Autism Awareness: বাচ্চা অটিস্টিক কেন হয়? অটিজম-মুক্ত হওয়া যায়? স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনাই বা কতটা?
World Autism Awareness Day : আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে কোথায় যেন সে আলাদা। নিজের মনের কথা হয়ত সে বোঝাতে পারছে না। মা, বাবাকে ডাকছে না। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় তার যেন আগ্রহই নেই।

ছোট্ট বুবান। খেলে ছুটে বেড়ায় সর্বক্ষণ। নিজের জগতে সে ভীষণই খুশি। কিন্তু লোকে বলে সে একটু বেশিই দুষ্টু। কখন যে ছুটে জলে হাত দিয়ে দেয়, কখন পাখার মধ্যে হাত গলিয়ে দেয়, কখন সিঁড়ি থেকে ঝাঁপ দেয় বোঝা মুশকিল। কিন্তু আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে কোথায় যেন সে আলাদা। নিজের মনের কথা হয়ত সে বোঝাতে পারছে না। মা, বাবা, দাদু , দিদাকে ডাকছে না। স্কুলে পাঠিয়েও কথা বলা বা বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় তার যেন আগ্রহই নেই। তাই সমবয়সীদের মধ্যে সে জায়গা করে নিতে পারে না। চিকিৎসকের সাহায্য চাইতে বুবানের মা-বাবা জানতে পারলেন, ছেলে অটিস্টিক !
অটিজম কী, সারে ?
অটিজম। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তেমন ভাবে পরিচিত ছিল না এই শব্দটা অনেকের কাছেই। কিন্তু এখন অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার নিয়ে বহু আলোচনা হয়। অনেকের কাছেই এটি পরিচিত পরিস্থিতি। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছরই অটিজমের হার বাড়ছে। ভারতে পাওয়া সর্বশেষ হিসেব বলছে, ৬৮ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অটিস্টিক। আর প্রতি ১০ জন অটিস্টিকের মধ্যে ছেলের সংখ্যাই বেশি। বহু আলোচনা, গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু অটিজম সারছে না কেন? চিকিৎসক অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় (সহ-অধ্যাপিকা, ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস ) অটিজমের কারণই তো জানা যায়নি। আর এই কারণটা জানা যায় না বলেই, অটিজম আটকানোও যায় না, পুরোপুরি এই অবস্থা থেকে বেরনোও যায় না। যেটা সম্ভব, তা হল অবস্থাটা নির্ণয় করে থেরাপি শুরু করা ও অটিজমকে সঙ্গী করেই ভাল জীবন যাপনের প্রচেষ্টা করার। সেই প্রচেষ্টাই প্রতিবছর World Autism Awareness Day- পালনের লক্ষ্য।
অটিজমের সঙ্গে বুদ্ধির সম্পর্ক?
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ যশোধরা চৌধুরীর মতে, অটিজমের সঙ্গে বুদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। একজন অটিস্টিক মানুষের বুদ্ধি প্রখর হতেই পারে। আই কিউ যেমনই হোক না কেন কিন্তু সমস্যাটা সোশ্যাল কমিউনিকেশনের। তারা নিজেদের প্রকাশ করতে পারে না। অটিজম নিয়ে যখন গবেষণা শুরু হয়, তখন গবেষকরা অ্যাপিয়ারেন্স রিয়ালিটি ডিস্টিঙ্কশন নামে একটি সমীক্ষা করেন। একটি আপেলের মতো দেখতে মোমবাতি দেওয়া হয় ৪ বছরের বাচ্চাদেরকে। দেখা গেল, যে বাচ্চাটি অটিস্টিক সে হয়ত আপেল-মোমবাতিকে আপেলই বলল। কিন্তু যার অটিজম নেই, সে সেটিকে মোমবাতি বলে চিনতে পারল। এখানে একটা দেখা বা বোঝার পার্থক্য লক্ষ্য করলেন গবেষকরা। জানালেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ যশোধরা চৌধুরী।
অটিজমে থাকা প্রতিটি মানুষই একে অপরের থেকে আলাদা
তবে ডা. অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, কোনও কোনও অটিস্টিক বাচ্চা হয়ত, একটি বিষয় অনেক গভীরে গিয়ে দেখে। হয়ত সে একটা পাখার দিকে তাকিয়ে আছে। সে কিন্তু শুধু হাওয়া খাচ্ছে না, তারই হয়ত চোখে পড়বে পাখার একটি ব্লেড বাঁকা। সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সে হয়ত সেই জায়গা থেকে নড়বেই না। এই সব উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট অটিজম থাকা প্রতিটি মানুষই একে অপরের থেকে আলাদা। তাদের ভাবনা , চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি বা সমস্যা সবটাই আলাদা , আলাদা।
অটিজমের কারণ কী
অটিজমের কারণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেউ বলেন এর কারণ জিনগত। জিনগত মিউটেশনের ফলেই অটিজম আসে। কেউ পরিবেশ গত কারণের কথা বলেন। কেউ বলেন, অন্ত্রের সমস্যা, কিছু ব্যাকটেরিয়ার থাবা বিস্তারের ফলে এটি হয়। তবে এগুলোর সপক্ষে নিশ্চিত যুক্তি সামনে রাখতে পারেনি কেউই। তাই অটিজমের কারণ অজানা।
অটিস্টিকদের আগামী
অটিস্টিক মানুষ নিজের ভাবপ্রকাশের সমস্যায় পড়েন। আবার অন্যের মনের ভাবও বুঝতে পারেন না অনেক সময়। অনেক অটিস্টিক বাচ্চা মৃগির সমস্যায় ভোগে। সেক্ষেত্রে বুদ্ধিগত বিকাশে বাধা আসতে পারে। তাই অটিজম থাকলে এপিলেপ্সি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া অটিস্টিকরা কোনও কোনও ক্ষেত্রে একই ধরনের কাজ বারবার করে। যেমন বারবার মাথা নাড়ানো, চোট পিটপিট করা, মাথা চাপড়ানো ইত্যাদি। আবার অনেক অটিস্টিক ছেলে-মেয়ে বয়োঃসন্ধিতে মাইগ্রেনে ভোগেন। হয়ত ভাষাগত সমস্যা থাকার কারণে তারা বিষয়টি বোঝাতে পারেনা, কিন্তু কষ্টে ভোগে। এছাড়াও অটিস্টিক বাচ্চাদের আরও কতকগুলি স্নায়ুর সমস্যা থাকে। যেগুলো ব্যক্তিবিশেষে আলাদা। তাই প্রতিটি মানুষকে কাছ থেকে দেখে, তাদের সমস্যাগুলো চেনা খুবই প্রয়োজন। আর তাকে সেভাবে সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন।
ডা. অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অটিজমের সংখ্যা। তাই সমাজকে বুঝতে হবে, অটিজম কোনও অসুখ নয়, ডিজঅর্ডার। অটিস্টিক বাচ্চাদের অনেক অসুবিধে আছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের মধ্যে ইতিবাচক দিকও বহু। তাই এদের ভবিষ্যৎ কী হবে, এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়লে চলবে না। হাতটা শক্ত করে ধরতে হবে, এদের এগিয়ে দিতে হবে। হয়ত এরা একা জীবনযাপন করতে পারবে না, কারও সাহায্য লাগবে, কিন্তু সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে এদের জার্নিটা থেমে যাবে না। Pediatric Neurodevelopmental Specialist অসীমায়ন নন্দী জানাচ্ছেন, ঠিক সময়ে অটিজম নির্ধারণ হওয়া দরকার। আর প্রতিটি বাচ্চার সমস্যা গুলো যেহেতু আলাদা , আলাদা, তাই কার কী থেরাপি প্রয়োজন তা বুঝে নিয়ে শুরু করা দরকার। আর শুধু থেরাপি সেন্টারে গিয়ে থেরাপি নিলেই হবে না, ওই অ্যাক্টিভিটিগুলি বাচ্চাকে দিয়ে অভ্যেস করাতে হবে সপ্তাহে অনন্ত ২৫ ঘণ্টা। তাহলে অনেকটাই ভাল থাকার পথে এগোনো যেতে পারে।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )























