Year Ender 2022 Health : মাঙ্কি পক্স থেকে ম্যালেরিয়া, হাম থেকে ডেঙ্গি, ২০২২-এ যেসব যুদ্ধ জয় করেছে মানুষ
Year Ender 2022 Health : বেশ কিছু রোগ এই ২০২২ এ দেশকে নাজেহাল করে রেখেছিল। এক এক করে দেখে নেওয়া যাক।
কলকাতা : কোভিড মহামারী গত দু বছর ধরে অনেকটাই অন্যান্য রোগের থেকে অনেকটাই চোখ সরিয়ে দিয়েছিল। অনেক রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে। অনেক রোগের ভ্যাকসিন পড়েনি নিয়মিত। অনেক গবেষণা ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু রোগ তো যায় না। ফের বেশ কয়েকটি রোগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
একইভাবে, গত দুই বছরে, বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের জন্য অন্যান্য রোগের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করেছে, বিশেষ করে যেগুলি শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে 2021 সালে সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার ঘটনা খুব কম হওয়ার পিছনে কারণ ছিল মাস্ক ব্যবহার।
বেশ কিছু রোগ এই ২০২২ এ দেশকে নাজেহাল করে রেখেছিল। এক এক করে দেখে নেওয়া যাক।
মাঙ্কিপক্স
২০২২ সালে দক্ষিণআফ্রিকার বাইরে এই ভাইরাল রোগের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশ্বব্যাপী ৮০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ এর দ্বারা সংক্রমিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্সকে একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা বলে ঘোষণা করে। মাঙ্কিপক্স এক ধরনের পক্স। এটি গুটিবসন্ত ধরনের রোগ , বর্তমানে নির্মূল করা যায়।
জুলাই মাসে বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনার পর সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যভিত্তিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভারতেও প্রবেশ করে মাঙ্কি পক্স (Monkeypox)। করোনা অতিমারির মধ্যে বিশ্বজুড়েই ত্রাস সৃষ্টি করে এই ভাইরাস। এখনও পর্যন্ত ভারতে ২৩ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
হাম
২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হাম আক্রান্ত হতে শুরু করে বহু শিশু। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে হামের প্রায় সাড়ে ১০ হাজারেরও বেশি কেস পাওয়া গিয়েছে। এতে 40 জন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মহারাষ্ট্রে এবং ঝাড়খন্ডে অনেকেই হাম আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এমনকি ডব্লিউএইচও আকস্মিক হামের প্রাদুর্ভাবের মূল কারণ হিসেবে "টিকাদানের অভাব"কে চিহ্নিত করেছে।
এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর কেন্দ্র। ২০২৩-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০ শতাংশ ভ্যাকসিনেসন করতে হবে। তৈরি করতে হবে টাস্কফোর্স। রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তৎপর কলকাতা পুরসভাও।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সংস্থা ও মার্কিন সংস্থা Centers for Disease Control and Prevention বা CDC-র তরফে দাবি করা হয়েছে, গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ কোটি শিশু ভ্যাকসিনেশনেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
সোয়াইন ফ্লু
গত দুই বছরে ফ্লু ভ্যাকসিনেশনে বিলম্বের কারণে ভারতে সোয়াইন ফ্লুতেও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। এই বছর সাড়ে ১১ হাজার মানুষ সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে, যা আগের বছরের থেকে ১৫ গুণ বেশি।
তথ্য অনুসারে, অক্টোবর পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লুতে ৩০০ জনেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে। ২০২১ সালে, ভারতে মাত্র ১২ জন মারা গিয়েছিল এই রোগে।
চিকিত্সকদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সবথেকে জটিল বিষয় ছিল যে, কোভিড এবং সোয়াইন ফ্লু উভয়েরই সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি একইরকম। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, সর্দি বা নাক বন্ধ, শরীরে ব্যথা। তাই প্রায়শই প্রাথমিক পর্যায়ে এটিকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই সমস্যা গুরুতর হয়েছে।
টমেটো ফ্লু
এই বছর সমস্যায় ফেলেছিল টমেটো ফ্লু-ও। তাছাড়া অনেককে ভুগিয়েছে হ্যান্ড ফুট ও মাউথ ইনফেকশন (HFMD)। এই বছর কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অসম এবং ওড়িশায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে টমেটো ফ্লুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
যদিও টমেটো জ্বর কোভিড-১৯-এর মতো উপসর্গ দেখা যায়, ভাইরাল রোগটি প্রাণঘাতী নয়। এটিকে বলা হয় কারণ এই রোগটি সারা শরীরে ফুসকুড়ি বা ফোসকা সৃষ্টি করে যা ধীরে ধীরে টমেটোর আকারে বড় হয়।
Coxsackievirus A16 দ্বারা সৃষ্ট, অত্যন্ত সংক্রামক, রোগটি নাক, গলা এবং ফোসকা থেকে তরল নিঃসরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে টমেটো ফ্লুর চিকিত্সার জন্য কোনও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন বের হয়নি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে যে প্রতিরোধের সর্বোত্তম সমাধান হল সঠিক স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটাইজেশন রক্ষণাবেক্ষণ।
ডেঙ্গি
বর্ষা শেষ, উৎসবের মরসুম শুরু মানেই ডেঙ্গির চোখ রাঙানি। রাজ্যে উদ্বেগজনক ডেঙ্গি পরিস্থিতি ছিল নভেম্বর অবধি । কোথাও সচেতনতার ছবি দেখা গেলেও এডিস মশাবাহিত রোগ থেকে নিস্তার পায়নি মানুষ। কোথাও অপরিচ্ছন্নতার জন্য সাধারণ মানুষের কোর্টেই বল ঠেলছে প্রশাসন। ভয়ঙ্কর ডেঙ্গি পরিস্থিতি। নবান্নে সমস্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব, নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। তবে বাংলার জেলায় জেলায় দমানো যায়নি এই মশাবাহিত রোগের দাপট। হয়েছে পরপর ডেঙ্গি মৃত্যুও।
ম্যালেরিয়া
এক ডেঙ্গিতে রক্ষে নেই, ম্যালেরিয়া ছিল দোসর। রাজ্যে ডেঙ্গির দাপটের মধ্যেই ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত হয়। অনেকক্ষেত্রে আবার একই সঙ্গে হয়েছে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া! রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, শেষ দু’মাসে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। গত জুলাই ও অগাস্ট মাসে রাজ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৭৪৪ জন।
কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জানয়ারি থেকে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮১২। যা দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯০২। মৃত্যু হয়েছে একজনের।
এনসেফ্যালাইটিস
করোনার মধ্যেই রাজ্যে মশাবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত। ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তের নিরিখে দেশে ৩ নম্বরে রয়েছে বাংলা। মৃত্যুর নিরিখে রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
বর্ষশেষে আবার প্রতিবেশী দেশে চোখ রাঙাচ্ছে কোভিড। আশা, সব রোগের দাপটকে প্রতিহত করে মানুষের জয় হবেই।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )