প্রয়োজনীয়তা আছে। নতুন মায়েদের খুবই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বিশেষ জরুরি। যা পাওয়া যেতে পারে বিভিন্ন রকম বাদাম থেকে। অনেকেই মনে করেন, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বলতে আমিষ খাবারকেই বোঝায়। তা কিন্তু নয়। প্রোটিন পাওয়া যেতে পারে বিভিন্নরকম ডাল, বাদাম, দানা শস্য থেকে। সয়াবিন, মিক্স ডাল, দুধ, দই, ছানা ইত্যাদি থেকে যথেষ্ট প্রোটিন পাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, স্তনদায়ী মায়েদের সাধারণ সময়ের থেকে অনেকটা বেশি পরিমাণ খাবার খেতে হবে।
মেনোপজ
মেনোপজ নিয়ে কথা কমই বলা হয়। এই পর্যায়টা সবার জীবনে আসবেই। আর এই পর্বটা খুব গুরুত্বপূর্ণও মেয়েদের জন্য। কারণ শরীর এই সময় নানা হরমোনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। সেই সঙ্গে নানা মানসিক উত্থান-পতনও আসে। অথচ এই পর্যায়টিকে যে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, সেই চেতনা এখনও অনেকেরই আসেনি। মেনোপজের সময়ে মেয়েদের একজন পুষ্টিবিদ ও মনোবিদের সাহায্য প্রয়োজন হয়। পুরুষদেরও এই সময় পরিবারের মেয়েদের পাশে থাকা দরকার। পুষ্টির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলেও এই সময় শরীরের চাহিদা আলাদা হয়। তাই ডায়েটচার্ট আলাদা করে তৈরি করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
এই ভাবে নানা পর্যায়ে নানারকম শারীরবৃত্তীয় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মেয়েরা। আর সেগুলি কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় পুষ্টি। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ, পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও অন্যান্য দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে মেয়েরা যেন এই বিষয়গুলি ভুলে না যান।
আরও পড়ুন :
বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ, পুরোপুরি সারেও না, জেনে নিন COPD নিয়েই দীর্ঘায়ু হওয়ার উপায়
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )